সঞ্চিতা সান্যাল

 


  • "আন- মানুষ" : ঠিকানাহীন গন্তব্যের খোঁজ!
  • প্রকাশক: তবুও প্রয়াস

 

একটি প্রতর্ক ইদানিং কানে আসে, লুৎফর রহমানের কথাবিশ্বেসময়খুব প্রখর ভাবে উপস্থিত কথাটি অসত্য নয় কাল বা সময়কে তিনি বিশেষভাবে নির্মাণ করেন সে কথা অন্য এক প্রবন্ধে আলোচনা করেছি তবে এই প্রবন্ধে বলার চেষ্টা থাকবে পাঠক হিসেবেআন মানুষপড়তে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা লুৎফর রহমান কি বললেন, তাকে ছাপিয়ে যে কথা বড় হয় এই পাঠে, তা হলো, তিনি কি বলতে চাইলেন!

একটি গুরুতর সমস্যা দিয়ে পাঠ শুরু হয়, যার স্বরটি ধরা আছে এই গ্রন্থেরপথ মানুষ পথের মানুষগল্পে

 “…তেরো ডজন ডিম এনেছিল, বিক্রি হয় নি সব বউটা বারো টাকার নীচে মাল ছাড়বে না বিল চরা হাঁসের ডিম সবজিরোন হাঁসের ডিম কেন নড়ন হাঁসের ডিমের চেয়ে পৃথক, কেন খেতে সুস্বাদু এইসব 

লোকটা লেখাপড়া জানা, সে বিল আর বিলের হাঁস বোঝে, জিরোন নড়ন বোঝে না...”

 সমস্যার শুরু ঠিক এখান থেকেই  আমরা অনেকেই তো "জিরোন নড়ন" না চেনা বিশ্বের মানুষ, তবেআন মানুষেরপাঠক হয়ে ওঠা কতটা সম্ভব হবে, এই ভাবনাটা মাথায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে কদিন তবুও একটা পাঠ, যা আমার নিজের,তাতো হয়েই সেই অভিজ্ঞতার স্বাদটুকু পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েই এই লেখা 

প্রথমেই যা মনে হয়, লুৎফর রহমানের লেখা আটপৌড়ে ভীষণ ঘরোয়া তবে নিরাসক্ত সমাহিত বোধে জারিত  মনে হয়, তিনি জীবনকে দেখেন জীবনের ঠিক বিপরীত যে মরণ, তার খুব কাছে দাঁড়িয়ে যে বিষয়টি আমাদের বিস্মিত করে, তা হলো, তাঁর মানুষ বিষয়ে ভাবনা আন-মানুষেরা কদর্য বিভৎস এক মরণকে কাছ থেকে দেখে, অবশ্যম্ভাবী, জেনেও, জীবন সম্পর্কে  প্রত্যয়ী এই সব স্পর্ধায়ভরা জীবনের কথা বলতে চেয়েই কি লুৎফর আন-মানুষ লেখেন? 

 পশ্চিমী আলোকায়ণ আমাদের সম্ভবনাময় বাঁচাগুলোকে একযোগে নস্যাত করে দিতে পেরেছিলো আমাদের সাংস্কৃতিক সত্তার এমন অভাবনীয় পরিবর্তন অতীতে আর কখনোই হয় নি, যেমনটা হয়েছিলো বৃটিশের হাত ধরে শিক্ষিত ভারতসীর মধ্যে এই পরিবর্তনের ঢেউ বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে সভ্যতার ভিতকে ভিতর থেকে ক্ষয়েই শুধু দেয় নি, এক মীমাংশাহীন অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিলো সমাজে, রাষ্ট্রে, সংস্কৃতিতে ক্ষমতা সম্পর্কে  ভারতীয় ভাষ্যটির আমুল পরিবর্তন ছিলো ঐসব পশ্চিমী সংস্কারের মধ্যে অন্যতম  ক্ষমতার ভারতীয় ভাষ্যে,  ব্যক্তি অথবা সমষ্টি কেউই অধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নি ব্যক্তি অনেকসময়  ক্ষমতাবান হলেও ( যেমন, রাজা অথবা কৌম প্রধান), সে গোষ্ঠীকে অসম্মানিতও করে নি ব্যক্তি সমষ্ঠির মধ্যে একধরনের ভালোমন্দের বোঝাপড়া ছিলো তাদের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা ছিলো না সেইকারনেই হয়তোবা, ব্যক্তির স্বভাবে ছিলো এক অঋজু গতিসে যেতে চেয়েছে, গোষ্ঠীকে ছাপিয়ে, সমষ্ঠীকে ছাপিয়ে অবিরাম ভাবে কোনো এক সম্ভবনার দিকে কৌমপ্রধান সমাজেও ব্যক্তির নিজস্ব সম্ভবনা কখনও নষ্ট হয় নি এমন সব যাত্রায় তার ভ্রান্তি হলে, সংশোধিতও হতে পারতো কারণ, ব্যক্তি সমষ্ঠী একে অপরকেঅপরভাবে নি কখনো জনতার মধ্যে থেকে কেউ একজন উঠে বলবে, অধিনেতার দিকে আঙুল তুলে, তুমি আমাদের প্রবঞ্চনা করেছ; এরমধ্যে অস্বাভাবিকতা ছিলো না

এই ভাষ্যই বদল হলো পশ্চিমের হাতে উপনিবেশিক শক্তি ভারতীয় সত্তার সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ভাষ্যকে নিজেদের ছাঁচে সাজাতে চেয়ে ব্যক্তিকে সমাজ থেকে এবং  সমাজকে ব্যক্তি থেকে  বিচ্ছিন্ন করেছে প্রাক উপনিবেশিক ভারতে ক্ষমতার যে মর্যাদাপূর্ণ রূপ ছিলো, তাকে নস্যাৎ করে দিয়েছিলো এক লহমায় ঔপনিবেশিক কাঠামো পূর্বে ক্ষমতা ব্যক্তিকে অথবা সমাজকে সীমার পাঠ দিতো সংযমের নামে

 ঔপনিবেশিক ভাষ্যে ক্ষমতা প্রথমেই ব্যক্তির হাতে বন্দী হলো সংযমের ধারণায় শ্রদ্ধা না থাকায়,  ক্ষমতা, বৈধতাহীন হলো ক্ষমতার দেশজরূপ হারিয়ে গেলো একধরনের ফ্যাসিস্ট ভাষ্য আরোপিত হলো ক্ষমতার বয়ানে   সেই থেকেই ভারতীয় সমাজ সংস্থানে সংগঠিত স্বৈরতান্ত্রের চলটি আড়ে বহরে বড় হলো সামাজিক সম্পর্কগুলি ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং অনেকটাই পিতৃতান্ত্রিক প্রবণতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকলো

এর ফল ছিলো মারাত্মক সামাজিক সংহতির নামে কৌমব্যবস্থার মধ্যেই এক ধরনের স্বৈরাচারী সংস্কৃতি খুব প্রবলভাবে উপস্থিত থেকে ব্যক্তিকে  ক্রমাগত অনুকণার মতো ছোটো এবং একা নিঃসঙ্গ করে তোলার যাবতীয় আয়োজনে খামতি রাখা হলো না  এই সংগঠিত সমাজের বিপ্রতীপে তখন একলা ব্যক্তি অসহায়, স্বাভাবিক নিয়মেই সামাজিক সিদ্ধান্তগুলি অনেকসময় রাজনীতির কারখানায় ঢালাই হতে শুরু করে, অথবা রাজনীতিই দায়ি থাকে সকল সামাজিক শর্তগুলিকে নিজের স্বার্থে নির্মাণ করতে 

এই কাঠামোর মধ্যে থেকে মানুষের হাতে মাত্র দুটিই বিকল্প  অবশিষ্ট থাকে আর এক, হয় সে সমাজের বশ্যতা স্বীকার করে নেবে, নাহয় নিস্পৃহ থেকে প্রত্যাখান করবে এই সমাজভার লুৎফর  প্রান্তিক অন্ত্যজ শ্রেনীর মানুষের কথা লিখতে গিয়ে তাদের মধ্যে এই প্রত্যাখ্যানের বহুমাত্রিক স্পর্ধা দেখতে পান লেখেন তাদের সেইসব স্পর্ধাময় বেঁচে থাকার কথা

 যাবতীয় উদ্বেগ নিরাপত্তাহীনতা থেকেই সমাজ সকল সৈরতান্ত্রিক প্রবণতাগুলিকে নিজের দেহে লালন করে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সংগঠিত আগ্রাসন মূল প্রবাহের বাইরে অবস্থানরত কোনো নিরিহ ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক যৌথ পরোয়ানা ঘোষিত হয়ে যায় তার অজান্তে একটা অরাজনৈতিক ঘটনাও তখন ভীষণভাবে রাজনৈতিক হয়ে ওঠে লুৎফর রহমানের "আন মানুষ"- বর্ণিত আখ্যানগুলিকে এই সংগঠিত সামাজিক রাজনৈতিক শক্তির বিপ্রতীপে ব্যাক্তির, যিনি সত্তায় ভীষণ ভাবে একক, লড়াই হিসেবে পাঠ করা যেতে পারে "আন মানুষ" পড়তে পড়তে মনে হয়, লেখক এক অসাধারণ দক্ষতায় মানুষকে তার নিজস্ব সত্তায়, এবং অবশ্যই তার নিজের অবস্থানের প্রেক্ষিতে, যাকে তিনি শিক্ষাভিমানী চোখে নয়, বরং বুঝতে চেয়েছেন সনাতনী বোধে মানুষের মানুষ হয়ে বাঁচার পীড়া কিভাবে যেকোনো সামাজিক যূথবদ্ধতার সামনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে, বিমূঢ় হয়ে পড়ে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ লুৎফর করেন এই গল্প গ্রন্থের পাঁচটি গল্পে

 প্রশ্ন হলো,  এইসব অন্ত্যজ হতভম্ব মানুষ, যাদের কথা লুৎফর লেখেন, তারা কি আত্মবলিদান দেয় এই সংগঠিত সামাজিক সংহতির সামনে? যেমন করে সৈন্যবাহিনী বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় আত্মবলিদানের  গৌরবে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে লুৎফর দেখান, এই মানুষগুলো সামাজিক অথবা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত শক্তির দ্বারা চূড়ান্ত ভাবে আক্রান্ত হয়েও কোনো এক অকৃত্রিম শক্তিতে টিকে থাকে আত্মবলিদান অথবা আত্মহনন, কোনোটাই তারা করে না একধরনের নিস্পৃহতা  এবং উপেক্ষাকে সঙ্গে করে এরা চলে যায় কোনো এক অনির্দিষ্ট যাত্রায়, যেখানে গন্তব্য থাকে, কিন্তু ঠিকানা থাকে না এই যাওয়া আসলে এক ধরনের ফেরাও তার উৎসের কাছে লুৎফর  লেখেন সেইসব আন মানুষের যাপনকথা যারা এনলাইটেন্ড হবার যাবতীয় সুযোগ বঞ্চিত, তবুও উপনিষদী আলোয় আলোকিত

হন্যতে 

 "আন- মানুষ" গল্প গ্রন্থে পাঁচটি গল্প আছে পাঁচটি গল্পেই লেখক তাঁর কেন্দ্রীয় চরিত্র গুলিকে দাঁড় করিয়েছেন সংগঠিত সমাজের ক্ষমতা বয়ানের বিপ্রতীপে দেখিছেন কিভাবে একশ্রেনীর মানুষ রাজনীতি, ধর্ম এবং রাষ্ট্রীয় নিয়মে কেবল ঝুঁকেই পড়ে , আর এক শ্রেনীর মানুষ এসবের শিকার হতে হতে ফুরিয়ে না গিয়ে  নিভৃতে এসে দাঁড়ায়, কুড়িয়ে নেয় শ্বাস কোন স্পর্ধায় তারা বাঁচে, তা লেখক বলেন না, শুধু তাঁর দেখাটুকুকে তিনি দেখান স্বার্থ, বিদ্বেষ, লোভাতুর জীবনের মাঝেও মানুষ নিজের বুকে বহন করে মমতা, মায়া, ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা

 জীবনের যাবতীয় বোবা চাপা রাগগুলিকে তারা ঐসকল উপাদানে চাপা দেয় তাদের জীবন জুড়ে যে এক দীর্ঘ অসম লড়াই চলে, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয় না, লোভ তাদের গ্রাস করে না, ক্ষোভ তাদের হিংস্র করে না, দারিদ্র্য তাদের দুর্বল করে না  কোনো রাষ্ট্রীয় মান্যবর প্রতিষ্ঠানের কাছে বিচারের আশায়ও তারা যায় না তারা তাদের বাঁচাটুকু নিয়ে , অপরিমেয় যন্ত্রণা সহ্য করার শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে, মহাপ্রস্থানের পথে রওনা দেয়! 

দেখি প্রান্তিকচাষী অচ্ছেদকে পরিস্থিতির চাপে জমি বন্দকি দেন মারুফের কাছে মারুফ সে জমির রস নিঙড়ে বার করে সাধ্যমত অচ্ছেদ এসব বোঝে, আর তার অপুষ্ট বেগুন চারাগুলোর জন্য বুকে ভাঙে তবুও সে মারুফের বিরুদ্ধে তার সকল ক্রোধকে  প্রশমিত করে, মারুফের প্রতিই তার কৃতজ্ঞতায় অসময়ে মারুফ তার জমি বন্দক রেখে টাকা দিয়েছিলো লেখক এই বোবাহাবা মানুষের বৃত্তান্ত লিখতে গিয়ে বারবার দেখিয়ে দেন অসীম লোভাতুর এই সমাজকাঠামোর যাবতীয় নেতিকে অচ্ছেদরা কিভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেআদিল, এক বৃহত্তর সংগঠিত রাজনীতির শিকার হয় তবুও  তার যেটুকু ক্ষমতা, তা দিয়েই প্রতিরোধ করে  সে বুঝে নেয়, নিত্যপদ, গোলাম কিবরিয়া কিংবা ফারজেল "ইবলিশের গতরের" মতো অমোঘ নয় সে সাহস সঞ্চয় করে পুলিশ আসছে জেনে, বিপদ আসছে জেনেও, সে গণিমিঞার নিরাপদ হাত ছেড়ে দাঁড়ায়

এই মানুষেরা, লুৎফর দেখান,  কিছুতেই গেরস্থ স্বভাবের নয়, তাই নসরালি যখন শোনে তার ধান, ছাগল, গোরু হাঁস মুরগীও বেহাত, সঙ্গে বেহাত তার মহিতোন আর দোলাও, সে হতবাক হয়, তবুও তার কথা এতো নিরীহ যে তা কোনো চ্যাঁচানি, শাসানি বা অভিযোগের আদলেই পড়ে না

আসিএই  ছোটো এক নিরাসক্ত শব্দের ওপর ভর করে নসরালিও রওনা দেয়  অনির্দিষ্টের দিকে

এক ঘোর অন্ধকারময় সময়েও জগামিঞা দেখতে পায় তার হারিয়ে যাওয়া সন্তান মনজান, বয়ে যাওয়া সন্তান বাবুমিঞা, নাতনি দোলনচাঁপা তার কাঁধে বসে পা দোলায় সংগঠিত সমাজ শক্তি তার সর্বস্ব নিয়েছে, তবুও জগা দেখে আশ্চর্য বট নেমে আসে আরো নীচে, বসে তার পাশটাতে গুছিয়ে

হোসেন,নজুমোল্লাদের পথটুকু পেরোতে নিজেদের ধর্ম পরিচয়ের প্রমাণ দিতে হয়েছিলো সেই পথে, যে পথে ইন্ডিয়া জাগ্রত থাকে হিন্দুত্বের ধ্বজা হাতে ধর্ম দেশ ভাঙে, মানুষের বুকও কি ভাঙে? তাহলে ষষ্টীক্ষ্যাপার বৌ কেন ভাতের দলা তুলে দেয় হোসেনদের মুখে! সমস্ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বেষ্টনী খসে পড়ে তার জননীসত্তার কাছে

 এভাবেই একসময় "আন- মানুষ" শেষ হয় পড়া বুঝি, সংগঠিত রাষ্ট্রশক্তি, ধর্মান্ধ সমাজব্যবস্থা, আর এই বিভৎস সময়কে পেড়িয়ে কিভাবে মানুষ অমোঘ হয়ে ওঠে তার সত্তায়, তার বাঁচায়! সমাজ, দেশ, আইন, তাদের ফিরিয়ে দেয়, ফুরিয়ে দেয় তবুও তারা বিচলিত নয় শেষপর্যন্ত  মানুষ মনুষ্যত্বকে রক্ষা করে পশুত্বের গ্রাস থেকে লুৎফরের লেখকতার স্বার্থকতা এখানেই; তিনি মানুষের জয়কে এক ভিন্ন আঙ্গিকে দেখেন  

 আরোও একটি বিষয় যা আমাদের আপ্লুত করে, তা তাঁর গদ্য কি এক আশ্চর্য গদ্যে লুৎফর লেখেন মানুষের এই বাঁচা অনাড়ম্বর বাঁচাগুলো যা আসলে চড়ুইয়ের ডিমের মতোই ছোটো, তাকেও লুৎফর শব্দের সৌন্দর্যে বাঁধেন শব্দের এক তেজস্বী অথচ মায়াবী ব্যবহারে গদ্যের যে নকসীকাঁথা প্রস্তুত হয়, তারই প্রতিটি বুননে ধরা থাকে এই মানুষগুলোর  যাপন যা আদোতে কোলাহলময় নয়নৈঃশব্দ বৈরাগ্য সেখানে তেপান্তরের মতো বড়, কবিতার মতো সৎ সেই কাব্যময় গদ্যে লুৎফর লেখেন এই সব আনমানুষ আর তাদের পরিসর তাঁর একটুকরো গদ্য তবে রাখা যাক!

 “…নিবিড় হয়ে কথা বলে জগামিঞা তার যাত্রা কতদূর সে জানে না গন্তব্য জানে কিন্ত ঠিকানা জানে নাট্রলার ছাড়ল

মাথা ঘুরলো জগার

তাহলে এই এতো এতো মন্থর জলগঙ্গা মাটিগোলা-ছানিপড়া জলে বয়ে যাচ্ছে উত্তর থেকে দক্ষিণে দু একটা নৌকা দেখা যায়যেন গতিহীন স্তব্ধ দূরেদূরে নলবন,কৃষিকর্মের নাবাল জমিতে জমিতে লড়ে যায়,সরে যায়,মৃদু হয়ে জীবনে প্রথম এভাবেই গঙ্গাকে টের পেল জগামিঞা

জগা দেখল, খেয়ায় পার হওয়া চলে সকলের সাইকেল,মোটরসাইকেল,আলু,চিনির

বস্তা আর মানুষ সকলেই কথা বলছেকিন্ত কোলাহল হয় না একে অপরকে কমই চেনে মানুষজন

ট্রলার থেকে নেমে হুড়মুড়িয়ে ওপরে উঠে গেলো সবাই যে যার মতো ব্যস্তহয়ে অজানা অচেনা চতুর্দিকে কেউ যেন পেছনে পড়ে রইল না কেউ যেন ফেলেও গেলো না কিছু

জগামিঞা জাবড়ে জাবড়ে হেঁটে হেঁটে ওপরে উঠে এলো এখন সে শুরু আর শেষ পথ আর গন্তব্য হারিয়ে ফেলেছে যেননিজের যধ্যে থেকে পিছলে পড়ে পাখিরছানা যেভাবে বাসা খোঁজে,সেইভাবে মনজানকে খোঁজে জগামিঞা

চারদিকে খানা,বালিশের মতো উঁচু উঁচু কুব্জ জমির ক্রমাগত আড়াল হাওয়া বইছে ঝিম নামছে বেলায় আর কেবলমাত্র পাখিরা নৈরক্ষ ব্যস্ততায় বটের দিকে আসে যায়বিশ্রামের আশায় আর নীচের থানে বসা কেন্নোর প্রতিবেশী কেঁচোর প্রতিবেশী মানুষদুটোর অবাক গল্প থপ থপ করে মাটিতে গোত্তা খায়..দেখে!”

 লুৎফর গড়ে ওঠেন, গড়ন পানও যেন হাজার বছরের হাঁটায় তিনি নতুন কিছু বলতে চান, নতুন এক ভাষায়সেখানে কতো সহজে বলা হয়ে যায়---"কেউ যেন পেছনে পড়ে রইলো না, কেউ যেন ফেলেও গেলো না কিছু!” এই বলতে চাওয়াই লুৎফরীয় চলন যেন এক নির্মাণ তবে  বিনির্মাণ কখনোই নয়

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য