মীরা মুখোপাধ্যায়



এফিজি

বসন্তোৎসবের কথা ভেবে ভেবে হেমন্ত কাটিয়েছি 
সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে 
কাঁচা চামড়া জড়ানো একচক্ষু শীত....

বছরের শুরুতেই একা করে চলে গেছে যে
সে আমার সাথে কাঠ কাটতো
মাশরুম কুড়োতো.....
আমার একা থাকতে খুব ভয় করে
তাই ঘাস দিয়ে ওর একটা এফিজি বানিয়েছি,
আর পরিয়ে দিয়েছি রঙচটা উলের পুলোভার

আগুন জ্বালানোর মতো কাঠ ফুরিয়ে আসছে ক্রমে
বরফে ঢেকে গেছে সামনের রাস্তাটাও।
এফিজির কাঠ আর ঘাসগুলো  শুকিয়ে এসেছে 
                                                            বেশ
শীত খুব কষ্টের .....
কিন্তু  এফিজিটা !
একা থাকতে যে ভীষণ ভয় করে আমার....



ত্যাগ

স্পষ্ট বুঝতে পারছি কবিতা আমাকে ফেলে 
চলে গেছে।
ছোট্ট নদীটা যেখানে  ভিএর মতো  বেঁকে গেছে
সেইদিকে
সে আর ফিরবে না হয়তো !
আমার কিচ্ছু  করার নেই, শুধু  
আড়ষ্ট আঙুলগুলো রোদে মেলে বসে থাকা ছাড়া 



লো প্রোফাইল

মাথা নীচু  করে থাকাই অভ্যাস করেছি নিরন্তর 
এ প্রসঙ্গে শীতকালই ভালো 
পুরোনো চাদর ঢেকে হাঁটাচলা.....
ইচ্ছে থাকলেও চোখ তুলে তাকাতে পারি না
লো প্রোফাইল আমি
যে যা বলে শুনি,
 দুঃখ পাই 

শীতকাল শেষ হলে চাদর ছাড়তে হয় একদিন 
লো প্রোফাইল আমি 
 দুঃখ কষ্ট,কন্ঠার হাড়  কিভাবে আড়াল করি!



ঊর্বশী আর পুরুরবা

কতো বা বয়স হবে ,তেরো চোদ্দ
প্লাস্টিক কুড়োতে কুড়োতে মেয়েটা
বসলো এসে আধমরা ছেলেটার পাশে।
আঠাখোর ছেলেটা তখন
প্রাণপণে চোখ খুলে তাকে দেখছে...

কতো  বা বয়স হবে ছেলেটার....
হাড় জিরজিরে বুকে ক্ষয়রোগ থাবা বসিয়েছে
সারাটা সময় তার কেটে যায় 
আধো ঘুমে আধো জাগরনে
তবু তারই মধ্যে এটুকু সময়,মেয়েটা এখানে আসে
দুজনাই চেয়ে থাকে দুজনের দিকে, অপলক। কৃষ্ণচৃড়া গাছ থেকে রঙ ঝরে.....
আপ লালগোলা ঢোকে।
আঠাখোর ছেলেটার চোখ বুজে আসতে চায়
কিন্তু  সে তাকিয়ে থাকে প্রাণপণ 
কালো কুষ্টি মেয়েটার দিকে


পিকচার পোস্টকার্ড

ইস্তাম্বুল থেকে তুমি একটা ছবি পাঠিয়েছিলে 
অনেক, অনেকদিন আগে
পিকচার  পোস্টকার্ড, বসফরাসের জলে
ভেসে থাকা নৌকোর ছবি।
নৌকোয় একটি মেয়ে
হিবিসকাস ফুলছাপ খাটো স্কার্ট, আকাশ দেখছে

আজ পাঠিয়েছো একটি অন্ধকার রাস্তার ছবি
পুরো অন্ধকার নয়, ঘোলাটে আলো আছে
এক বৃদ্ধা কোথাও যাচ্ছেন
মাথার স্কার্ফটি তার লুটোচ্ছে
জনশূন্য রাতের রাস্তায়।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য