মঞ্জরী গোস্বামী

-


অপূর্ণ বিভা

 ১

এত অল্প শব্দ নিয়ে তোমাকে  ভালবাসতে এসে আমার খুব কষ্ট  হয়
ডানহাত বাড়িয়ে দেখি বাঁ' টি দৈর্ঘে ছোট
ওদের সমান করতে চুপিসাড়ে বেলা বয়ে যায়
তুমি মধ্যাহ্ন ভালবাসো
দু'হাতে ক্ষীণ প্রদীপ নিয়ে আমি আঁধার সরাই
মুছে ফেলি সেলাইকরা মলিন শাড়ি জামা
আকন্দ-ঝোপ থেকে শ্বাস ছাড়ে বৃদ্ধ খরিশ
সঙ্গিনী ছেড়ে গেছে চাতালের ভাঙা আলপনা

২

আমি কি তোমার  কথা ভরে নিতে পারি
উটের গলার মত আপোষি মজ্জায়?
সুরে স্বরে এ অবধি লেখা আছে চঞ্চু  তাড়ণা
ভীষণ ভীষণ ঠোকরানো আমার অভ্যাস

চোখ মেলে জেনে গেছি খাদ্য -খাদকের
সাদাকালো লালনীল বেপরোয়া  ফাঁস

পৃথিবীর  সব অশ্রু  ধরতে পারি নি
পারি নি স্রোতের বুকে লিখে দিতে
চিরশ্রী জীবনের গান

জেনেছি মৌনতায় আমায় আগুন হতে হবে
নক্ষত্র পোড়ায় যাকে অনন্ত কালের কোলাজে

৩

মৃত্যুর মিছিলে ঘাড় গুঁজে  তীব্র প্রেম লিখে যাব
বাধা দেবে?
বলবে , এ কোন তালকানা স্বার্থপরতা!
এখন লেখ জীবনের মরিয়া জবানবন্দী মারীর আয়নাতে
লেখ অরণ্যের ছায়ায় মানুষের অনুতপ্ত হাত
প্রাণবায়ু খুঁজে আন শব্দের অলিতে গলিতে
হাল ধর জমিতে চালিয়ে দে সন্ততির অন্নবিলাস
বুকের ভেতর তবু  ফুঁপিয়ে কাঁদছে এক লোভ
এত মেঘ এত জল রোমকূপে এত চোরাটান
আমি শুধু চিনে গেছি ঘাম রক্ত স্রোতের স্বভাব
দূরের বিগ্রহ তুমি চলো আজ খোলা ছাতে চলো
ভীষণ ভিজবে তুমি আমি রাঙা চরণ মোছাব

৪

তুমি কি আমাকে কখনও রেলব্রীজের নীচে দেখেছ?
হাত-পা মুড়ে যারা ঘা বেচে সারাতে চায় জীবনের চলমান ক্ষত?
গা গতরে ঘিন ঘিন খিদে আর বাসনা উকুন
চোখ মেলে পেতে দেয় জরায়ুর আদিম নকশা
নিজেও জানে না ওরা বীর্যের ভাসমান জন্মকণিকা
দূর বহুদূর থেকে তারাফুল হয়ে হয়ে ভেসেই আসছে

৫

সবটুকু দুঃখ শুষে নিয়ে
কঠোর কঠিন হয়ে থেমে আছ
গাজনের প্রাচীন ত্রিশূল
কোথাও রাখি নি ত্রুটি,
নাও তেল নাও নাও সিঁদুরে রক্তজবায় ধারাস্নান
রমণীর ঘোমটায় ষড়রিপু
বেড়াল ছানার মত নিষ্পাপ দোল খায় ঘুমে
প্রভু তুমি সব জানো
এ পৃথিবী সেও এক নারী
তারই বিভঙ্গে খেলে প্রাণদায়ী হাওয়া
নিষিক্ত বীজ জানে
মৈথুন বিকল করে জড়তার কঠিন প্রাকার
তবে কেন মৌনতা
করাতকলের মত চিরে খায় আরব্য রজনী
চেয়ে দেখো মাধবীলতায়
আমি কোনো হিংসা রাখি নি




মন্তব্যসমূহ

  1. রাজদীপ ভট্টাচার্য১১ আগস্ট, ২০২১ এ ১১:৪৩ PM

    অপূর্ব নির্মাণ। কবি কে অনেক শুভেচছা।

    উত্তরমুছুন
  2. Amitava Das১৫ আগস্ট, ২০২১ এ ৬:৩৯ AM

    বাঃ পাঁচটি কবিতাই সুন্দর।

    উত্তরমুছুন
  3. কৌশিক দাস১৬ আগস্ট, ২০২১ এ ১১:০৮ PM

    অসামান্য নির্মাণ। সবকটি কবিতাই আপন বিভায় উদ্ভাসিত। অনেক শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন
  4. Soumi Acharya১৭ আগস্ট, ২০২১ এ ১১:২১ PM

    অসামাণ‍্য কবিতাগুচ্ছ

    উত্তরমুছুন
  5. Pritha Chattopadhyay১৭ আগস্ট, ২০২১ এ ১১:২৪ PM

    অপূর্ব সুন্দর প্রত্যেকটি

    উত্তরমুছুন
  6. Shaswati১৮ আগস্ট, ২০২১ এ ৮:১৫ AM

    এইসব কবিতা যাঁরা পড়তে পাবেন না, খুব বড় একটা কিছু মিস্ করবেন। এমন লেখা পড়তে পাওয়া পাঠকের সৌভাগ্য।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

-
ছবি
  খেচর A poetic prose আমার নাম উপল ব্যানার্জী। এই মুহূর্তের  প্রধান স্মৃতি এটুকুই। বাকি সব আবছা অন্ধকার প্রশ্নবোধক। আজ কত তারিখ জানি না। সময়, বার, মাস কিছুর হিসেব নেই। যা টের পাই তা হল অনেকটা ফাঁকা সময়ে কয়েকটা দিন কয়েকটা রাত ধীরে ধীরে আসা যাওয়া করছে। চিত হয়ে শুয়ে আমি পৃথিবীর বায়ুমন্ডল প্রত্যক্ষ করছি। চোখের পাতার উপরে রোদ, বৃষ্টি মেঘ যাতায়াত করছে। ধোঁয়াটে জলীয় বিন্দু নেমে আসছে স্লো মোশনে। জলের মোশন এত ধীর হয়! কুয়াশা, সম্ভবত শীতকাল অথবা হেমন্ত। একটা শিরশিরে হাওয়ার কাঁপুনি ছুঁয়ে যাচ্ছে। রোদ নেই। চতুর্দিকে শান্ত গাঢ় এক ছাই রং। অসম ঘনত্ব। কখনো খুব পাতলা হয়ে উঠছে, কখনো খুব ঘন। চারদিকে পাখির ডাক ক্রমশ বাড়ছে। মিশ্র শব্দ। কয়েকটা চড়াই খুব কাছে চলে এলো। কানের একদম পাশে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি ওদের তীক্ষ্ণ কম্পাকের ছোটো ছোটো তরঙ্গ। ঠিক যেন তেমন নয় যেমন এতদিন শুনে এসেছি।  এতদিন শুধু মধুজা কানের পাশে রিনরিন করে বাজত।  রাতের হালকা নীল আলোর আভা আলতো করে ওর ঘরের দরজার নিচ থেকে বেরিয়ে পড়ত। সত্যম শিবম সুন্দরম সিনেমায় জিনত আমন-এর ব্লাউজ নিচ থেকে স্লিম চাঁদের বুক ঠিক ওইভাবে বেরিয়ে এসে টলটল ক...
আরও পড়ুন

সব্যসাচী মজুমদার

-
ছবি
   মজার ব্যাপার মজার ব্যাপার - শব্দ করেই আসছিল সে দেখছিলামও কিন্তু, আমার সরার কোনও বিকল্প নেই মাথার ওপর দুলছে পরজীবীর ছায়া বাতাস বহে চতুর্কোণেই বাতাস ভরা অল্প নদী         নদীর পারে ধর্মপিতা মাছ ধরেছে     দুর্গাপাখি ডাকছিল কী! শব্দ করেই আসছিল সে দেখছিলামও … কিন্তু, আমার সরার কোনও বিকল্প নেই…     এটাই স্বতঃসিদ্ধ না তো!  
আরও পড়ুন

সৌম্যজিৎ আচার্য

-
ছবি
   প্রেমের কবিতা -৬ ঘুমের ভেতর এক দরজা  সে দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছ তুমি হাতে ফুলের মালা যে মালা আমার শবে ছিল রাখা বসে আছ, বসে আছ বালির ভেতর বাইরে বৃষ্টি উৎসব... প্রেমের কবিতা -৮ জুডাস বলল, তুমি যদি আমাকে একটা মেয়ে দিতে যে মেয়ের মুঠোয় ঢেউয়ের মতো প্রেম তবে আমি তোমাকে  ধরিয়ে দিতাম না... প্রেমের কবিতা -৯ ভালবাসা  নদীর মতো বয়ে যাওয়া স্রোত  তুমি তাকে শরীরে ভরেছ... প্রেমের কবিতা- ৯৬ তুমি রাজুর সঙ্গে শুয়েছিলে রাকীবের সঙ্গে শুয়েছিলে... আমি যোশেফ আমাকে ঘরে না ডেকে এখানে নিয়ে এলে কেন? এত এত নক্ষত্রের নীচে নদী চেনাতে?    
আরও পড়ুন