গৌতম দে সরকার
আকাশের মতো উদার
আকাশের ওই দূরের মেঘগুলোর কাছে যেতে মন চায়। তার অলিগলি খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু যাওয়া যে যায়, সে বিশ্বাস আছে ষোলো আনা।বড় রাস্তা দিয়ে আর একটু এগিয়ে গিয়েই, গ্রামের শেষ মাথা থেকে শুরু প্রকান্ড তেপান্তরের মাঠ। ধূ ধু অনাবাদী দিকশূণ্য জমিই নয়, এক প্রহেলিকাও যেন।
.
রুক্ষতায় মাঠের ঘাসগুলোও লালটে তামাটে হয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। এখন একটু বৃষ্টি পেয়ে সবুজ হয়েছে। তারই কোণাকুণি আপন খেয়ালে হেঁটে যাওয়া মানুষের পায়ের চিহ্ন রেখে যাওয়া পথটি। যুগান্তকারী, আঁকাবাঁকা সে পথ। কত মানুষ, কত কাল হেঁটে গেলে এই রেখায় পথ তৈরি হয়! আশ্চর্য এক হাতছানি আছে এ পথের।
দূরের তালগাছগুলোও কেমন যেন ডাক দেয়। প্রকান্ড এই মাঠের কাছে এলেই মনে হয় পৃথিবীটা সত্যিই গোল। থালার মতো নয়, বিবেকের পাঁচ নম্বর ফুটবলটার মতোই। আর মনে হয়, কেন জানি না বিশ্বাসও হয়, এই পথে হেঁটে গেলেই পাওয়া যাবে সেই মেঘরাজ্যের ঠিকানার সন্ধান।
মাও জানে, যেখানেই যাক তার লাট্টু ঠিক ফিরেও আসবে। এমন তো লাট্টু কতই গেছে। একদিন, দুদিন। সাতদিন। পক্ষকাল পেরিয়েও ফিরে এসেছে। মায়ের মুখের হাসি দেখেছে। আর মা শুনেছে হাজার পৃথিবীর গল্প। ছেলের চোখ দিয়েই দেখেছে বৃহৎ জগতের আনন্দ দুঃখগুলো। লাট্টু ফিরে এলেই মায়ের স্বস্তি। লাট্টুর বাবা কেন ফিরল না আর সেটা এখনও প্রশ্ন। বড় নদীটার পাড়ে দাঁড়ালে বুকটা ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে। ইলিশ উঠবে নৌকার খোল ভ'রে। সেই ভরা-বর্ষা-ভাঙ্গা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হলো। ভরা মাসের পেটে তখন লাট্টু। মায়ের কথা হা করে শোনে লাট্টু। আর ভাবে বাবা লোকটা ঠিক কেমন দেখতে? যদি এসে ফিরে যায়! চিনতে যদি না পারে লাট্টু!
মা বলে, "তোকে ঠিক চিনবে।"
লাট্টু বলে, "চিনবে কেমন করে, আমাকে তো সে দেখেই নি।"
বিশ্বাস থেকে মা বলে," চিনবে চিনবে। তার ছেলেকে সে চিনবে না!"
মায়ের অগাধ বিশ্বাস দেখে আশাবাদী মনটা অজানা সুখের খুশিতে ভরে ওঠে।
না কোনো নৌকাডুবি, না অন্য কোনো দূর্ঘটনার খবর। এমন কি পুলিশবাবুরাও কোনো হদিস দিতে পারল না।
আট বছর বয়স এখন লাট্টুর।
লাট্টুর পড়াশোনা ভালই লাগে না। খালি ভাবে বাবা থাকলে ওকে নিশ্চয়ই ইস্কুলে পড়াতো। ওরা ভাল বাড়িতে থাকতো।
মাঝারি মাপের রাস্তাটাই এখন চওড়া হয়েছে। মোটা পিচ ঢেলে, সারা রাস্তা জুড়েই সাদা রঙ দিয়ে আঁকিবুঁকি কত দাগ। সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছুটে যায়। কতদিন ধরে যে তৈরি হলো রাস্তাটা। কালভার্ট হলো, হাই-ড্রেন হলো। মাটি ফেলা হলো। তারপর ইঁট পড়লো, পিচ পড়লো। সবই চোখের সামনে দেখা।
এখনো বড় বড় পাইপ পড়ে আছে রাস্তার ধারে ধারে, এখানে সেখানে। ব্যস্ত রাস্তার পাশে নতুন পুলিশ-থানা হয়েছে। থানার কাছে পড়ে থাকা এমনই কতগুলো বড় পাইপের একটিতেই লাট্টু থাকে মায়ের সাথে। থানায়, পুলিশদের রান্না করে দেয় লাট্টুর মা। তাই পুলিশকাকুদের সাথে ওর অবাধ মেলা।
এই রাস্তাটি নাকি বোম্বে গেছে। লাট্টু যে কতজনকে জিজ্ঞেস করেছে, বোম্বেটা কতদূরে?
সবাই বলেছে, অনেক দূর!
এই অনেক দূরটি কিভাবে বুঝবে লাট্টু, সেটাই বুঝে ওঠে না। হেঁটে গেলে ক'দিন লাগবে ঠিক, কেউ তা বলে না। তাই ওপথে যাওয়ার চিন্তা আপাতত বন্ধ। কিন্তু ওর ওই আকাশের মেঘগুলোর কাছে যেতে খুব ইচ্ছে। হাতের নাগালেই তো এসে দাঁড়ায় মেঘগুলো, এই বড় মাঠের কাছে এসে দাঁড়ালে।
সাহেবদের বাগানে অনেক পেয়ারা দেখে, চুপি চুপি গিয়ে পেড়ে এনেছে। ওখানে নাকি সাপের উৎপাত খুব। তাই কেউ সচরাচর ওদিকে আসে না। লাট্টু মনের সুখে পেয়ারা পেড়েছে। গাছের ডালে বসে বসেই খেয়েছে গোটা চারেক।
লাট্টু পেয়ারাগুলো পাড়ছিল আর মনে পড়ছিল তারই বয়সি বিবেকের কথা। সে অনেক দূরে থাকে। মাঠ পেরিয়ে, নদী পেরিয়ে পাহাড়তলীর গ্রাম ছাড়িয়ে আরও অনেকটা দূর গিয়ে তার বাড়ি।
বিবেক জানালার ধারে বসে থাকে। বাইরে তার যাওয়া মানা। ঘরেই তার পড়াশোনা, খেলা, ছবি আঁকা। লাট্টু দেখেছিল ওর ঘরের ফুটবলটিকে। ইস্ এমন একটি ফুটবল যদি ওর থাকতো, পাড়ার ছেলেরা ওকে খুব খাতির করতো।
লাট্টু জানালায় দাঁড়িয়ে ওর সাথে গল্প করে। অনেকক্ষণ। বিবেকের কল্পনা আকাশ ছোঁয়া। বর্ণনায় অদ্ভুতরূপ পায় দূরের দৃশ্যপট। লাট্টু ওর কল্পনাতে দেয় বাস্তবিক সত্যতা। খেলাটি লাট্টুর ভালোই লাগে। বিবেকেরও লাগে। জানালার এপারে ওপারে ওরা এমনভাবে মিশে যায় যেন শৈশবের একটিই সত্ত্বা। একটি ভিতরের, অন্যটি বাইরের।
ফিরে আসার সময় বিবেক বলে দেয়, আবার এসো বন্ধু।
লাট্টু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।
লাট্টু ইস্কুলে যায় না। সেদিন ইস্কুলের মাঠেই ফাংশনে নাটক দেখল লাট্টু। অবাক হয়ে দেখল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, ডাকঘর। লাট্টুর অবাক হওয়ার কারণ অন্য। সেখানে অমলকে দেখে ওর বিবেকের কথাই মনে পড়ছিল বারে বারে। কত কল্পনা, অজানা শঙ্কা এসে ভীড় করছিল মাথায় বিবেকের জন্য। সকলের অজান্তেই নরম গাল বেয়ে, চোখে জল বেয়ে এসেছিল।
বাড়িতে এলে, মা জিজ্ঞাসা করেছিল, 'কিরে মন খারাপ?"
ব্যাস্ এইটুকুই বোধহয় দরকার ছিল। যেভাবে নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়ে, সেভাবেই কান্নাটা বেরিয়ে এল লাট্টু। ফুঁপিয়ে কেঁদে নিল কিছুক্ষণ। মা'কে বোঝানোর মতো ভাষা সে ঠিক পেল না।
তেপান্তরের মাঠের কোণাকুণি রেখা টানা পথ দিয়ে হাঁটতে থাকলো ও। পলিথিনের ব্যাগে নিয়েছে কয়েকটি পেয়ারা, বিবেকের জন্য। প্রখর রৌদ্র উঠেছে আজ। এসব গায়ে লাগে না লাট্টুর। শুধু শীতকালটাতেই কষ্ট ওর। কাপড়ের কাঁথায় খুব শীত লাগে। মায়ের ওমটাই খুব দামী তখন।
মা এখন রান্না করছে থানায়। ব'লে আসা হলো না। বললে কি আর আসা হতো? এমন অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে অনেকটা পথ চলে এসেছে, কিন্তু মাঠের তো অর্ধেকও ফুরোয় নি। পিছন ফিরে একবার চারিদিক দেখে নিল। চারিদিকে কোনো লোকজনকে দেখতে পেল না ও। না কোনও বাড়িঘর।
এই দিনের বেলাতেও কেমন ভয় করতে লাগল লাট্টুর। প্রকান্ড আকাশটা বুঝি নেমে এসেছে কিছুটা। আর একটু নেমে এলেই তো মেঘগুলোও ছোঁয়া যেত। সে ভাবছে একটা মেঘ যদি নেমে আসে কখনো, ঠিক তার মাথার ওপরেই চেপে বসবে। তারপর উড়ে উড়ে বেড়াবে সারা পৃথিবী। কী মজা হবে তখন!
অবশেষে লাট্টু দূরে একটি তালগাছের মাথা দেখতে পেল। মনের মধ্যে খুশির ঝিলিক খেলে গেল, এই ভেবে যে মাঠটি বোধহয় এবার ফুরোবে। তালগাছের নীচে একটি বাড়িও চোখে পড়লো আরও কিছুটা এগিয়ে।
পা ব্যথা হয়ে গেছে। একটি আমগাছের নীচে দাঁড়াতেই দেখল ডালে ডালে পেকে আছে আম। এই বয়সেই গাছে ওঠায় ওস্তাদ লাট্টু। টপাটপ পেড়ে ফেলল কয়েকটি। পাকা আমের মুখটি দাঁত দিয়ে কাটতেই অমৃতের আস্বাদ পেল। কয়েকটি আম ব্যাগে পুরে নিল, বিবেকের জন্য। তারপর আবার হাঁটা শুরু করল।
হাঁটতে হাঁটতে এক গ্রামের কাছে এসে পৌঁছল লাট্টু। খুব জলতেষ্টা পেয়েছে। এক বাড়িতে ঢুকে জল চাইতেই সে বাড়ির এক কাকীমা ওকে জলের সঙ্গে দুটি দানাদার খেতে দিল। কী সুন্দর স্বাদ যে পেল লাট্টু। জল খেয়ে লাট্টু বলল, "পেয়ারা খাবে?"
কাকীমা মায়ের বয়সিই হবে। বলল, "তাই! তুমি দেবে বলছো? "
একটি সুন্দর পেয়ারা ব্যাগ থেকে বের করে দিল।
কাকীমা বলল, "তুমি যাবে কোথায়?"
লাট্টু সংক্ষেপে বললো। শুনে কাকীমা বললো, "সে তো অনেক দূর! নদী পেরোবে কি করে? পয়সা আছে?"
মাথা নাড়লো লাট্টু। বললো, "আগে নৌকায় উঠে বসেছিলাম। পয়সা চায় নি মাঝি। এবার চাইলে দুটো পেয়ারা দিয়ে দেব।"
কাকীমা ঘর থেকে কিছু শুকনো খাবার আর একটি দশটাকার একটি মুদ্রা এনে লাট্টুর হাতে দিল।
"আজ আমার উপোস। তাই রান্না করিনি। এগুলো রাস্তায় খেয়ে নিও। নদীটা তো দুবার পার হতে হবে তাই না? এই পয়সাটাও রাখ। ফেরার পথে আমার সাথে দেখা করে যেও।"
মায়েরই মতো মমতামাখা খুব স্নেহ অনুভব করল লাট্টু।
সেখান থেকে যখন হেঁটে হেঁটে নদীর পাড়ে এল তখন সূর্যটা এসে দাঁড়িয়েছে মাথার ওপর। কী বিশাল নদী! জলে রোদ্দুর পড়ে চিকচিক করছে। পাড়ে ঢেউ ভাঙছে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে। ঢালু পাড় বেয়ে লোকেরা নেমে যাচ্ছে নৌকার দিকে। মালপত্র নিয়ে। কিনারে নৌকা বাঁধা। লাট্টুও নৌকার ওপরে গিয়ে বসল।
মাঝি ওকে দেখে বললো, "কি রে, তুই আবার এসেছিস? "
অবাক হলো লাট্টু। কয়েকমাস আগে এসেছিল, সেটাও মনে রেখেছে লোকটা! পকেট থেকে দশটাকার কয়েনটা বের করে মাঝিকে দিল ও। বললো, "রেখে দাও ফেরার ভাড়াটাও।"
এবার অবাক হলো মাঝি, "পয়সা পেলি কোথায়? "
"কাকীমা দিয়েছে। এই খাবারগুলোও দিয়েছে।"
মাঝি বললো, "পয়সা রেখে দে তোর কাছে।"
লাট্টু বললো, "আমার তো আর লাগবেই না পয়সা। তোমার কাছেই থাক।"
এভাবে যাওয়া যেন গর্বের সাথেই যাওয়া। তাই মাঝির কাছাকাছি এসেই দাঁড়ালো। মাঝি বৈঠায় চাপ দিতেই, নৌকা এগোল। লাট্টু দেখল, মাঝির হাতের পেশীগুলো কেমন ফুলে ফুলে উঠছে।
মাঝনদীতে নৌকা এল। সেই তেপান্তরের মাঠের মতো এখানেও সুবিশাল আকাশটি নেমে এসেছে যেন। মেঘেদের ছায়া পড়েছে জলে। মাঝির সারা গা ঘামে ভিজে গেছে। বারে বারেই গামছা দিয়ে মুছছে মুখটা। লাট্টু দেখে ভাবল, এই লোকটার মতোই কি ওর বাবা নৌকা বাইত! এই লোকটাই যদি ওর বাবা হয়!
পরক্ষণেই লজ্জা পেল,এই লোকটিকে বাবা ভেবে। বাবা কি যে কেউ হতে পারে! তাছাড়া মা বলেছে, বাবা তাকে দেখেই চিনতে পারবে।
তবু মাকে গিয়ে বলবে এই মাঝির কথা। একদিন মাকেও আনবে সাথে করে। যদি সত্যিই হয়! কিন্তু বাবা কি এমন নিষ্ঠুর হতে পারবে! লাট্টুর মায়ের যে কী কষ্ট, শুধু লাট্টুই জানে।
এপারে এলো নৌকা। মাঝি বৈঠা ছেড়ে ছুটে গিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলল খুঁটির সাথে। এক এক করে সকলেই নেমে যাচ্ছে। তাদের পিছু পিছু নামতে গিয়েই ডাক শুনল, "এই ছেলে.."
লাট্টুকেই ডাকছে। মাঝি এসে দশ টাকার কয়েনটি ওর হাতে দিয়ে দিল।
নদী পেরিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল। দুপাশে ফাঁকা মাঠ। কিছু কিছু ফসলও ফলিয়েছে মানুষেরা সেখানে।
নদীর সাদা বালির রাস্তাটি এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাহাড়তলীর দিকে। দূরে টিলার আভাস। এদিক ওদিক গাছপালা ঘেরা বসতি। স্নিগ্ধ সবুজ, ছায়াময় গ্রাম।
রাস্তার পাশেই একটি সুবিশাল বট গাছের নীচে এল লাট্টু। পথে কাকীমার দেওয়া খাবারগুলো বসে বসে খেল। তারপর আবার হাঁটতে শুরু করলো।
রাস্তায় পিছন থেকে একটি লোক সাইকেল চালিয়ে যেতেই থেমে দাঁড়ালো।
"কোথায় যাবি?"
লাট্টু আঙ্গুল তুলে পাহারতলীর গ্রামের দিকে দেখাল। লোকটি বলল, "আমি অতদূর যাব না। তবে কাছাকাছিই যাব। তোকে নামিয়ে দেব।"
লাট্টু সাইকেলের পিছনে চেপে বসলো। ভালোই হলো। বন্ধুর কাছে একটু আগেই পৌঁছানো যাবে।
অনেকটা পথ সাইকেলে আসার পরে লোকটি এক তিন মাথা মোড়ে এসে দাঁড়ালো।
"এখানে নেমে যা, আমি ডান দিকের বেঁকে যাব।"
ভরদুপুর বেলা। শুনশান চারিপাশ। গাছপালার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে পাহাড় চূড়া দেখা যাচ্ছে। এখন আর আবছা নয়, স্পষ্ট।
আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে আরও অনেকটা হেঁটে এসে, বাঁক নিতেই একটা পাকা বাড়ি চোখে পড়ল।
দৌড়ে গেল লাট্টু বিবেকের ঘরের জানালার কাছে। ডাক দিল, "বন্ধু। "
কোনো সাড়া পেল না।
আরও দু তিন বার ডাকল। না, এবারও সাড়া পেল না।
আরও একবার জোরে ডাক দিতেই, এক থুত্থুরে বয়স্কা বৃদ্ধা বেরিয়ে এলো অন্য ঘর থেকে।
"কে? কে ডাকে?"
"আমি ঠাকুমা।"
"আমিটা কে?"
"আমি লাট্টু।"
"ও লাট্টু। তা কী চাই বাবা। তোমাকে তো আমি চিনতে পারছি না।"
"বন্ধু নেই?"
"কে বন্ধু? "
"এই ঘরে থাকতো না। বিবেক গো।"
"ও, তুমি সেই কি আমার ছোট্ট বন্ধুর কথা বলছো? সে তো ওই মেঘের মধ্যেই মিলিয়ে গেল আমাকে এইখানে একলা ফেলেই।"
বলেই বৃদ্ধা ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকল। এই বৃদ্ধা বুঝি বা কতই না কেঁদেছে, চোখে আর জল আসে না। লাট্টুর সারা দেহ কেমন অবশ হয়ে এল। সূর্যটাও এবার ডুবতে শুরু করেছে আগের পাহাড়ের দিকে। ব্যাগের পেয়ারাগুলো, আমগুলো রেখে এল সেখানেই।
রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই খোলা আকাশটাকে দেখতে পেল। সেখানে সাদা সাদা অফুরন্ত মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব কান্না পেল ওর। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে এলো চারপাশ। হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল লাট্টু।
বিকেল পেরিয়ে সাঁঝবেলার আয়োজন পাহাড়তলী গাঁয়ে। লাট্টু দেখল এক দইওয়ালাকে, কাঁধে বাঁক নিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছে। লাট্টুর কাছে এসেই জিজ্ঞেস করলো, "কোথায় যাবে খোকা?"
মনটা খুবই খারাপ। বাড়ি ফিরে যাবে সেটাই ভাবছিল লাট্টু। কিন্তু এক্ষুনি সন্ধ্যাও নেমে আসবে। ওর বাড়ি ফেরার কথা শুনে দইওয়ালা লোকটি বলল, "সে তো অনেক দূর! তুমি ফিরবে কি করে?
চলো চলো, আমার সাথে আমার বাড়ি চলো। রাতটা থেকে কাল সকালেই ফিরে যাবে।"
আবারও কেন,জানে না লাট্টু। ওর চোখে জল এল। আরও একবার যেন পিতৃত্বের স্নেহের ছোঁয়াটুকু পেল।
কথা বলতে বলতে, ওরা দুজন সন্ধের সাজ-বেলায় পাহাড়তলীর পথের বাঁকে মিলিয়ে যেতে থাকল।
Ashadharan
উত্তরমুছুনঅসাধারণ
উত্তরমুছুন