অসিত মণ্ডল

  অনুবাদ কবিতা  
ছোট্ট ভেড়ার ছানা

 

ছোট্ট ভেড়ার ছানা ,তোকে এরূপ দিলেন কে ?

জানিস কি তুই এমন করে গড়েন তোকে কে ?

 

জীবন দিলেন ,আহার দিলেন ওরে
নদীর ধারে পথে পথে প্রান্তরে
পোশাক দিলেন  মনখুশী উজ্জ্বল
পশম কোমল মখমলি ঝলমল
কণ্ঠে দিলেন এমন কোমল সুর ,
উপত্যকা আনন্দে ভরপুর
 
ছোট্ট সোনা আমিই বলি তোকে,
ছোট্ট সোনা আমিই বলি তোকে
 
তোর নামেতেই সবাই চেনে তাঁকে
আপনাকে যে তোর নামেতেই ডাকেন
শান্ত এবং কোমল স্বাভাব যিনি,
শিশুর বেশে আবির্ভূত তিনি
আমিই শিশু তুই যে ভেড়ার ছানা ,
তাঁর নামেতেই সবার কাছে জানা
 
ছোট্ট ভেড়ার ছানা , নে তাঁর করুনাধারা
ছোট্ট ভেড়ার ছানা , নে তাঁর করুনাধারা
                                                 ( Little Lamb – William Blake )



ওয়েস্টমিনস্টার সেতুর পরে
 
পৃথিবীর সুন্দরতর নেই কিছু আর ;
বোধহীন যে সে থাকে নিরুত্তর
দেখে না সে এমন মনোহর মহিমা ;
নগরী পরেছে যেন প্রভাত-পোশাক ,
নীরব নির্মল সুন্দর প্রভাত ,
জাহাজ,চূড়া গম্বুজ,অভিনয়-ঘর আর মন্দির
দিগন্ত জুড়ে মাঠ, মাঠের পরে ওই নীলাকাশ ,
ঝলমলে রোধ আর বহতা বাতাস
এমন সূর্য তো কখনো ওঠেনি আগে
প্রথম আলোর শোভা উপত্যকা, পাহাড়ে-পর্বতে ;
দেখিনি কখনো,আনুভবে নেই প্রগাঢ় নীরবতা !
আপনবেগে চলে নদীটি আনমনে
হে ঈশ্বর ! এখনো ঘুমন্ত সব সুখী গৃহকোণে ,
নগরীর নিঃগুঢ় হৃদয় নিথর নীরব নিদ্রাগহিনে
 
                  ( Composed Upon Westminster Bridge – William Wordsworth )
 
 
 
 
 
একটি বহুবার বলা কথা
 
একটি কথা যা বহু বাবহারে জীর্ণ ,
সে কথা আমি বলবো না তো আর
একটি অনুভুতি যা ঘৃণাভরে আজ দীর্ণ ,
তুমি তাঁকে ঘৃণা করো নাকো আর
 
একটি আশা যা আসলে হতাশা নামান্তরে ,
বোধের আড়ালে লুকাবোনা তাকে প্রিয়
তোমার করুণা রাখি আমি অন্তরে ,
পাত্রভেদে যা ভীষণ অসহনীয়
 
ভালোবাসা বলে লোকে যাকে ,
তোমাকে তা দেবো না তো আমি
দেবো হৃদয়ের অর্ঘ্য যা , তাকে
ফেরান না অন্তর্যামী
 
তারার জন্য মথের যে আকুলতা ,
রাত্রি অধীর যেমন দিনের তরে
সুদূরপ্রসারী আমার সে ব্যাকুলতা ,
থাকেনা নিছক বেদনার পরিসরে
 
                          (One Word is too often Profaned – Percy Bysshe Shelley)
 


নাইটিংগেলের প্রতি

                                     
হৃদয় কাতর ব্যথায় , সংজ্ঞা হয়েছে অবশ
যেন তীব্র বিষ কণ্ঠে করেছি পান ,
অথবা আফিং সেবনে চেতনা বিবশ ,
না কি কিছু আগে ভ্রান্তি-নদীতে স্নান ;
তোমার সুখে তো ঈর্ষা জাগে না মনে ,
বরং সুখী তোমর সুখই যে খুঁজে ,
তুমি বনপরী , নিবাস যে বনবীথি ,
গান গেয়ে যাও একাকী আপনমনে
ছায়া ঘন বনমাঝে প্রগাঢ় সবুজে ,
অনায়াসে গাও ঋতু-বসন্ত-গীতি
                        
                      
আহা , সুপ্রাচীন সেই সুরা ! মাটির গভীরে
ছিল সঞ্চিত বহুকাল ধরে যা শীতল ,
আনে যা শ্যামল স্বাদ গ্রাম্য উৎসব ঘিরে ,
নাছ , গান আর সূর্য-স্নানের উল্লাসে উজ্জ্বল ,
অথবা পেয়ালাখানেক দখিন দেশের সুরা
যেন হিপোক্রিনের ঝর্নার উচ্ছ্বাস ,
পেয়ালা কিনারে উপচিয়ে ওঠা বুদবুদ রঙ্গিন ,
আকণ্ঠ পানে মুখ রক্তিম আমি যে আত্মহারা
ছেড়ে যাব আমি মাটি পৃথিবীর বাস ,
তোমার সাথেই বনানীতে  হবো লীন
 
 
                                
দূরে আরও দূরে যাও ভুলে যাও সব কথা ,
যা কিছু অজানা তোমার গভীর বনে ,
ক্লান্তি , জর আর দুঃখের কথকতা ;
দিন যায় রাত যায় শুধু ব্যথা আলাপনে ,
জরাগ্রস্ত , পাকাচুল , সময়ের অভিঘাত ,
ক্ষণকাল পরে সুন্দরতার নিশ্চিত রাহাজানি ,
আজকের প্রেম আগামীকালেই চিহ্ন রাখে না তার
                       
                       
পড়ে থাক সব , চলে যাবো তোমার ছায়ায় ,
তবে না হোক সহায় বিস্মরণের মদ ,
উড়ে যাবো আমি অলখ কাব্য-পাখায় ,
যদিও এখন রুদ্ধ মননে হারিয়ে শব্দবোধ
এই তো তোমার সাথে , মরমিয়া রাত আর
হাসিমুখ চাঁদ আকাশ-সিংহাসনে ,
পরীদের মতো তারাদল চারিপাশে ,
আলো নেই শুধু নিবিড় অন্ধকার ,
শুধু যতটুকু আনে বাতাস সংগোপনে ,
সবুজ আঁধারে ক্ষীণ আলো ভেসে আসে  
 
                     
কত না অজানা ফুল সুরভিত বৈভব ,
সুগন্ধি সব অচেনা গাছের বাহার ,
সুরভি আঁধারে অনুভবে পাই সব
সুবাতাস আনে মরশুমি ফুলভার  ,
ঘাসবন , বনতল , বুনোফল কত শত , 
শ্বেতলতা আর গোলাপ-শোভিত প্রান্তর ;
পাতার আড়ালে বেগুনি ফুলের মেলা ,
মধ্য গ্রীষ্মে হয় যারা পরিণত
লতানো গোলাপ-থোকা শিশিরে ভেজা রাতভর ,
ভ্রমরের গুঞ্জন মুখরিত এক গ্রীষ্ম সন্ধ্যাবেলা
 
                        
আঁধারে পেতেছি কান , শুনি শুভ আবাহন ,
মধুর মরণ-সাথে আধো প্রেম বিশ্বাস
কত নামে , ছন্দে গানে করেছি স্মরণ ,
মহাশূণ্যে মিশে যাক তবে শেষ নিঃশ্বাস
মনে হয় এই তো মধুরতম যাবার সময় ,
মিশে যাবো মধ্যরাতের আঁধারে যন্ত্রণাহীন ,
তখনও তোমার গান ভেসে যাবে আরও দূর প্রান্তরে ,
ভরে দেবে পরম আনন্দে পৃথিবীর সবার হৃদয়
তুমি গেয়ে যাবে , যদিও আমি শ্রবণ শক্তি হীন ,
তোমার শোক সংগীত ! আমি ধুলোর মাঝে লুপ্ত চিরতরে
  
                       
তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী , মৃত্যুতে নেই ক্ষয় !
রুখে দাও তুমি কালের আঘাত , মৃত্যুহীন প্রান ,
এই সন্ধার গীত জানি চিরায়ত অক্ষয়
সুদূর অতীতে রাজা প্রজা শুনেছিল এই গান ,
হয়তো গান উচ্চারিত পৃথিবীর সবখানে ;
শুনেছে গান রূথও , বেদনা বিধুর মনে ,
স্বজনহারা সে ছিল ধান খেতে একা অতি দূরদেশে
সেই একই গান কত শতবার ভাসে সমুদ্র পানে ,
ভেসে আসে সেই কোন সুদূরের মায়াপুরী বাতায়নে ,
দুর্গম সমুদ্র তীরের পরিত্যক্ত রূপকথা দেশে
                       
                           
পরিত্যক্ত’! শব্দ যেন এক অমোঘ ঘণ্টাধ্বনি ,
আমাকে ফিরায়ে আনে , ফেলে আসি স্বপ্ন-আলয়
বিদায় ! কল্পনা-মায়া , তুমি ভোলাতে পারোনি ,
ছলনার ভরে শুধু পুলকিত মন মরীচিকা আলোয়
বিদায়! বিদায়! মুছে যাক সকরুণ স্তবগান ,
সবুজ মাঠের পরে , পেরিয়ে শান্ত নদী-দেশ ,
হারিয়ে গেল গান ওই যে পাহাড়িয়া ঢালে ,
ওপাশের উপত্যকায় গানের নিশ্চিত অবসান
কি মায়া ! কি কোন স্বপ্ন আবেশ ?
থেমে গেল গান ! আমি জাগরণে , না কি নিদ্রা মায়াজালে ?
                                                            (Ode to a Nightingale – John Keats)
 


মন্তব্যসমূহ

  1. বহুল পঠিত কবিতাগুলোর দুর্দান্ত অনুবাদ। খুব খুব ভালো লাগল।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য