চয়ন ভৌমিক
অর্কেস্ট্রা
বিপন্ন ব্যকরণের পাশে বসে আছি।
' 'কপি বুক খেলো' বলছে সময়।
দায় বলছে ‘কর্ম করে যাও’; রাতকে,
এগিয়ে দাও দিনের দিকে, আর
অন্ধদিবসকে ঢেলে দাও পরিশ্রমের সুরাপাত্রে।
গীতার দীর্ঘজীবী বাণী এসব, অমৃতকথন।
যেন কৃষ্ণের হাত-রিক্সায় বসে
অর্জুন চলেছেন কুরুক্ষেত্রের ময়দানে।
লড়াই হবে নিজের সাথে নিজের, ছায়াবাজির
সমস্ত তির উড়ে আসবে ধর্মরাজের দিকে।
উড়ে আসবে গলা টিপে ধরার নির্মম আঙুল,
ঈগল, হোটেল ক্যালিফোরনিয়া। কিন্তু
ফল পাবে না অত তাড়াতাড়ি।
ফলহারিণী অমাবস্যার ভিতর
সমস্ত ফল বিসর্জিত যেন। এভাবেই
ধৈর্য অপেক্ষা করবে কারখানার জ্যান্ত জীবনে,
শীতল দেওয়ালের ইটে
ঝুঁকে পড়বে পাঁচ সেলের জোরালো আলো,
নিঃশব্দ পায়ে ফিরে আসবে –
অতীতকালের স্মৃতিসঙ্গীত, মিছিলের চোয়াল।
পল সাইমন শব্দের ঠান্ডা গলায়
নামিয়ে আনবে, গভীর রাতের নির্ঘুম সুর।
তুমি শুনবে হেডফোনে ভেসে আসছে,
খসখসে গলার হিমবাহ শাসানি,
ভয় দেখানো চোখ ছিঁড়বে তোমার স্নায়ু।
মাস্টারমশাই অন্তর্দাহ পুড়িয়ে
জেনে যাবেন সব কিছু দেখতে নেই চোখে।
এদিকে, তুমি শুনবে অর্জুনের স্কোর বাড়ছে না।
তাঁর সলিড ডিফেন্স ভেঙে ফেলেছে
একদল শয়তান জুয়াড়ি।
অর্জুন তবুও অবিচল, নির্মম তাঁর
বরফ শীতল ‘পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি’ ;
মাছের চোখে চোখ রেখে
রিভার্স সুইংকে প্রতিফলনে বিঁধছেন তিনি –
আসলে তিনি আবহমান সৈন্য
হরিপদ কেরানি, কিংবা বঙ্কিমের চা-এর দোকান
অথবা ভবানীদার ডকে ওঠা মুদির দোকান।
অফস্টাম্পের বাইরের বল, তাঁকে
শিখিয়ে দিয়েছে লোভ সংবরণের ধৈর্য্য। তিনি জানেন
ফ্রন্টফুট একটা সরু ষড়যন্ত্র
সামান্য এসপার ওসপারে ভয়ংকর ফাঁদ
বা, উড়ে যাওয়া বসন্তবাতাসের দিকে।
যদিও তিনি জানের জীবন ও মৃত্যুর মাঝে,
যেটুকু দোল পুর্ণিমা ঠিক ততটাই বিদ্যুৎ বিভ্রাট৷
তাই হয়তো, সমস্ত ভ্রমণের শেষে
তাঁর স্কোর শূন্য, রেটিং নিল, হাতের
শূন্য খামে শূন্যতর জীবন।
তিনি দেখছেন লম্বা রেললাইন পেরোলেই
পৃথিবীর শেষ স্টেশন।
সলিল চৌধুরীর স্পেস শিপ...
নেমে যাওয়ার গাঢ় সংকেত।
' 'কপি বুক খেলো' বলছে সময়।
দায় বলছে ‘কর্ম করে যাও’; রাতকে,
এগিয়ে দাও দিনের দিকে, আর
গীতার দীর্ঘজীবী বাণী এসব, অমৃতকথন।
অর্জুন চলেছেন কুরুক্ষেত্রের ময়দানে।
লড়াই হবে নিজের সাথে নিজের, ছায়াবাজির
উড়ে আসবে গলা টিপে ধরার নির্মম আঙুল,
ফলহারিণী অমাবস্যার ভিতর
সমস্ত ফল বিসর্জিত যেন। এভাবেই
ধৈর্য অপেক্ষা করবে কারখানার জ্যান্ত জীবনে,
ঝুঁকে পড়বে পাঁচ সেলের জোরালো আলো,
নিঃশব্দ পায়ে ফিরে আসবে –
অতীতকালের স্মৃতিসঙ্গীত, মিছিলের চোয়াল।
পল সাইমন শব্দের ঠান্ডা গলায়
নামিয়ে আনবে, গভীর রাতের নির্ঘুম সুর।
তুমি শুনবে হেডফোনে ভেসে আসছে,
মাস্টারমশাই অন্তর্দাহ পুড়িয়ে
জেনে যাবেন সব কিছু দেখতে নেই চোখে।
এদিকে, তুমি শুনবে অর্জুনের স্কোর বাড়ছে না।
একদল শয়তান জুয়াড়ি।
অর্জুন তবুও অবিচল, নির্মম তাঁর
মাছের চোখে চোখ রেখে
রিভার্স সুইংকে প্রতিফলনে বিঁধছেন তিনি –
আসলে তিনি আবহমান সৈন্য
হরিপদ কেরানি, কিংবা বঙ্কিমের চা-এর দোকান
অথবা ভবানীদার ডকে ওঠা মুদির দোকান।
অফস্টাম্পের বাইরের বল, তাঁকে
শিখিয়ে দিয়েছে লোভ সংবরণের ধৈর্য্য। তিনি জানেন
ফ্রন্টফুট একটা সরু ষড়যন্ত্র
সামান্য এসপার ওসপারে ভয়ংকর ফাঁদ
বা, উড়ে যাওয়া বসন্তবাতাসের দিকে।
যদিও তিনি জানের জীবন ও মৃত্যুর মাঝে,
যেটুকু দোল পুর্ণিমা ঠিক ততটাই বিদ্যুৎ বিভ্রাট৷
তাই হয়তো, সমস্ত ভ্রমণের শেষে
তাঁর স্কোর শূন্য, রেটিং নিল, হাতের
তিনি দেখছেন লম্বা রেললাইন পেরোলেই
পৃথিবীর শেষ স্টেশন।
সলিল চৌধুরীর স্পেস শিপ...
নেমে যাওয়ার গাঢ় সংকেত।
অসাধারণ ককটেল। ক্রিকেট আর জীবন দর্শনের। 'এই রোকো, পৃথিবীর গাড়িটা থামাও ' আর চিরন্তন অর্কেস্ট্রা।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ নিলয়। যাঁরা কমেন্টে লিখেছিলেন অপেক্ষায়, তাঁদের মধ্যে কে কে পড়লেন জানার আগ্রহ হচ্ছে খুব।
উত্তরমুছুনঅর্কেস্ট্রার সুরের মেলবন্ধন মুগ্ধ করলো..পৃথিনীর গাড়ি বিভিন্ন স্টেশন পরিক্রমা করে প্রান্তিক স্টেশনে পৌছালো কবিতার ট্র্যাক ধরে যথারীতি দুরন্ত গতিতে 😍😍
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে কিন্তু আপনার নামটা জানা হল না, অজানা পাঠক
মুছুনবাহ! কত দিন ছুঁয়ে গেলে,পুরাণ থেকে বর্তমান। মেটাফোর এর ব্যবহার মুগ্ধ করল।
উত্তরমুছুনচয়ন'ভাই সমীপেষু,
উত্তরমুছুনএমন অর্কেস্ট্রার পাশে বসে থাকা যায়--ঘন্টার পর ঘন্টা! মন শুধু অজানিতে বলে
ওঠে : ' কেয়াবাৎ...'
'বিপন্ন ব্যাকরণ', -এর পাশে সবাই বসে আছি,সত্যি! 'কপিবুক খেলো', 'অর্জুনের স্কোর বাড়ছে
না', 'সলিড ডিফেন্স', 'রিভার্স সুইং', 'অফস্টাম্পের বাইরের বল', 'ফ্রন্টফুট', 'স্কোর শূণ্য '--
এইসব ক্রিকেটিয় পরিভাষাকে, কবিতার শরীরে মিশিয়েছেন অসামান্য দক্ষতায়। দিনের শেষে কবিতাটিও পৌঁছে গেছে ১০০ স্কোরের উচ্চতায়।
কে যেন বলেছিলেন : সংকেত নেই যার, সে কবিতা সামান্য গিয়েই নিভে যায়। এ কবিতা চিরজীবী ; জীবনদর্শনের প্রগাঢ় ছোঁয়ায় লেগে ঝলমল করছে।
*'অন্ধদিবসকে ঢেলে দাও পরিশ্রমের সুরাপাত্রে'
*'কৃষ্ণের হাত-রিক্সায় বসে অর্জুন'
*'ফলহারিণী অমাবস্যার ভিতর'
*'ফ্রন্টফুট একটা সরু ষড়যন্ত্র'
*'যেটুকু দোল পূর্ণিমা ঠিক ততটাই বিদ্যুৎ বিভ্রাট'
*'সলিল চৌধুরীর স্পেস শিপ' ("পৃথিবীর গাড়িটা থামাও...")--এইসব চিত্রলতা বাংলা সাহিত্যে 'গীতার বাণী'-র মতোই থেকে যাবে চিরকাল।
চন্দ্রনাথ শেঠ