রাজদীপ ভট্টাচার্য
কুয়োতলা
(১)
গভীর কূপের মতো পড়ে আছি তোমাদের চোখের আড়ালে। সারা গায়ে থরেথরে শ্যাওলা ও সময়ের ছায়া জমে আছে। কোনোখানে জল নেই অথচ জলের দাগ শরীরের প্রতি ভাঁজে ভাঁজে। এ আমার নিজস্ব বসবাস রীতি, জানি যার সবই ভুল সবটাই ফাঁকি। সভ্যতার আঁচ হতে বহু দূরে দু'পা মুড়ে মাথা গুঁজে রয়েছি একাকী। তোমাদের ভোর হয় সারাদিন হাজার ব্যস্ততা শেষে অন্ধকারে সেতু বেয়ে নেমে আসে ঘুম। আমার এখানে শুধু জেগে থাকা, দু'চোখের কোণে চুপে ছায়া জমে অগাধ নিঝুম।
(২)
একদিন এখানেও ছিল ভিড়, সমাবেশ, সমূহ কল্লোল। গ্রামের মেয়েরা ভীরু শাড়ির আঁচলে বাঁধা গোপন কথাগুলি বলে যেত আমার গভীরে। হাসিমুখে কলসীতে দিয়েছি দু'হাত ভরে তৃষ্ণার জল। আলোর বাটিতে সেই ঝুঁকে পড়া মুখগুলি চিকচিকে নাকছাবি তারা। আমার গভীরে এসে ভেঙে যেত পলকেই জলছবি মুকুরের পারা। তবু বেশ বিনিময় দেওয়া-নেওয়া হাসি আর কথা ছলছল। সেইসব মনে রেখে আকাশ উঠতো সেজে অন্ধকারে নক্ষত্রসকল।
(৩)
কেউ কি আসেনি কাছে? তা কি হয়! পেতেছি যে সুগভীর ফাঁদ। মাঝরাতে ঝাঁপ দিল যে বধূটি ঝনঝন ভেঙে গেল দ্বাদশীর চাঁদ। আমাকে চেয়েছে মনে, তাকে কি ফেরাতে পারি! তবে পাপ রাখবো কোথায়? বুকে টেনে নিয়েছি নিমেষে সেও মুখ গুঁজে দিয়েছে সোঁতায়। শোক-তাপ ধুয়ে মুছে রেখেছি গভীরে তবু পড়েছে এলায়ে। পরিশেষে একদিন সব নারী ভেসে যায় এ নিয়ম সকল খেলায়।
(৪)
অঙ্গুরীয় খসে গেছে তোমার হাতের থেকে আমার গভীরে তাকে যত্নে রেখেছি পলি-বালি চাপা দিয়ে। কোনদিনই যথাযথ মাপের ছিল না তা। শ্যাওলাও জমেছিল দুজনের মাঝে ঘন অগাধ পিছল। অবশেষে শুকনো পাতার মতো ঝরল যা মৃণাল আঙ্গুল হতে টুপ্। আমিও বলিনি কিছু তুমিও বলনি মুখে দুজনাই একদিন হয়ে গেছি চুপ।
(৫)
উষ্ণ বাতাস বয়, দীর্ঘশ্বাস মুছে যায় ক্রমশই ফিকে হয় প্রাচীন প্রলাপ। ইতিউতি জেগে থাকে পাথরের গায়ে কিছু কলসের সুগভীর ঘন গোল ছাপ। কলস, কলস মানে মুঠোয় কোমর আর টলটলে চলার গতি। প্রতি পায়ে চৈ চৈ চলকায় জল তাই ভিজে যায় ডুরে শাড়ি ঘরে ফেরা নদী। পথে পড়ে থাকে শুধু কবেকার অভিজ্ঞান আলতার দাগ। নূপুরের ধ্বনি ক্রমে মিলায় বাতাসে দূর পশ্চিমে বাজে শ্যামকল্যাণ রাগ।
(৬)
আজ আর জল নেই বুক জুড়ে জমে আছে বালি ও পাথর। তবুও জলের শব্দ কোথাও তো বেঁচে থাকে, ম্রিয়মাণ আতরের গন্ধের মতো টের পাই চেতনার অন্তর্গত প্রবাহে। কারা যেন আসে যায়, তবু কেউ চেয়েও দ্যাখে না এই বাতিল কূপের গর্ভে জমে থাকে অনর্গল ক্ষয়। চাঁদও রাখে না মুখ, মুখচ্ছবি; শুকনো পাথরে আজ আর নেই সর্বনাশ, মরিবার ভয়।
খুব সুন্দর একটা সিরিজ
উত্তরমুছুনবেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর লাগলো ।
উত্তরমুছুনবসে রইতে চুপটি করে,,এমন লেখার গভীরে!
উত্তরমুছুনবার বার পড়লাম,আশ মিটলো না! এমন ভাবনা কে এমন লেখাকে শতবার কুর্নিশ!!!
রইতে হয়***
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগল
উত্তরমুছুনসবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের ভালোলাগা আমার পরম প্রাপ্তি।
উত্তরমুছুনকুয়োতলা। যেন গভীরে যাওয়ার ডাক। রাজদীপের স্বকীয় ডিকশনে এক অনবদ্য চিত্রকল্প।
উত্তরমুছুনচারিদিকের কোলাহল ছাড়িয়ে এক স্নিগ্ধ কোনো স্নেহমাখা এই কবিতাগুচ্ছ। কী সুখ যে এই লেখা পড়ে! খুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনসুদূরপ্রসারী ব্যাপ্তি এই কাব্যভাষার!
উত্তরমুছুনসব কবিতা গুলি আজ শেষ করলাম। প্রতিটি কবিতাই স্বকীয় ও
উত্তরমুছুনঅপন ধুনে মগ্ন। আলোর বাটিতে সেই ঝুঁকে পড়া মুখ গুলি চিকচিকে নাকছাবি তার.. কি অপূর্ব কল্পনার মুগ্ধ করেন কবি। কবিতার কাছে আসি বার বার ফিরে আসি। অথচ কবি নিজেকে প্রশ্ন করেন কেউ কি আসেনি কাছে.. এবার কবিতার মধ্যে শব্দের ধ্বনি র গুঞ্জন শুনন
ঝনঝন ভেঙে গেল দ্বাদশীর চাঁদ! প্রতি পায়ে চৈ চৈ চালকায় / জল তাই ভিজে যায়.. যত পড়ি ততই খুঁজে পাই কবির শব্দের ব্যবহারের অপূর্ব সেতার ধ্বনি
পাঠক বন্ধুদের ভালবাসা অনেক উৎসাহ দেয়। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
উত্তরমুছুনসরল অথচ সুগভীর। খুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর প্রতিটাই
উত্তরমুছুন৬টি লেখাই চমৎকার। মরমী এক আত্মবোধের জন্ম দেয়। নিজেকে খোঁজার ও বোঝার প্রয়াস জারি থাকে।
উত্তরমুছুনপ্রতিটি কবিতাই খুব সুন্দর। সহজিয়া ভাষায় মরমী প্রকাশ। অনেক শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুনভালো লাগল। প্রতিটাই খুব সুন্দর।
উত্তরমুছুন