দেবাশিস ঘোষ

 


স্বর্গের সীমান্ত শেষে

এস্কেলেটর বেয়ে জলের দ্রাঘিমা ছুঁয়ে দেখি
শীত শীত কষ্ট বোধ জ্বলে আছে
          সিগারেট কাউন্টারের মতো
কতটা ব্ল্যাক হোল পুষে রেখেছি পকেটে
নিজেকে গিলেই নিজে জেলুসিল গুঁজে
আরেকটু রোদ মাখা শেষ বিকেলের
রোজ এই হেঁটে যাওয়া
গাছেদের সাথে কিছু চোখাচোখি, কথাকথি
গির্জায় যিশুকে দেখে কষ্ট হয় খুব
পেরেকবিদ্ধ আরো কত যুগ তাকে রাখবে ঝুলিয়ে?
আর সে মায়ের বুকে? মা মারীয়ার বুকে?
বয়ে যায় গলন্ত লাভা!
শুকনো হাওয়ার মতো ঘুরে ঘুরে
গলিত দ্রাঘিমা থেকে পাথরের পাখি উড়ে যায়
অ্যালবাট্রস।
নাবিকের গলা থেকে ঝুলে থাকে
অ্যালবাট্রস।
ব্যাবিলনে উদ্যান আর থার্ড ডিগ্রির আসামী
কে তাকে নামিয়ে আনে, অ্যালবাট্রস?
ছায়ার রেশন দ্যায় কাকে রোদ?
কার বুকে জন্ম নেয় দশহাজার পরী!
ছন্নছাড়া এক ছছায়
কুড়িয়ে কুড়িয়ে চলে প্লাস্টিক জঞ্জাল
একদিন তার বুক খোঁড়াখুঁড়ি করে
আশ্চর্য উদ্ধার করি, সোনার এক পরী
কেউ তাকে দেখেনি কখনও
অবশেষ রোদ নিভে গেলে
সে পরীকে কোনওদিন দেখাই হতো না
‘হাজার বছর আমি পথ হাঁটিতেছি’
দু'পাশে মাংস, গ্রিল, সবজির দোকান
ছায়ারাও হেঁটে চলে সামনে-পেছনে
রোদ্দুর বিষাদ আনে পশ্চিম থেকে
হুইলচেয়ারে ছেলে নিয়ে যায় বাবা
দু’পায়ে নোঙড় গাঁথা অসাড়তা
জলের দ্রাঘিমা কেটে ক্যাপ্টেন পিতা
তাকে নিয়ে যেতে চায় মাটির ছোঁয়ায়
জলের পৃথিবী!
শেষতম গাছ থেকে অক্সিজেন শ্বাস
অস্ত্রের ভাণ্ডার শেষে বুদ্ধর মুখোশ কিনে তিনি
সকলের বাড়ি বয়ে পৌঁছে দেন শুভেচ্ছালিপি
এসময় বৃষ্টি নামে হা হা হো হো শব্দ ছিটকায়
নক্ষত্র ফেটে পড়ে বিশহাজার চেলোর চিৎকারে
ফুরোলো তোমার পিতা ও হুইলচেয়ার
প্রতিবেশী ঘর থেকে থালা আসে সাড়ে দশ দিন
তারপর দ্রাঘিমা ভেঙেছে জল গ্যালাক্সি সমান
দু’পাশে ঝুঁটিবাঁধা ঝকঝকে স্কুল ফ্রক
দেখেছি তোমাকে
আমার পাড়ার রোগা রিতমের সাথে
একদিন ফের দেখা অবুঝ কিশোরী
শরীরে ক্ষয়ের ছাপ চোখে ভরা রাত
একা একা। শীত ধরে।
জলের পৃথিবী!
ক্যাটামেরনে ভেসে ভেসে একদিন স্বর্গের গেট ছুঁয়ে ফেলি
অনধিকারীরা সেখানে পৌঁছতে পারে না
তাই দৃষ্টিহীন জেগে থাকা গেট কে সরিয়ে
ঢুকেছি অমৃতলোকে
দেয়ালের গায়ে লেখা কেষ্ট+রাধা
কোথাও পোষ্টার সাঁটা – স্বৈরাচারী ইন্দ্রকে হঠাও
এসব দেওয়াল-লেখ দেখে, তির চিহ্ন বরাবর এগিয়ে গিয়েছি
দু’হাজার ছাব্বিশটি টানেল।
শেষে ছিটকে পড়েছি এক অন্তহীন শূন্যের ভিতরে
সেই থেকে আজও শুধু পড়েই চলেছি
থামার স্টেশন নেই কোত্থাও
শরীর হারিয়ে শুধু গতিটুকু আমি
ছুটেই চলেছি এক অন্তহীন আলোর সাগরে





মন্তব্যসমূহ

  1. দীর্ঘকবিতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তার অন্তহীন প্রবাহ। দৃশ্য থেকে দৃশ্যে সরে এসেছে বারবার। দ্রাঘিমা বদলেছে, ক্যাটামেরনে ভেসে গেছে , উড়িয়ে দিয়েছে অ্যালবাট্রস। তবু এক আশ্চর্য গতিময়তায় হাজার বছর হেঁটে গেছে এ কবিতা।

    উত্তরমুছুন
  2. খুব কঠিন দীর্ঘ কবিতায় ভালো লাগার বা ইমপ্রেশনের রেশটি শেষ অবধি ধরে রাখতে পারা। খুব দক্ষতায় কবি কাজটি সামলেছেন। চমৎকার সব ইমেজারি, কোনোটিই অতিরিক্ত নয়, যথোপযুক্ত, সুন্দর, আবহ সৃষ্টিতে অবদান রাখতে সক্ষম। ভালো লাগল।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য