সৌমী আচার্য্য


হাড় বলদ

-ন্যাওর রাখ! সব ঢঙের কথা! চ্যালাকাটের এক বাড়ি দিলে সব ঠিক হবে।

-সত‍্যি দেখলাম। আকাশ জুড়ে কালো মিশমিশে মেঘ।বুক ফালা ফালা করে দেওয়ার মতো বাজ জিলকাচ্ছে আর চরণ কাকার বড় মেয়ে দুই হাত তুলে নাচছে ওর পা নেই। মাজার পর থেকে শুধু উলুর ঝুলুর ন্যাকড়া।চোখ দুটোতে কান্না।ওকে পেত্নি ধরেছে।

-দ্যাখ পরাণ দিনরাত খাটতে খাটতে শরীরে আর কিছু নেই আমার।এই সব কথা রাখ।দুটো খেতে দে শান্তিতে।

পরাণ ঘাড় গোঁজ করে খায়। চিবায়। ছড়ায়।ওর বাবা কেমন যেন কাঠ কাঠ মানুষ।মাকেও বলতে শুনেছে সুমতি পিসিকে,হাড়মাস জ্বালিয়ে খেলো।সারাদিন হাড়ভাঙা খাটনি আর রাতের বেলায় কাঠের গুঁতো। রস কষ নেই দুটো সুখ দুখখের কথা নেই খালি ঠ্যালা।আমার বাঁ দিকের বুকের খয়েরী জাগাটায় একটা ফুসকরি হয়ছে পুঁজ বেরোয় রোজ হাতড়ায় কিন্তু টের পায়না।পরাণ শুনে ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল,তোমার বুকে কি হয়েছে মা!

-কিছু না।

-কাঠের গুঁতা দেয় কেন বাবা!তোমায় মারে?

-না।সব কথা শুনতে নেই বাবা তুমি যাও।

কারোর সাথে ভাব জমে না পরাণের।মা না,বাবা না,দিদি না কেউ না।তিনটে বাঁশঝাড় ওদের বাড়িটা ঘিরে রয়েছে পাঁচিলের মতো। টালির দোচালায় দুটো ঘর।একটায় মা বাবা,আরেকটায় পরাণের দিদি শোয়।ও থাকে একফালি খোলা বারান্দায়।উঠোন পেরিয়ে কলপাড় আর পায়খানা।তারপাশে চট দিয়ে ঘেরা জায়গা।পরাণের মা,দিদি ওখানে যায়।ও যায় কলপাড়ের পিছনে কাঁঠাল গাছের পাশে।চট দিয়ে ঘেরা জায়গাটায় গেলে বমি ঠেলে আসে ওর।আজকাল ওর দিদি পূজা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে।কাউকেই বিশেষ পাত্তা দেয় না।তবু রাতে শোবার আগে পরাণ দিদির ঘরে গেল।পূজা তখন বড় ফোনে ঝড় তুলতে ব্যস্ত।মুখ চোখ বেঁকিয়ে ছবি তুলছে।

-এ দি চরণ কাকার বড় মেয়েটার নাম যেন কি রে?

প্রথমে ভীষণ চমকে ওঠে পূজা এই হঠাৎ ডাকে।তারপরেই রেগে যায়,তাতে তোর কি?যা  এখান থেকে।

-বল না দি কি নাম?ওকে পেত্নিতে ধরেছে।

-কি তুলিকে পেত্নিতে ধরেছে?কে বললো তোকে?

-কেনো দেখলাম,পুকুর পাড়ে দুই হাত তুলে নাচছে,পা নেই উলুর ঝুলুর ন্যাকড়া ঝুলছে।

-মাথা খারাপ হলে ওসব করে লোকে।যেমন তুই ছিটাং তেমন তুলি।

-কেন আমি ছিটাং কেন?কি করেছি?

-চুপ কর বলদ।যা রোজগার করিস সব তো বাবার ভয়ে বাবাকে দিয়ে দিস।নিজের জন‍্য রাখতে পারিস না কিছু যা এখান থেকে।কাজের সময় মাথা খাস না।ভূত পেত্নি এসবে বিশ্বাস করে বলদ কোথাকার।

খুব মুখ করে পরাণকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিল পূজা।কাঠের চৌকিতে শুয়ে অন্ধকার আকাশ বাতাবী লেবু,আম কাঁঠালের ঘন কালো দেখতে দেখতে পরাণ ভাবে এ পৃথিবীতে ঐ কালোর মতো আপন বোধহয় আর কিছু নেই।একেকদিন টুপটুপ করে বৃষ্টি ফোঁটা ঝরা শুরু হয়,ছাঁট আসে খোলা পথে।বারান্দার বাঁশগুলোর সাথে পরাণও অল্প বিস্তর ভিজে যায়।আকাশের কালো গলে গিয়ে সাদা জল হয়।পরাণের কালো শরীর নিংড়েও সাদা নোনতা চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে।ও যেন থেকেও নেই।উনিশ বছরের পরাণ রণজিৎ মিস্ত্রীর সাথে যোগালের কাজ করে।কাজ রোজ থাকে তেমন নয়।তবে পরাণ ফাঁকি খাটে না।টাকনা,হরে,শিবেন কাজের ফাঁকে বিড়ি খায়,মোবাইলে ন্যাংটো মেয়ে দেখে।পরাণের এসব ভালো লাগে না।বড় দুঃখ হয়।আরে মেয়েছেলে কি আর এমনি উদোম হয়?কারণ থাকে বলেই কাপড় ছেড়ে দাঁড়িয়েছে।সবাই হাসে ভালো লাগেনা কিছু।দূরে সরে বসে।আরো দূরে।সরতে সরতে পরাণ এখন বিন্দু হয়ে গেছে।যে কোনদিন মিলিয়ে যাবে।সিমেন্টের কষে হাত খড়খড় করে।খালের জলে,কলের জলে এমনকি বৃষ্টির জমা জলেও হাত ঘষে ঘষে ধোয় তবু খসখসে।ওর বাবা সুখদেব বিশ্বাস ভ্যান চালায়।এখন নেতা দের ধরে করে পঞ্চায়েতের সব মালপত্তর আনা নেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে।কড়া লোক ছেলেকে এখনও সুযোগ পেলেই পেটায়।বৌকে গুঁতায়।মেয়েকে চোখ রাঙায়।পাড়ায় মাতব্বড়ি করে।পরাণ ভাবতেই পারেনা বাবার উপর কথা বলা যায়।তাই ওর ফোন নেই।বাবা বলেছিল,ফোন মানেই খরচ ওসব লাগবে না।ঘটনাটা কি এমন আশ্চর্যের ও এখনো বোঝেনা।মাঝেমাঝে হাফ প্যান্টটা রাতে ভিজে  গিয়ে শরীর ঝাঁকিয়ে ওঠে কেন সেও তো বেশিদিন বোঝেনি।পরাণের চোখ জুড়িয়ে আসে ঘুমে।মেয়েটাকে পেত্নিতে ধরেছে?নাকি মেয়েটাই পেত্নি?মাজার নীচে ছেঁড়া ছেঁড়া ন্যাকড়াটা লতপত করে পুকুর পাড়ের কাদায় লাট খাচ্ছে।ঝেঁপে বৃষ্টি এল।

সুখদেব বিছানায় উশখুশ করতে থাকে।বৌটা একটু বয়েস হতে না হতেই শুকনো হয়ে উঠেছে।বারান্দায় ছেলেটা ঘুমিয়ে গেছে বহুক্ষণ।মেয়ের সাড়াশব্দ নেই অথচ সোহাগী এখনো বাসন খুটুর খুটুর করছে শব্দ পায়।বিড়িটায় শেষ টান দেয় জোরে।ঠোঁটে এসে আঁচ লাগতেই ফেলে দেয়।বৃষ্টিটা বেড়ে চলেছে তবু সোহাগী ঘরে আসেনা।দাঁতে দাঁত চিপে মুখ খারাপ করে সুখদেব।সোহাগী রান্নাঘরে কাজ খুঁজতে থাকে।ভয় করে ঘরে যেতে।এত বছর পরেও।বাঁদিকের বুকের ফুসকুড়িটার চারিদিকে লাল হয়ে উঠেছে খুব ব‍্যথা।সন্ধ্যের পর রোজ ঘুসঘুসে জ্বর আসে।শরীর দুর্বল লাগে।মেয়ে হয়েছে পটের বিবি।কুটো ভেঙে দুটো করেনা কখনো।সারাদিন ফোনে খুটুর খুটুর।টুকে টুকে পাশ করে কলেজে গিয়ে নিজেকে দিগগজ ভেবে নিয়েছে।তার উপর হাবা ছেলে।পড়াশোনায় মাথা নেই,বুদ্ধি নেই।বাবার ভয়ে জড়সড়।মাটি আঁকড়ে চলা ছেলে।কি যে হবে কে জানে।নিজের কপালের উপর রাগে গা জ্বলে সোহাগীর।

-ঐ সুহাগী রান্না ঘরে কি তোর নাঙ এসেছে নাকি?আসব নাকি চ্যালাকাঠ নিয়ে?

মেঘ ঘনিয়ে আসে সোহাগীর চোখে।সব মেঘে বৃষ্টি হয়না।বৃষ্টি হলে মেঘ হালকা হয় উড়ে যায় অনেক দূরে।যন্ত্রণার সোহাগ মনের বাইরের সোহাগ আগুনের মতো শুষে নেয় সব মসৃণতা।চাপা গর্জন,ঘর্ষণ গলা টিপে ধরে ব্যথার।বৃষ্টি থামতে না থামতেই শুকিয়ে ওঠে নিঃস্ব রিক্ত মাটি।যে বৃষ্টিতে বুক ভিজে যায় সেই বৃষ্টি নামে না বহুকাল।

বেশ কদিন পর পরাণ কাজে গেল।কালীপুরের তরুণ চক্রবর্তীর বাড়িতে কাজ।রণজিৎ কে কাকা বলে ডাকে।সেও তুখোড় লোক।দাঁত উঁচু,কুতকুতে চোখের কালো হাবাগোবা পরাণকে খুব ভালোবাসে।কনট্রাক্টরের থেকে চারশো কুড়ি পায় কিন্তু যোগালে পরাণকে সাড়ে তিনশো দিয়ে বলে,কাউকে বলবিনা।তোকে বেশি দিই।তুই সকলের থেকে আলাদা।ফাঁকি দিসনা,বিড়ি খাসনা।ভালো ছেলে তুই।

-তরুণ চক্রবর্তীর বাড়ি কদিনের কাজ?

-কাজ তো অনেক।তুই কতদিন করতে পারিস দেখ।

চক্রবর্তীর ছুঁচিবাই মা কিছুতেই ঘরের মধ্যে দিয়ে নমশূদ্রদের ঢুকতে দেবে না।শেষে ভাড়া বাঁধতে হল।ছাদ চিপিং করতে হবে।পরাণের উঁচু দাঁতের জন‍্য মুখ বন্ধ হয় না হাঁ হয়ে থাকে কিন্তু বুড়ি সেকথা শুনলে তো।

-এমন হাঁ কাত্তিক কোথা থেকে আনিস তোরা?উফ্ দেখ দেখ কি ভাবে তাকাচ্ছে দেখ।সব যেন গিলে খাবে।

-আহ্ মা!ওদের কাজ করতে দাও।এই যাও যাও কাজ শুরু করে দাও।

তরুণ বাবুর করুণায় ছাড়া পায় অপরাধী পরাণ।ভাড়া দিয়ে উঠতে নামতে ভাবে আচ্ছা ভগবান তাকে এমন করে বানালো কেন?সে কেন সবার মতো নয়।ঐ তো দেবশঙ্কর তার সাথে একই ক্লাসে পড়তো।কি চটপট পড়া বুঝতে পারে টকটক ইংরেজিতে কথা বলে।গায়ের রঙ সাহেবদের মতো।আজকাল একটা মোটর সাইকেল চালায়।পরশু কাজ সেরে ফেরার পথে দেখলো ওকে ঘিরে মাঠের মধ্যে ছেলেরা বসে আছে।ও যেন ভগবান ওকে দেখছে মুগ্ধ হয়ে অথবা হাতের মোবাইলটা।হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিল পরাণ এসব দেখতে গিয়ে।হেসে উঠলো ওরা।কেউ এলো না।ঠোঁট কেটে নোনতা স্বাদ পেয়েছিল।

-এ্যাই ছেলে রোদে বসে কাজ করছো জল খাবে?

পরাণ দেখে পেঁয়াজের খোসার মতো এক মহিলা।পাতলা ফিলফিলে।গোলাপি ফর্সা।হাতে জলের বোতল।উদাস চোখে ওকে যেন দেখে মহিলা।পরাণ হাত বাড়িয়ে বোতলটা নেয়,জল খায় বাঁহাতের চেটোতে মুখটা মুছে বলে,ফিরিজের জল তাইনা!বুকের ভেতর জুড়ালো।আপনি যান রোদ থেকে আবার লাগলে চাবো।

মহিলা যাবার সময় এক উদাস দুপুর রেখে যায় ছাদের রোদে।ঘুরে ফিরে আসে।এটা ওটা দেয়।পরাণের ভালো লাগে মহিলাকে।মহিলা বলে,এ বাড়িতে কেউ কথা বলে না।তাই কেউ এলে আমার ভালো লাগে।

-আমরা তো মিস্ত্রী।

হরে বলে,বৌদি আপনি হেব্বি সুন্দর দেখতে।তরুণদার চয়েজ আছে।রাগ হয় পরাণের কিছু বলতে পারেনা।মুখ গুঁজে নেয় হাঁটুর ফাঁকে।হাত চালায় দ্রুত।মহিলা ওকে ডাকে,তোমার নাম কি?

-আমার?পরাণ!

-পরাণ,তুমি রোদ থেকে যেতে বলেছিলে কেন?

পরাণ উত্তর দিতে পারেনা।উঁচু দাঁতের তলায় নীচের ঠোঁটটা সাপটে নেয়।কি করে বলবে,রোদে থাকলে কষ্ট হয়।পিঠের চামড়ার ভেতর জ্বলে যায় পুড়ে যায়।পড়াশোনা করলে হয়তো বাবা তাকেও দিদির মতো ঘরে বসে খাওয়াতো কিন্তু তার মতো মাথা মোটাকে তো রোদে পুড়তেই হবে।নীচ থেকে বুড়িটা চিল্লায়,বামুনের মেয়ে হয়ে নীচু জাতের ছোঁয়াছ‍্যানা করতে ঘেন্না লাগে না তোমার।বড়ঘরের মেয়ের ছিরি কি?মহিলা করুণ মুখে নেমে যায়।

-বৌদির তোকে মনে ধরেছে রে পরাণ।উফ্ কি ফর্সা মাইরী।পেটটা যেন মাখন‌।হরের কথায় গা পাকায় পরাণের।হরে চট করে দুপায়ের ফাঁকে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,ধুর বলদ তোর তো কিছুই নাই।আমার দেখ পেট দেখেই কি অবস্থা।পরাণ ছুটে ছাদের পাশে জলের ট্যাঙ্কের কোণায় গিয়ে বসে পড়ে।কান ভোঁ ভোঁ করে গলার ভেতর কি যেন শক্ত হয়ে আটকে যায়। 

চক্রবর্তী বাড়ি থেকে মন খারাপ করে ফেরে পরাণ।হরের সাথে আর কাজে যাবেনা রণজিৎ কাকাকে বলে এসেছে।ওর মনের স্বচ্ছ পুকুরে আবার মহিলার মুখ ভেসে ওঠে।ওনাকে মা বলেই মনে হয় যদিও কার মা পরাণ জানেনা।মায়েরা একটু কেমন যেন দুখী দুখী হয়।আচ্ছা ঐ বুড়িটা তো তরুণ বাবুর মা ওনার কি কোন দুঃখ আছে?কে জানে হয়তো আছে।সেই দুঃখটা আড়াল করতেই সারাদিন চিল্লায় হয়তো।অতশত বোঝে না পরাণ।মাথার ভেতরটা ফর্সা জমি।আগাছা নেই,ঘাস নেই কিচ্ছু নেই।ও শুধু বোঝে ঐ তরুণ বাবুর বৌয়ের চোখে কান্না আছে।কান্নাটা তুলির চোখেও আছে।ও দেখেছিল।তুলিকে সাইকেল চালিয়ে আসতে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে রাস্তার কোণায় নেমে পড়েছিল মনে মনে বলছিল ভূত আমার পুত পেত্নি আমার ঝি রাম লক্ষ্মণ সাথে আছে ভয়টা আমার কি?ভাবছিলো পেত্নিতে মনের কথা টের পায়?তুলি সাইকেল থামিয়ে বলে,এই পরাণ শোন শোন এদিকে আয়।পরাণ জানে মেয়েটা ওর থেকে ছোট।স্কুলে ওর চেয়ে নীচের  ক্লাসে পড়তো।অবশ্য পরাণ ভাবে পেত্নির আর বয়স কি?ভেবেই ওর গায়ে কাঁটা দেয়।দূর থেকে বলে,কি বলছো বলো।তুলি গায়ের কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে,আমায় পেত্নিতে ধরেনি রে পরাণ আমার মেঘ ভালো লাগে।আকাশের দিকে তাকালে উড়ে যেতে মন চায়।

পরাণ দৌড় লাগায় তুলি চিৎকার করে বলে,বলদ কোথাকার।একটা কথা বলছি শুনতে পারিস না।অকারণে ভয় পাচ্ছিস।দৌড়াতে দৌড়াতে পরাণের মনে হয় ও যেন একটা ছোট্ট বিন্দু।সরে সরে যাচ্ছে আশেপাশের সবাই।আর ও কেবল মিলিয়ে যাচ্ছে আরো দূরে দূরে ঐ নিধু পালের তিনতলা বাড়ির মাথা ছাড়িয়ে।

-কি রে রণজিৎ টাকা দিয়েছে?কি হল কথার উত্তর দিসনা কেন।এক চড় দিলে কথা বেরোবে নাকি?

পরাণ পা মাটিতে নামায়।জামার পকেট থেকে সাড়ে তিনশো টাকা বাবার হাতে দিয়ে ভিখারির মতো চেয়ে থাকে।

-তুই এখনো কাজ শিখে উঠতে পারিসনি নাকি?

-পারি তো।

-তাহলে বেশি দেয়না কেন?চারশো পায় শিবেন আর তুই কম কেন?গাঁজা খাস নাকি?

-না বাবা আমি ভাত খাই।ওসবে বাজে গন্ধ,ধোঁয়া।

-বলদ কোথাকার।এই বয়েসের ছেলেরা সেয়ানা হয়ে উঠেছে আর এই বলদের নাক দিয়ে পোঁটা পড়ে এখনো।

হাতের গামছা হাওয়ায় চাবকে সুখদেব সরে যায়।পরাণ হাত দিয়ে পোঁটাটা মুছে প‍্যান্টে ঘষে।হাত মুখ ধুয়ে চা মুড়ি খায়।তারপর পাড়া টুলাতে যায়।ওর কোন বন্ধু নেই।দূর থেকে সবাইকে দেখে।আড়াল থেকে কথা শোনে।আজ নবদূত ক্লাবের পিছনে যে ভেটুল গাছটা আছে ওখানে সরসর আওয়াজ পেয়ে কৌতূহল নিয়ে যেতেই অদ্ভুত আওয়াজ পায়।কি ভীষণ সুখের আওয়াজ নানা টুকরো কথা শরীরের আলাপ।সরে আসে পরাণ।পঞ্চায়েতের বিল্ডিং পেরোতেই দেখে কয়েকটা সাইকেল আর দুটো ছেলে।

-ঐ ছ্যামড়ি কি বারটাই না বাড়সে।ছোট বড় রেয়াৎ নাই।যে দুইডার সাথে কিলাবের পিছনে গেল দুইডাই ইলেভেনে পড়ে।

-তালি কিচু করি না ক্যান?

-দাদারা কমু নে।তার আগে খাঁড়া নিজেরা চান্স লাগায় নি।

পরাণ ঘাড় গুঁজে ওদের পেরিয়ে যায়।ভেসে আসে শেষ কথা।ছেমড়িডার ভাই না?

-হাড় বলদ ছাড়ান দে।

পরাণের খুব কান্না পায়।বলদ থেকে কি করলে মানুষ হওয়া যায়?পড়াশোনা করলে?কিন্তু পড়তে বসলেই যে জম্মের ঘুম পায়।কোন অক্ষরের অর্থ খুঁজে পায় না কোন কথার মানে বোঝেনা।পা থমকে যায় তারক মাস্টারের বাড়ির সামনে সদ্য লাগানো ঝাউগাছটায়।চরণকাকার বড় মেয়েটা কি যেন করছে দেখতে পায়।রাস্তায় সব ল্যাম্পপোষ্টে আলো থাকে না।কারা যেন ভেঙে দেয় বারবার।আবছা অন্ধকারে মেয়েটা গাছের কাছে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গী করছে।পা চালায় পরাণ।

-বাঁচতে পারবে এতো তোমার জায়গা না বাঁচবে!পারলে বাঁচো।

গাছ কি কথা শোনে?মেয়েটার এখন আবার পা দেখা যাচ্ছে না।নিজের পায়ের দিকে তাকাতে তাকাতে গায়ে কাঁটা দেয়।ওর নিজের পাটাকেও ঠিক পা মনে হয় না।গাছের শেকড় মনে হয়।বাড়ি ফিরে কলপাড়ে পায়ে জল ঢালে ঘষে আকাশে মেঘ নামে ঝাঁকে ঝাঁকে।গায়ে কাঁথা টেনে শুয়ে আছে মা।কাছে গিয়ে ডাকে।

-মা শরীর খারাপ?

-জ্বর।কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াস?বর্ষায় সাপখোপ।

-তুমি দিদিকে বলো মা ও নইলে মরবে একদিন।

-কি কথা এইসব পরাণ।কোন বুদ্ধি নেই তোর।

-না আমি তো হাড় বলদ।সবাই বলে।

সোহাগী বিছানা কামড়ে পড়ে থাকে।বুকের ফুসকুড়ি বড় হয়ে মাংস পিণ্ড ঠেলে উঠছে।গন্ধ লাগে।সুখদেবের কাজের ধরণ বদলেছে।দিনে দিনে হাবভাব বদলে যাচ্ছে।সবার চোখ বাঁচিয়ে কি যেন এনে রান্নাঘরের টিনের বাক্সে ঢোকায়।আবার বের করে নিয়ে যায়।আজকাল ছেলেটাকেও নিয়ে যায় মাঝেমাঝে।পরাণ কেন বললো ওর দিদি মরবে?কিছু হয়েছে নাকি?আজ বাড়ি ফিরলে জিজ্ঞাসা করতে হবে।মাঠ ঘাট ভাসিয়ে বৃষ্টি এল।ভিজে ভিজে ফিরলো পূজা।পরাণের দিকে ফিরেও তাকায়না।ও যেন নেই।সুখদেব ফিরলো আরো রাতে।মদের গন্ধে গা পাকিয়ে এল পরাণের।জ্বরে বেহুঁশ সোহাগী।মেয়ের উপর খানিক চিল্লালো,খাবো কি চিন্তা নাই!সারাদিন টো টো।মায়ের জ্বর দুটো সেদ্ধভাত করতে হয় না,না?মহারানীর মান যায়?

-আজকাল তো তোমার পকেট ভর্তি টাকা নিজে একা না গিলে আমাদের জন‍্যেও কিছু আনতে পারতে।

-বাড়িয়ে মুখ ভেঙে দেব।যা রান্নাঘরে।ভাত চাপা গা।

পূজা গজগজ করতে করতে ভাত চাপায়।বেগুন ভাজে।নুন,লঙ্কা দিয়ে তাই খায় সবাই কেবল মুড়ি জল খাবার চেষ্টা করে সোহাগী পারেনা তারপর সারারাত ছটফট করে বিছানায়।পরাণ শোনে রাতের অন্ধকার কথা বলে।

-পাপ করা ধরলে শেষে।ঐ ওষুধ গুলো নষ্ট তো ওগুলো নতুন বাস্কে ভরো কেনো?

-চুপ কর।আমি বুঝবো কি করবো আর কি করবো না।কি রোগ বাধিয়ে বসলি?কাছে যাওয়া যায় না।এই নীচ অবধি গা পাকায়।শালা নেশা ছুটে যায়।

রোজ বৃষ্টি পরে ঝমঝম ঝমঝম।নেচে নেচে চলে যায় বড়ো ফোঁটার কান্না।তুলি এসে দাঁড়ায় পরাণের চোখের সামনে।দুহাত মেঘের দিকে তুলে বলে,মেঘ দেখবি আয়,আমার সাথে ভিজবি আয়।আমার বুকে বাতাবি লেবুর গন্ধ আছে আয়।আয়,আয়,আয়।পরাণ চোখ বুঁজে কানে হাত চাপা দেয়।বাতাস হাসে হিহিহিহিহি।শোঁওওওও শব্দে বারান্দার বাঁশ ঝিমিয়ে থাকে।একটার পর একটা রাত আরো কালো হয়ে যায় আরো নোনতা,আরো একা।

একদিন সকালে বেহুঁশ সোহাগীকে দেখে নেশা ছোটে সুখদেবের ভ্যানে করে নিয়ে যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।তারপর ট্রেকারে করে শহরের বড় ডাক্তার।টেষ্ট,পয়সার অভাব হাতে পায়ে ধরাধরি তারপর কয়েক দিনের ভেতর সব শেষ।ডাক্তার আঁৎকে উঠেছিল,করছেন কি?কতদিন শারীরিক সম্পর্ক নেই আপনাদের?এই এমন ঘা আপনার চোখে পড়েনি।শেষ করে আনলেন মানুষটাকে।

প্রথম প্রথম পরাণ বুঝতেই পারতো না মা নেই।এমন হয় নাকি?মা নেই অথচ সে আছে।সুখদেবও প্রথমে চুপ করে গিয়েছিল এখন আবার তেড়ে উঠেছে।সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ছেলেকে অন্ধকারে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মা মা করতে দেখে মাথা গরম হয়ে গেল।

-ঐ কি হয়েছে হ‍্যাঁ!তোর শোক যায়না কেন?এটা বাড়ি নাকি কবরেস্তান?ঐ হারামজাদি মেয়েটা কোথায়?কি হল কথার উত্তর দে।

-বাবা,তুমি কাওকে ভালোবাসো না,না!মরার দিন মার চোখ থেকে শুধু জল গড়ায়,আমাকে বলে,মরতে সাধ জাগে না পরাণ বাঁচতে সাধ হয়।কত কষ্ট বাঁচতে বাবা তাও বাঁচতেই চাই।আচ্ছা বাবা মা মরলো কেন?আমি মরলে তো কারো কিছু খতি নেই।আমি বাঁচি কেন?

এই প্রথম ছেলে এত কথা বললো।সুখদেব খানিক থম মেরে থাকে তারপর সপাটে চড় মারে ছেলের গালে।চিৎকারে ফেটে পড়ে।

-বেরো বাড়ি থেকে শালা কুত্তার বাচ্চা!

-কেন বাবা আমি বাড়ি থেকে বেরোলে চন্দনা পিসিকে ঘুরে তুলতে সুবিধা হয়?সবাই বলে তুমি নাকি সেইখানেই যাও।আমি পিসিকে বলবো তুমি মাকে রোজ গুঁতোতে ভালোবাসোনি।বুকের ফুসকুড়ি গ‍্যাঁজলা করে কেনসার করেছো তুমি।আমি সব জানি।

-এত বুদ্ধি বেড়েছে তোমার শয়তান।মেরেই ফেলবো আজ তোকে।

মনে মনে আশ্চর্য হয় পরাণ।কথা বললেই বুদ্ধি বাড়ে?সত্যি বললেই বুদ্ধি বাড়ে?এর চেয়ে সহজ তো কিছু নেই তাহলে।সে আর চুপ থাকবে না তবে।সব বলবে।সব।বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় পূজা।মাথায় সাপের ফণার মতো করে চুল বাঁধা।বুক দেখানো জামা।আর শয়তানি চোখ।সুখদেব হুঙ্কার ছাড়ে,কোথায় ছিলি?

-বুল্টিদের বাড়ি।

-মিথ‍্যে কথা!কিলাবের পিছনে ভেটুল গাছের নীচে ছিলো ছেলেদের সঙ্গে।

চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে পূজার।কি বলছে কি এসব?এক লাফে চুলের মুঠি ধরে টানতে থাকে মেঝের দিকে,কি বললি শয়তান,মিথ‍্যা বলবি না।গায়ের জোর খাটিয়ে পরাণ নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।উঁচু দাঁতে ঠোঁট কেটে গেছে ঝাপটাঝাপটিতে।চোখে জল এসে যায় ওর বড় তাড়াতাড়ি।মা তাকে ভালোবাসতো না কেন?কেন ছেড়ে চলে গেল?কেউ নেই পরাণের কেউ না।কেউ খেতে ডাকে না।পরাণ অন্ধকার খায়।অন্ধকারের ঢেকুর তোলে।অন্ধকারের ভিতর ঘুমায়।ভোরের দিকে হিম পড়তে শুরু করেছে আজকাল।সকালে একাই রান্নাঘরে গিয়ে চা খায়।রণজিতের কাছে গিয়ে বলে,কাজ নাই কিছু।

-আছে তবে বেশি আয় নাই।

-কত?

-আড়াইশো রোজ।

-তুমি হেবি চিটিংবাজ।আমাকে সব সময় কম দাও।আমি নয় বলদ তাই বলে ভগবানকে ভয় খাওনা কাকা!

রণজিৎ চোখ বড় করে তাকিয়ে থেকে তিন লাথি মেরে বের করে দেয়।পরাণ বোঝেনা,বুদ্ধিমান হলে মার খাবে কেন?এতদিন তো কেউ মারেনি শুধু হাড় বলদ বলেছে।কোনটা বেশি অপমানের?পেটের টানে এর ওর বাড়ি কাজের আশায় ঘুরে বেড়ায়।টাকা ছাড়া বাড়ি গেলে এখন শুধু মার জুটবে।মা থাকতে বাবার হাতে পায়ে ধরে অন্তত ডাল ভাতটুকু দেবার ব‍্যবস্থা করতো।নিরাপদ রায়ের বাড়ি কাজ পেল পরাণ।ছাদ,বাথরুম পরিস্কার করে দিতে হবে।বাগানের আগাছা তুলতে হবে।দুশো টাকা দেবে আর দুপুরে ভাত।কাজে ফাঁকি নেই পরাণের সব ঝকঝকে করে দেয়।ডাল,ভাত,করোলা ভাজা খেয়ে আবার কাজ করে।সূর্য ডুবলে হাঁটা লাগায় বাড়ির দিকে।পঞ্চায়েতের কাছে আসতেই দুটো অচেনা লোক আর কিছু গ্রামের মানুষকে দেখে তার দিকে আঙুল তুলে কিছু বলেছে।ঘাড়গুঁজে চলে যেতে নেয় পরাণ।লোক দুটো ওকে দাঁড় করায়।

-তুমি সুখদেব বিশ্বাসের ছেলে।

-হ‍্যাঁ

-তোমার বাবা বাড়িতে আছে এখন?

-জানে কে?আমি তো কাজের থেকে ফিরছি।

-বলছি তোমার বাবা ভ্যান টানা ছাড়া আর কি কাজ করে জানো?খুব দরকার আমাদের একটু যদি সাহায‍্য করো।

-ঐ তো ওষুধ প‍্যাকেটে ভরে।আমাকে নিয়ে যায় যেদিন বেশি কাজ থাকে।

-কোথায় করে কাজ আমাদের দ‍্যাখাবে ওষুধ কিনবো।

-চলুন ঐ তো পঞ্চায়েৎ পোধানের শালার বাড়িতে।

জমে থাকা ভীড় পাতলা হয় প্রধানের নামে। লোক দুটোকে সাথে নিয়ে এগোয় পরাণ।বাড়ির কাছে আসতেই প্রধান আর তার শালা এগিয়ে এসে খাতির করে লোক দুটোকে ভেতরে নিয়ে যায়।পরাণের দিকে চোখ সরু করে বলে,বাড়িতে যা।পরাণের এই চোখ দেখলে ভয় করে।পা চালিয়ে বাড়ি আসে।বুঝতে পারে বাবা বাড়ি নেই ঘরে পূজার সাথে কেউ আছে ঘরে তার মোটর সাইকেল বাঁশবাগানে দাঁড় করানো।রান্নাঘরে গিয়ে মা মা করে ডাকে পরাণ।হাতে মাথা রেখে গুটিয়ে শুয়ে থাকে কুকুরের মতো।চুপিচুপি সময় এগোয়।বিপদের গন্ধ বাড়তে থাকে পরাণ ঠিক টের পায়।বুঝতে পারে বাতাস ফিসফিস করছে।লোকজন,টর্চের আলো,পায়ের আওয়াজ।বিকট শব্দে মোটরসাইকেল ভাঙার আওয়াজ ঘরের দরজা ভাঙার আওয়াজ সব শুনতে পায় পরাণ।পূজার চিৎকার মারধোরের উল্লাস।

-চুল কেটে মাথাটা মুড়িয়ে দে ছিনালটার।সুখদেব কোথায় খোঁজ ওটাকে।আর ঐ হাড়ে বজ্জাত ছেলেটাকে টেনে আন।

রান্নাঘরের বস্তার আড়ালে নিজেকে গুটিয়ে রাখে পরাণ।চিৎকার,জোরে আওয়াজ বেশি লোকে তার বড় ভয় কিন্তু আড়াল থাকে না।ভেঙে পড়ে।

-যুধিষ্ঠিরের বাচ্চাটাকে বুঝিয়ে দে কার উপর আঙুল তুলেছে।শালা প্রধানের শালার বাড়ি পুলিশ নিয়ে যাওয়া।মার শুয়োরের বাচ্চাকে।


মার খেতে খেতে দলা পাকিয়ে যায় পরাণ।পুলিশে খবর দিয়েছিলো কেউ।ভীড় সরিয়ে খাবলা দিয়ে চুল কাটা পূজাকে পেলেও পরাণকে পায়না পুলিশ।ভাঙা বাড়ি ভাঙা রান্নাঘর সব সরিয়ে ছিন্নভিন্ন সংসারের টুকরো টুকরো হিসাব মেলে।সুখদেব খবর পেয়ে টলতে টলতে এসে মেয়েকে জড়িয়ে হঠাৎ সুহাগী ওরে সুহাগী বলে চিৎকার করে কান্না জোড়ে।মারের দাগ,অপমানের জলের দাগ চোখেমুখে নিয়ে নেতিয়ে পড়া পূজা বলে,বাবা,!ভাই!

-পরাণ ও পরাণ।

এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে পরাণকে।প্রতিবেশীরা অনেকেই পরাণকে মারের বিষয়টা ভালো ভাবে নেয়না।কিন্তু আঁশটে ভয় সবার মনেই।ছেলেটাকে মারতে মারতে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল দেখেছে অনেকে কিন্তু পূজার দিকে মনোযোগ দিতেই সবার আগ্রহ ছিল।তাই শেষটা কেউ লক্ষ‍্য করেনি।পুকুর পাড়ের অন্ধকারে অনেক রাতে চোখ খুললো পরাণ।ওর উঁচু দাঁত উপড়ানো।হাত পা আছে কি না কে জানে?ছোট ছোট চোখ একটু ফাঁক করে দেখে তুলি ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে।

-আমি জানতাম প্রাণে বাঁচলে তুই পালিয়ে এই খানেই আসবি।ঐ দ‍্যাখ মেঘ জমছে বৃষ্টি এল বলে।চল ওঠ।হাত তুলে চেয়ে থাক আকাশের দিকে সব কষ্ট শেষ।আয় ওঠ।

পরাণ উঠতে পারেনা।ভয়ে গায়ে কাঁটা দেয়।তুলি খোলা চুল ঝাঁকিয়ে বলে,সত‍্যি কথা গোপন করতে হয় আমি জানি তুই জানিস না!আমি কাউকে বলিনি কখনো আমার সারা শরীর জুড়ে অজস্র শুঁয়োপোকা ছেড়ে দেয় আমার নিজের জ‍্যেঠা।সেই ছোট থেকে।বাবাকে মাকে বললেই মারে।আমরা তো জ‍্যেঠার দয়ায় বাঁচি।বাবার হাত নুলো।মা সারাদিন সংসারের ঘানি ঘোরায়।মাঝেমাঝে আমায় নেড়েঘেঁটে জ‍্যেঠা খরচা উশুল করে রে পরাণ।আমি সত‍্যি বলতে গেলেই মার খাই।সত‍্যি কথা বলতে নেইরে।লোকে টিকতে দেয়না।আমার পা আছে আবার নাই।চোখ থাকলে দেখা যায় আমি আসলে উড়ি।তুই দেখেছিলি একবার কারণ তুই আমার এইখানটা দেখেছিস।এই খানটা আসল আমি।বলে নিজের বুকে হাত রাখে তুলি।ওর অনর্গল কথার মাঝে আকাশে বিদ‍্যুৎ ঝিলকে ওঠে।পরাণ অসহায়ের মতো বলে,আমি তালে কোনদিন মানুষ হতে পারবো না।আমি কোথাও নেই,কোথাও না। 

-কে বলে নেই।আছিস।শুধু দেখবি,বুঝবি কিন্তু বলবি না।

-আমি তালে কি?

-কেন হাড় বলদ।

খ‍্যানখ‍্যান করে তুলি হাসে।পরাণ দেখে তুলির মাজার পরে শুধু জ‍্যালজ‍্যালে কাপড় আকাশের দিকে উড়ছে তুলি আর নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে শেকড় গজিয়ে গেছে।তুমুল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একটা আস্ত গাছ হতে থাকে পরাণ।

 



মন্তব্যসমূহ

  1. কঠোর বাস্তব নিয়ে লেখা গল্পটা দারুণ লাগল।

    উত্তরমুছুন
  2. ভালোবেসে এভাবেই সাথে থেকো

    উত্তরমুছুন
  3. দুর্দান্ত লেখা। ভীষণ ভালো।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বহুদিন পর তোমার মন্তব্য পেয়ে খুব খুশি হলাম

      মুছুন
  4. কিছু বলার ভাষা নেই আমার। অসাধারণ লেখা।

    উত্তরমুছুন
  5. অসাধারণ! অসাধারণ! কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয় এ গল্পের।

    উত্তরমুছুন
  6. লেখনশৈলী খুব ভালো। খুব প্রচ্ছন্নভাবে হলেও পরাবাস্তবতার একটা হালকা ছোঁয়া পেলাম। অনেকখানি ভালোলাগা। অনেক শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য