হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


 দানা সিরিজ



দানা আসে। বাড়ি কোথায় জানি না। দানা উৎসব। পাঁচমহলায় দানার কোনো সাড়া নেই। জানলা খুললে অনেক নীচে থেকে দানা উৎসবের গান ভেসে আসে। দুপুরের পাঁচমহলায় বিভিন্ন কোণে দানা হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যায়। ন’মাসে ছ'মাসে ছুটি পেলে দানা খোলা মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে। কোভিডের ফার্স্ট ডোজে দানার নাম নেই। 





আমরা বেশিরভাগ সময়েই সদর দরজায় সোজা হতে পারি না। গভীর রাতে মাঝে মাঝেই খিড়কি দরজায় ডাক পড়ে। কোনো কোনো দিন পৌঁছে দেখি পুকুরও চোখ পিটপিট করছে। দানা বাবার চেনা। বাবা বলেন, এমন অন্ধকারেই দানার কার্যকারিতা। বাবার মুখ দানায় দানায় মুখর। তখনও আমি হাতড়াই। বাবা উঠে এসে চোখের চামড়ায় টান দিতেই ঝরঝর করে দানা ঝরে পড়ে।





ঘোরার কোনো ঠিক থাকে না। সারাদিন এখানে ওখানে ঘোরাঘুরির পর সন্ধের কোলে বাবা ঘরে আসে। পিছন পিছন দানা। অনেক দূরে দেখতে পাই একটা টেবিল। আগেও দেখেছি কিন্তু দাঁড়াবার জায়গা খুঁজে পাই নি। আমাদের যে চেয়ার আছে জানতাম না। বাবা দানার সঙ্গে কথা বলতে বলতে চোখের ইশারা করে। দেখি দানা নক্ষত্র বোঝাচ্ছে। সারা বাড়ি জুড়ে একটা অদ্ভুত গন্ধ, যেন কোথাও কিছু পুড়ে যাচ্ছে। 





দানার গল্পের বীজের মতো বাবার চোখ দুটো। কথা বলতে বলতেই কখন যে আগুন ধরে যেত বুঝতে পারতাম না। চোখ যখন দাউ দাউ তখন মাথার আকাশটা অন্যান্য দিনের চেয়ে আরও দূরে চলে যেত। বাবার কথাগুলো দৈব্যবাণীর মতো শোনাত। আমরা বুঝতে পারতাম কোথাও আমাদের একটা ফাঁক থেকে গেছে। দানা থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে আর তাই আগুনের উত্তাপ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। 






মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য