পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সম্পাদকীয়

ছবি
'আত্মপ্রকাশ 'সংখ্যা দিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর একে একে  'পর্ণমোচী ',' রাবীন্দ্রিক','অসময় ' হয়ে 'হিমকথা '।থমকে গেল।আমরা বুঝলাম ব্লগজিন প্রকাশনা পথে মোটেই ফুল ছড়ানো নেই, বরং কাঁটা বিছানো।  কিন্তু ঐ যে সুমনের গান--'হাল ছেড়ো না বন্ধু... '।তাছাড়া মহাকবি শেক্সপিয়ার তো কবেই তাঁর 'A Midsummer Night's Dream ' নাটকে বলে গেছেন --- "The course of true love never did run smooth. " অতএব সাময়িক দ্বিধা -দ্বন্দ্ব কাটিয়ে, বিভ্রান্তি পেরিয়ে আবার যাত্রা শুরু।  এখনও অসুস্থ পৃথিবী। দেশে দেশে ভাইরাস ত্রাস।দ্বিতীয় ঢেউ স্তিমিত হতে না হতেই তৃতীয় ঢেউয়ের উঁকিঝুঁকি। কাছে দূরে কত প্রাণ চলে গেল অকালে। জানি না পৃথিবী আবার কবে সুস্থ হবে।আবার কবে মুখোশ খুলে রেখে প্রাণ ভরে নেব শ্বাস। ঋষি তুল্য কবির কথায় ---- 'আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। /তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে। ' তাই আবার আমাদের যাত্রা আয়োজন। আবার দুঃসাহসী ডানা মেলা। 'বাতিঘর ' যারা আলোকিত রাখে তারা সমস্বরে গুগল মিটে বলে -- 'আয় সবে বেঁধে বেঁধে থাকি '...ব্যাস।...

রাণা রায়চৌধুরী

ছবি
 রোদ পড়ে আসে তোমার ভিতর যে ধীবর জাল ফেলে রোজ, আড়ালে চুপে, তুমি টের পাও? সে মাছের বদলে তোমার আনমনা চুলের কাঁটা জালে তোলে? তোলে তোমার হেমন্তকাল!   টের পাও তুমি? পেলে কিভাবে পাও? বোঝো যে ঘুমের মধ্যে মাথায় বালিশ নেই, প্রিয়জনের মৃত্যুর মতো মাথার বালিশ শ্মশানের অন্ধকারে নিভে গেছে।   টের পাও? আসলে জাল ফেলে যে ধীবর তোমার শরীরে, মনে, সে আর কেউ নয় সে তোমার প্রাসঙ্গিক নিকটবাতাস, সে তোমার জগততরঙ্গ। বাদ্যযন্ত্রময় বাথরুমে তোমার চুলের কাঁটা মাছ হয়ে সাঁতার কাটে।   এই তোমার বিভিন্ন বিকেলপায়চারি আমি লিখে রাখি আমার নিজস্ব জলে ও আড়ালতরঙ্গে।

অংশুমান কর

ছবি
  বর্ষায় –বসন্তে ও তোমাকে ছুড়ে দিয়েছিল একটা ফুল। আমি দেখেছিলাম। –বা রে! ও একটা ফুল দিলে আমি নেব না? আমি তো দিইনি ফুল, তাই না? –কেন জল ছিটিয়ে দিল আজ? –জল ও ছিটিয়ে দেয়নি, ছেটালো তো হাওয়া। –ও ঝুঁকে পড়েছে তোমার দিকে। কিন্তু তুমি মানবে না তা। –মানে বয়েস হচ্ছে। মানে শরীর বেঁকে যাচ্ছে ওর। –সবসময় ঠাট্টা। –রেগো না প্লিজ, অভিমানিনী রাধা।   একটা পলাশ গাছকে নিয়ে রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়ার এই সংলাপ শুনে ফেলল যার সঙ্গে ছাদ অনেকদিন কথা বলে না সেই কার্নিস। তার চোখের কোণ থেকে জল ঝরে পড়ল এক ফোঁটা।

তৃষ্ণা বসাক

ছবি
  ওকে ফিরিও না লাইব্রেরি ঘুম  ভাঙ ল , লাইব্রেরি ? সারারাত তোমার বাগানে ,  দাপিয়েছে ঝোড়ো হাওয়া, অশোক গাছের ফুল উড়ে উড়ে চোখে ঢুকে গেছে, আমরা যারা বৃক্ষটির কাছে করজোড়ে  প্রা র্থনা করেছি - ফাঁক হও হে বৃক্ষদেবতা, আমরা  লুকোই, তারাও আড়াল থেকে দেখেছি ঝনঝন   তরবারি ...   দেখেছি মেঘের রক্ত কুর্চি ফুলে লেগে, ভিজে পাতা মাড়ানোর শব্দ  হয় না , তাই তুমি জানতে পারোনি, বজ্র বিদ্যুৎময়  রাত্রি শেষে শান্ত প্রভাতে , তোমার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে এইমাত্র , যে তোমার প্রথম পাঠক, দরজা খোলো, লাইব্রেরি, ওকে ফিরিও না।

নিলয় নন্দী

ছবি
  দুপুর ল্যান্ডস্কেপ ইহকাল পরকাল আর শরীরী কিউমুলোনিম্বাস জানালার পর্দা উড়ে গেলে জোড়া মালভূমি শুদ্ধসারং  দরস বিন লাগে দুখন জিয়া... এখন দুপুর। বালিশ জুড়ে মায়া। যামিনীপ্রস্তাব। রাস্তা জুড়ে হেঁটে যায় একমাথা কোঁকড়ানো চুল তানপুরা সন্ধানী চশমা আর আলসে সাইকেল। সের পোয়া ছটাকে মেঘ মেপে যায়  বারিধারা জামার বোতাম। খুলে দিলে অকুস্থলে ডুব। ডুবুরি চিনেছে সেও... আড়চোখে দেখে নেয় রাস্তা পারাপার।  দুলে যাচ্ছে সবকটি জানালা, ওপারের ভায়োলিন।  আষাঢ় পেরিয়ে যায় শ্রাবণ নিরুপায়  শুধু মেঘ। মেঘের অভিমান। অনুতাপ, পিছুটান।  পাখিও মেঘাচ্ছন্ন আজ  আড়বাঁশি হারিয়ে গেলে হারিয়ে যায় নদীর রাস্তা  কতটুকু দৃষ্টি বিনিময়! কতই বা আয়ু! চুম্বন যৌনতা ফ্যান্টাসি বলয়ে ঢুকে গেলে বৃষ্টিতে ভেসে যায় দুপুর ল্যান্ডস্কেপ...  ভেসে যায় রাধাচূড়া, শ্যাম সাইকেল, কাল্পনিক সংলাপ 

চয়ন ভৌমিক

ছবি
অর্কেস্ট্রা    বিপন্ন ব্যকরণের পাশে বসে আছি। ' ' কপি বুক খেলো '   বলছে   সময়। দায় বলছে ‘কর্ম করে যাও’; রাতকে, এগিয়ে দাও দিনের দিকে ,   আর অন্ধদিবসকে ঢেলে দাও পরিশ্রমের সুরাপাত্রে । গীতার দীর্ঘজীবী বাণী এসব , অমৃতকথন। যেন কৃষ্ণের হাত-রিক্সায় বসে অর্জুন চলেছেন কুরুক্ষেত্রের ময়দানে।   লড়াই হবে নিজের   সাথে নিজের , ছায়াবাজির সমস্ত তির উড়ে আসবে ধর্মরাজের দিকে। উড়ে আসবে গলা টিপে ধরার নির্মম আঙুল , ঈগল , হোটেল ক্যালিফোরনিয়া। কিন্তু ফল পাবে না অত তাড়াতাড়ি। ফলহারিণী অমাবস্যার ভিতর সমস্ত ফল বিসর্জিত যেন । এভাবেই ধৈর্য অপেক্ষা করবে কারখানার জ্যান্ত জীবনে , শীতল দেওয়ালের ইটে ঝুঁকে পড়বে পাঁচ সেলের জোরালো আলো, নিঃশব্দ পায়ে ফিরে আসবে – অতীতকালের স্মৃতিসঙ্গীত, মিছিলের চোয়াল । পল সাইমন শব্দের ঠান্ডা গলায় নামিয়ে আনবে, গভীর রাতের নির্ঘুম সুর। তুমি শুনবে হেডফোনে ভেসে আসছে , খসখসে গলার হিমবাহ শাসানি , ভয় দেখানো চোখ ছিঁড়বে তোমার স্নায়ু। মাস্টারমশাই অন্তর্দাহ পুড়িয়ে জেনে যাবেন সব কিছু দেখতে নেই চোখে। এদিকে, তুমি শুনবে   অর্জুনের স্কোর বাড়ছে না। তা...

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ছবি
  দানা সিরিজ ১ দানা আসে। বাড়ি কোথায় জানি না। দানা উৎসব। পাঁচমহলায় দানার কোনো সাড়া নেই। জানলা খুললে অনেক নীচে থেকে দানা উৎসবের গান ভেসে আসে। দুপুরের পাঁচমহলায় বিভিন্ন কোণে দানা হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যায়। ন’মাসে ছ'মাসে ছুটি পেলে দানা খোলা মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে। কোভিডের ফার্স্ট ডোজে দানার নাম নেই।  ২ আমরা বেশিরভাগ সময়েই সদর দরজায় সোজা হতে পারি না। গভীর রাতে মাঝে মাঝেই খিড়কি দরজায় ডাক পড়ে। কোনো কোনো দিন পৌঁছে দেখি পুকুরও চোখ পিটপিট করছে। দানা বাবার চেনা। বাবা বলেন, এমন অন্ধকারেই দানার কার্যকারিতা। বাবার মুখ দানায় দানায় মুখর। তখনও আমি হাতড়াই। বাবা উঠে এসে চোখের চামড়ায় টান দিতেই ঝরঝর করে দানা ঝরে পড়ে। ৩ ঘোরার কোনো ঠিক থাকে না। সারাদিন এখানে ওখানে ঘোরাঘুরির পর সন্ধের কোলে বাবা ঘরে আসে। পিছন পিছন দানা। অনেক দূরে দেখতে পাই একটা টেবিল। আগেও দেখেছি কিন্তু দাঁড়াবার জায়গা খুঁজে পাই নি। আমাদের যে চেয়ার আছে জানতাম না। বাবা দানার সঙ্গে কথা বলতে বলতে চোখের ইশারা করে। দেখি দানা নক্ষত্র বোঝাচ্ছে। সারা বাড়ি জুড়ে একটা অদ্ভুত গন্ধ, যেন কোথাও কিছু পুড়ে যাচ্ছে।  ৪ দানার গল্পের বীজের মতো বাবার চোখ ...

অমিতাভ দাস

ছবি
না বলা কথারা   এখন তোমাকে ওঁরা ডাকছে না কাল ডাকবে। তুমি লিখে চলো ভূর্জপত্রে যত... তুমি কবিতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছ শব্দের সমারোহে। তোমার যাপিত জীবন থেকে উঠে আসছে  আম্রবৃক্ষ, বিল্বমূল... তুমি কবিতার কাছাকাছি পৌঁছতে চেয়ে ধরে ফেলেছিলে আমার আঙুল... আমাদের নীরব গল্পচর্চার শরীর থেকে  জেগে উঠছেন অমিয়ভূষণ। তুমি যাকে বন্ধু ভেবেছিলে সে তোমার  অমায়িক শত্রু বুঝতে বুঝতে বটের ঝুরি নেমে গেল সন্ধ্যা-আঁধারে। আমাদের অলৌকিক দাহ আমাদের বন্ধু বন্ধু খেলা আমাদের বুঝতে না পারা লেখা অক্ষত যোনীর সেই মেয়েটির কাছে ছুটে যাচ্ছে বাংলা কবিতার সেই সব শব্দগুলি যা আদতে ধূলি-মলিন... তোমার চুম্বনের মতো সহজ, স্বাভাবিক ঢেউ তবু নীল, আঁকা আর বাঁকা... তোমার বন্ধুবৃত্তে বসে আছে কাক, চিল ও শকুন... আমাদের আরো ভালো করে পথ চিনে নিতে হবে সখি আমাদের আরো ভালো করে পড়ে নিতে হবে বিভূতিভূষণ। আমাদের হলদে হওয়া বিকেলের গায়ে লিখে রেখো মাটি খোঁড়া পুরোনো রাস্তা, বিড়ম্বিত আত্মহনন। লিখে রেখো বিষাদ-সুন্দরীর পাশে একটা আহত, অনাঘ্রাত লালপদ্মের ব্যথা...

সোমা দত্ত

ছবি
  অনাবৃষ্টি ১ মাথার উপরের পাখাটা বারো বছরের পুরনো খৈতান টিউবলাইটের আলোয় রাত বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিটও কেমন যেন সাদা বাইরে বৃষ্টি পড়ছে তাকে কুড়িয়ে নিতে পাঁচটাকার ডটপেন, তিনশো টাকার নিব, সাদা অথবা রুল টানা খাতারা গোড়ালি থেকে ক্রমশ উরু ছুঁয়ে, নাভি ছুঁয়ে একসময় দামি বুকে বৃষ্টি লিখছে এখন অবশ্য টাইপ করেই মেকওভার হয়ে যায় ভার্চুয়াল নোটে ডিজিট্যাল লাভ একটি লুপেই ইনফিনিটি সম্পূর্ণ বর্ষা জুড়ে বৃষ্টি সেরা বোহেমিয়ান                        ২  মা যখন ঘুমায় মুখটা হা হয়ে যায় মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক লাগে, শুধু মা বলেই হয়তো ওই মুখে তখনো মায়া আর আদর লেগে থাকে বৃষ্টির দিন এলে মায়ের পায়ের ব্যাথা বেড়ে যায় সরে দাঁড়ায় পা গুটিয়ে, জামা কাপড় সবকিছু শুকনো রাখার বড় তাড়া, যত বয়স বাড়ছে মা ফর্সা হয়ে যাচ্ছে যত দিন এগোচ্ছে মা যেন শিশুর মত ফিরে আসছে শুধু শুকনো থাকার অভ্যাসে মায়ের ভিতরে তাকালে স্পষ্ট দেখি ওর ভিতরেই আসলে আমার হরোস্কোপ লেখা আছে                         ৩ বৃষ্টি পড়ছে, বাইরে রাত, রাতের ...

পারমিতা মুন্সী

ছবি
সম্মোহন  চোরাবালি দিয়ে সীমানাঘেরা এই বধ্যভুমি,এই আমার ঘর। এখানে রাস্তায় যত্র তত্র ছড়ানো থাকে জং ধরা পেরেক, শূণ্যে ঝুলে থাকে শানানো তরোয়াল। এই আমার সংসার।  গেরস্থের আঙরাখা ঝোলে এখানে। বিছানায় মসলিন চাদর। পারলে একদিন এখানে এসো।দুজনে মিলেই এসো। চা বিস্কিটের সঙ্গে রাতের খাবারও খেয়ে যেও পারলে। আহারে লবণ থাকবে। আর মরিচ সংখ্যার আধিক্যে। বোঝ তো তোমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করতেই এহেন মৌলিকতা। তুমি একবার অন্তত এসো। খুশি হও।সমগোত্রীয় ভাবো।

শুভঙ্কর দাস

ছবি
মেঘমদিরমোহ কোথা থেকে আসবে বলেনি,একবারও অথচ এসেই শুধু উচ্চারিত হল একটি শব্দ, অশ্রু।  ঈশ্বরের পোশাক অশ্রুর হয়,এমন কি ব্রহ্মান্ড...  কিছুটা দ্বিধা রেখেছি,দ্বন্দ্বের পাত্রে,আয়নামতি। নীরবতা সব বৃষ্টি হলে,এক জন্মে অযুত ক্ষতি। খুচরো অভিশাপ রেখেছি,মাটিতে,যতটা পারো শস্য বাঁচাও!  এবার ধান হলে,আমি মুষলধারে হয়ে যায় তুষের আগুন, কোনো মুখোশই স্পর্ধা দেখাতে পারবে না সেকথা মাথা নত করে জানিও...

প্রত্যূষা সরকার

ছবি
  আজকাল সহবত শিখছি বিলুপ্ত হাওয়ায় স্বর্গদেবতাদের ভিড়। নিশ্বাসে আশ্বস্ত সময়ের যোগরেখা। সমস্ত ঘর চোখ বোজে। জানলায় অবিরাম দিনকাল। পর্যাপ্ত আদর পেলে চায়ের কাপে সাদা ছোপ পড়ে। আমিও আঙুল এগিয়ে রাখি। পেন্সিলে দু-চারটে ব্যাকস্পেস...  এসব প্রেম স্বার্থ চেনে না, কোনও রকম সমার্থক নেই। ফুরিয়ে যাওয়ার হদিস পেলেই ফুরিয়ে যেতে চায়। আমি দায়বদ্ধতাহীন জ্যান্ত শালিখ। বাসা বদলে নেওয়ার পর সীমান্ত আগলে বসে থাকে অন্ধ প্রেমিক।

শান্তনু দাস

ছবি
  থ রোববার মাখা সিঁড়িতে সকালের ট্রেন মিস দোতলা আকাশ থেকে ভাগফল মেলাতে মেলাতে সন্ধ্যা নামে সূর্যে সেজো অন্ধকারে উড়ে আসে বড় বিকেলের ফড়িং। টানটান বুনন আর মুঠোয় ভরা   শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টির ভিতর জল মাপা ঈশ্বর আমার পরিচিত পায়ের মাপে মাপে ভয়ের খনিজ । থ পর্যটনগুলো পিছুটান , শীতকণা পেরিয়ে শরীর থেকে খুলে ফেলে আশ্রম ক্রমশ পোষমানা অন্ধকারে , তখন দ্বিতীয় বর্ডার ভেঙে নিজেই নিজের বিরুদ্ধ সৈনিক।  

সমর্পিতা ঘটক

ছবি
অরণ্য-দুপুর । এই যে শ্রাবণমেঘ চিরে চিতলহরিণ আলো উন্মাদিনী বৃক্ষলতা আর ছোপছোপ অরণ্য-দুপুর এ তোমার যতটুকু আমার ততটাই ম্যাক্সির দুই ধারে হাত-মোছা হলুদ... জবরদখল ছিটছিট পাতাবাহারে সাভানার বুনো রোদ টপকায় আগুনপাথর হাতে ...হেমন্ত-অরণ্যে চিমনির কোটর ফুঁড়ে ঘনিয়ে আসে ছটফটে ডানা পাখি-মা ছানাদের বায়নাক্কায় ছিটিয়ে দেয় দানা-জল এক রাশ জল ঘেঁটে এই জলপ্রপাত থেকে ওই রামধনু প্রপাতে ছলকে উঠি রঙ, বীজ, রোপণ, কত সাবেকি সম্পদ! ফেউ থাকে সংসারেও,  ডোরা-কালো ভয়... কুকারের সিটির মতো তীক্ষ্ণ হয় ক্রমশ আমিও সরেস হই, জলপ্রাপাতে ছুঁড়ে ফেলে ঘুরিয়ে দিই নব, তারপর শান্ত দুপুরে হেঁটে পার হই চিরহরিৎ পথ ভেষজ চায়ের মতো ম্লান হয় আলো গুহামুখ থেকে ডাক দিই জেগে ওঠেন আমার বৃক্ষমানব।

শুভশ্রী সাহা

ছবি
দুঃখ মুছতে পারলে   তুমি বললে, দুঃখ পেয়েছ বড়ো, আমি বললাম তবে  আর কেন দুঃখ থেকে দূরে সরে থাকো। স্নানঘরের ফেনায় ভেসে যেতে দাও দুঃখকে, সুগন্ধি ছড়িয়ে যাক  তোমার সেই  অবিশ্বাসী নালিঘরেও পাহাড় বৃষ্টি মেঘ ক্লিশে প্রেমের গল্প এ যাবত যত নিভৃতের আলাপ কাঁচ ভাঙা জোছনার বাসনা কুসুম কাছে গেলেই খাদের ফাটল। মেঘ ধরে যত জলভার, ঢেলে দেয়  তুমুল বৃষ্টিপাত  ভেসে যায় ধূলিকণা, আষাঢ় শ্রাব্য,  দুঃখের মত ওড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো কালো। স্খলনের পরে সব শান্ত মাটির সোঁদা গন্ধ, বীজধানের গান  নারী জানে চরিত্র বৃত্তান্ত  দু:খ মোছার জন্য বৃষ্টিপাত, ভালো।

সুবিৎ বন্দোপাধ্যায়

ছবি
ভিজে ব-দ্বীপ ঘন বর্ষায় তুমি অরণ্যের কাছে যাও না অরণ্য হেঁটে আসে ! বর্ষা ঘন হলে জনপদ অরণ্য হয়ে ওঠে ,  অরণ্য জনপদ।  সমস্ত হরিণ তৃষ্ণার্ত ছোটে।  জলতরঙ্গ শোনা যায় কানের কাছে।  বাঘ জেগে ওঠে।  ভাসতে ভাসতে পেরোয়  মাতলা , রায়মঙ্গল , মুড়িগঙ্গার চর।  ভিজে সপ সপ বেত বনে জিয়ন কাঠি  ছুঁইয়ে দিলে আলেয়ার মত দপ করে জ্বলে ওঠে। আলো ঘুরে মরে।  আলো ভিজে চলে।  আলো নিভে যায়।  অন্ধকারের বন্ধ দ্বারের কাছে জ্বল জ্বল করতে থাকা ভাটার মত  বড়ে মিঞার চোখ তখনো কি বলতে চায় যেন।  

রিমলী বিশ্বাস

ছবি
শ্রাবণ   শ্রাবণের আকাশ ঠিক যেন কংসাবতীর মোহনা! ঘোলাটে রঙ, ভারাক্রান্ত! এই বুঝি আকাশেই জেগে উঠল চর! বইতে না পেরে খালি করে দিল গর্ভগৃহ!  ঈশ্বরী নেমে আসলো স্বয়ং  নাহলে উঠে আসলো বিসর্জনের ঘাট থেকে জলকণা হয়ে! ভাবতে ভাবতেই ভিজে একসা! শ্রাবণ বড় বেশি স্মৃতিপ্রবণ! বারংবার সেই বাইশে শ্রাবণে ফেরায়, যে ফেরায় রবি ঠাকুরের চলে যাওয়া ছাড়াও  আরও কিছু ছেড়ে যাওয়া ছিল। ছিল সুতির শার্টে মুখ ডুবিয়ে বৃষ্টিমাসী মেয়ের কান্না!  ছিল শহরের এক সমুদ্র নোনা হওয়ার ইতিবৃত্ত!  শ্রাবণ এলেই দেখেছি বেশ সেরে উঠি, সেই কবে থেকে ভুলে যাওয়া রোগ! শুধু ছাইরঙা আকাশের দুঃখ আমাকে ভুলতে দিল না  তেমন দুঃখ পাবার সাধ আজও ষোলোআনা! অঝোরে বৃষ্টি পড়ে, একটানা... আমি আরও অতীতে ফিরি, পাঠশালার শিশুদের সমবেত স্বরে ধ্বনিত হয় ধারাপাত, মুদে আসে চোখ...  এতদিনে আবিষ্কার করি শ্রাবণের নিরলস বৃষ্টি উচ্চারণ আসলে জলের অবিশ্রান্ত ডাক কোথাও একটা ফেরার... নামতার মতো মুখস্থ হয়ে যায় যে ঠিকানা  কষ্ট করে মনে রাখতে হয় না যাকে।

শুভদীপ রায়

ছবি
  লুসি এবং ভ্রমর-ব্যাকরণ এই স্পর্ধা সংলাপ অবদমিত সুখ খোঁজে জীবন সৈকত জুড়ে দেখি - প্রতিজ্ঞার উপকূলে অবজ্ঞার সুর আর  মৌনতায় উহ্য রাখে শঙ্খ-স্মৃতিরেখা  তবু মিশেল বুঝিনা বন্ধনের, বুঝি শুধু অক্ষরের ঘ্রাণ  যতটা পাপবোধে সম্পর্ক বিনাশ   তার কিছু আবহ শুধরে নিলে ভুল কি কিছু হোতো !  অথচ -- তুলোট ভাবনার দেশে পাখিবিহ্বল  ইদানিং এই সকল অযাচিত দিন গুজরান অসহনীয় হয়ে ওঠে  যেন, শব্দের মান্যতায় আবেগ অপব্যয়! একদিন আমাকেও সে রাঙিয়েছিল লাবণ্যমুহূর্ত   আর অস্থাবর স্বপ্নের দেশে কথার প্যারাস্যুট যেন নিভৃতে ভাসিয়ে দেওয়া ঠোঁটের সাম্পান অথবা --  তার চোখে আস্থা রেখে, এঁকে রেখেছি অভিমান বসন্ত   তবু কথাগুলি ধ্রুপদি চিত্রের মত বুকের ক্যানভাসে  যেন ফাগুন পরব ঘিরে ভ্রমর ব্যাকরণ

শাশ্বতী চ্যাটার্জী

ছবি
প্রিমনিশনস্    অনেক পূর্বাভাস দিয়ে তবে বৃষ্টি এলো। সাজঘর থেকে বেরোলো রঙীন মেঘ সন্ন্যাসী হাওয়া। নৈঋত কোণে পাথরের পরিওলা যে আইভরি বাড়িটির চূড়ো দেখা যেত, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো, প্রায় সাড়ে তেত্রিশ ফুট রাস্তার পাড় জুড়ে। রাত বাড়লে আকাশের ল্যাবে গভীর বিক্রিয়ায় একে একে নিভে গেল নক্ষত্রের প্রাচীন গণনা। ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে শহরের তাবৎ নৃত্যালয়, পালকের কারখানা, রোঁয়া ওঠা পাখিদের শৌখিন সেলুন। পাটিগণিতের স্যার ছাতাটি হারালেন। ফ্যালফ্যাল চোখে কবিতার খাতা খুলে মাথায় ধরতেই নেমে এলো ভাঙা কাচ, ছেঁড়া সুতো, এলেবেলে নুড়ি। আহত স্যারের পাশে কাঁচা ধুলোর ঘোরে উড়ে গেল একপাতা সারিডন, বার্ষিক প্রশ্নপত্র, লকারের চাবি। ধোঁয়াটে অন্ধকারের মধ্যেও হেডস্যারের বাজখাঁই বকুনি শোনা গেল; বিদ্যুতের সার্চলাইটে কারা যেন জুতসই চেয়ার খুঁজছে। হেকিমবুড়ো আবিষ্কার করলো কচি বৌয়ের লুকোনো চিঠি; কাজল বলে লণ্ড্রীর ছোঁড়াটার লেখা। একশো ঊনতিরিশটা ভুল বানানে রগরগে 'চিত্তোনাট্য'। বারান্দায় পড়ে থাকে হেকিমঘরণী, কষ বেয়ে লাল দুধ, কানের পেছনে চাঁপাফুল। বুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বাসমতী আলো। সাত আট বছর হ'ল, হেকিমের দামি ধান সহ্য হয় না। অ্যা...