বৈশাখী ঠাকুর
বোর্ড পরীক্ষা ও একটি গাছ
(১)
সুরভীর চোখে ঘুম নেই। যে রেহান জীবনে ইস্কুলে কখনও নব্বই শতাংশ নম্বরের কম পায়নি সে কিনা ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষায় উননব্বই শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ভাবা যায়! তীরে এসে যে ভরাডুবি হওয়ার যোগাড়! এতদিন যে এত পরিশ্রম করল সুরভী সে তো এই আই সি এস সি তে একটা চোখ ধাঁধানো , তাক লাগানো রেজাল্ট দেখবে বলে নাকি! আর ঠিক এই মুহূর্তে মানে যখন শিরে সংক্রান্তি তখন কিনা রেহান পদচ্যুত হল। সারা ইস্কুল জীবনে রেহান এই প্রথমবার দ্বিতীয় হল। সবাই জানে এই ইস্কুলে অর্থাৎ --“আম্বেদকর হাই স্কুলে “ যারা টেস্ট পরীক্ষায় আশি শতাংশ নম্বর তোলে তারা নব্বই পেতে বাধ্য বোর্ড পরীক্ষায়। কিন্তু শুধু নব্বই তুলে তো আর আজকালকার দিনে লাভ হয় না। তার বাড়িতে যে দিদি রান্না করে তার বোনের মেয়েও একানব্বই শতাংশ নম্বর তুলেছে পশ্চিমবাংলার বোর্ড পরীক্ষায়। সেখানে রেহানের টেস্টের এই নম্বর সুরভীর মাথা খারাপ করে দিয়েছে। ন্নাহ! রেহানের সাথে একবার ভাল করে কথা বলতে হবে। কেন এমন হল? ওর অসুবিধেটা কোথায়? ভাল করে পড়বে বলে তিনতলায় ঠাকুর ঘরের পাশে একটা আলাদা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। নিরিবিলিতে এক মনে যাতে পড়তে পারে। নীচের তলায় তাদের প্রায় সময়ই লোকজনের আসা যাওয়া লেগে থাকে। কখনও শাশুড়িমায়ের বোন , ভাইপো , ভাইঝি অথবা পাড়া পড়শী। আবার বিকাশ অর্থাৎ সুরভীর স্বামী তথা রেহানের বাবা গেজেটেড অফিসার হওয়ার দরুণ তার কাছে সইসাবুদ করার জন্যও এলাকার বহু মানুষ এসে উপস্থিত হন। আসলে তাদের স্বাগত জানিয়ে ভেতরে বসতেও বলতে হয়, চা পান করার প্রস্তাব না দিলে খারাপ দেখায়। দু চার কথা হতে হতে অনেকসময়ই পরিচিতদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে এক ঘন্টা , দু ঘন্টা পেরিয়ে যায় খেয়ালই থাকে না। নীচে বাইরের ঘরের পাশেই রেহানের পড়ার ঘর ছিল। ফলে তার কানে সেই সব গল্প যেত। অনেক সময়ই সে গল্প শুনতে শুনতে এতই মশগুল হয়ে পড়ত যে অজান্তেই মন্তব্য করে বসত। যেমন হয়তো খেলা নিয়ে আলোচনা করার সময় পাশের ঘর থেকে উত্তেজিত হয়ে বেশ কয়েকবার নিজের মত প্রকাশ করে ফেলেছে। অতিথিগণ মজা পেয়ে তাকে আড্ডায় সামিল করতে চেয়েছে। ফলে তার পড়ার যে বহুমূল্য সময় অপচয় হচ্ছে এটা ভেবে ভেবে সুরভীর বিনিদ্র রজনীর ফলস্বরূপ ওই তিনতলার পড়ার ঘর। নীচের কোন আওয়াজ কোলাহল সেখানে পৌঁছয় না।। মনঃসংযোগের , একাগ্রতায় ব্যাঘাত ঘটবে না। দুধ , ফল এইসব দেবার নাম করে সুরভী ওপরে গিয়ে দেখেওছে যে রেহান বেশ মন দিয়ে নিষ্ঠা সহকারেই পড়ছে। তাহলে কি হল? নরমে গরমে একবার রেহানের সাথে কথা বলতেই হবে। দরকার হলে কাউন্সেলিং করাবে।
সেদিন দুপুরে রেহানের “ রিজুভিনেটেড ন্যাপ”-এর সময় সুরভী তার পাশে গিয়ে শুলো। গায়ে হাত রেখে চুপ করে খানিক পড়ে রইল। হাতে মাথায় হাত বোলালো ছেলেটার। এই তো সেদিনের কথা হাসপাতাল থেকে নিয়ে এল। ছোট্ট একটা পুতুল যেন! এরই মধ্যে কবে যে এত বড় হয়ে গেল কে জানে! চুলে বিলি কাটতে কাটতে একসময় সুরভী জিজ্ঞেস করল,
------- হ্যাঁ রে রেহান, তোর এরকমটা হল কেন বলত এবার?
-------- কি জানি! আমি তো চেষ্টা করেছিলাম।
--------- তোর কি ওপরে পড়তে কোন অসুবিধে হচ্ছে? আমাকে বল তাহলে। রেহান নিরুত্তর। সুরভী বুঝতে পারে যে এইখানেই কিছু একটা ব্যাপার আছে। সে তাই আবার বলে,
------- আমার কাছে কিছু লুকোস না রেহান। আমাকে বল। না বললে তুই নিজেই ঠকবি। আমায় বল তোর কি অসুবিধে ? আমি তোকে সাহায্য করারই চেষ্টা করব।
রেহান মায়ের মুখের দিকে তাকায়। একটু যেন দ্বিধান্বিত।
------- তুমি আমাকে ব্কবে।
-------- না বকব না। কিচ্ছু বলব না। তুই বল। সুরভী অভয় দেওয়ার চেষ্টা করে।
--------- আমার ভীষণ ভয় করে ওই ঘরে পড়তে।
--------- ও মা! কেন রে?
-------- তুমি জান তো, আমি টিকটিকি কিরকম ভয় পাই। ওই ঘরে প্রচুর টিকটিকি মা। আমার ভীষণ ভয় করে। আমি কন্সেন্ট্রেট করে পড়তে পারি না। দেয়ালে, মেঝেতে সব জায়গায় ওরা বহাল তবিয়তে ঘোরাঘুরি করে। সারাক্ষণ আমার মন ওদিকেই পড়ে থাকে মা। আমার নিজেরই কি মন খারাপ রেজাল্ট দেখে।
------ তা সেটা তুই আমায় আগে বলিসনি কেন? কিছু একটা উপায় ঠিকই বার করতাম।
------- সরি মা। টিকটিকি গুলো বিদেয় হলেই আমার আর কোন অসুবিধে হবে না। এমনিতে বেশ আইসোলেটেড জায়গা। কোন আওয়াজ আসে না। পড়তে খুব সুবিধে হয়।
------- বেশ । দাঁড়া আমি দেখছি কি করা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদ করে, কথা বলে সব করতে শুরু করল সুরভী। কেউ বলল ডিমের খোসা ঝোলাতে---- তাই করল সুরভী। দু একটা দিন মনে হল একটু ফলপ্রসূ হলেও, তারপর যে কে সেই। তারপর একজন পরামর্শ দিল জলের সাথে পেঁয়াজের রস, লেবুর রস, ডেটল দিয়ে একটা স্প্রে তৈরি করে জায়গায় জায়গায় স্প্রে করতে। তাই করা হল । ওই একই গল্প। দিন দুই বিদায় হল। ফের স্বমহিমায় ময়দানে সরীসৃপ শ্রেণী। একজন নিদান দিল ভ্যাকিউম ক্লিনার কিনতে। তাতে নাকি ভাল ফল পাওয়া যাবে। সুরভী সে চেষ্টাও করল। এটা কিছুটা কার্যকরী হলেও রোজ রোজ ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করা সম্ভব না। আর টিকটিকি বাহিনীর বংশ বৃদ্ধিরও যেন শেষ নেই। সুরভী যখন বেশ চিন্তিত এই ব্যাপারে, তখন তার বাড়ির পরিচারিকা, বাসন্তী একদিন বলল,
-------- দিদি তোমাকে একটা উপায় আমি বলতে পারি। তোমরা তো বিশ্বাস করবে না। আমাদের গ্রামের বাড়িতে একরকমের গাছ আছে জান যারা টিকটিকি খায়।
-------- সে আবার কি কথা! তা আবার হয় নাকি!
-------- ওই তো তোমরা বিশ্বাস করতে চাও না। পরশু দিন দেশ থেকে আমার ভাই আসবে। তুমি বললে ওকে একটা আনতে বলতে পারি।
-------- কত কিছুই তো করছি। তোর কথা শুনে এই গাছ আনিয়েও দেখি। তো সেই গাছটাকে নিয়ে কি করতে হবে?
------- কিছুই না। যেমন জল দাও তেমন জল দেবে। যত্ন করবে। দিনেরবেলায় জানলায় রাখবে আর রাতে যখন কেউ ঘরে থাকবে না তখন ঘরের মেঝেতে নামিয়ে রেখে যাবে। ওতেই কাজ হবে। ধীরে ধীরে দেখবে টিকটিকিরা সব পালিয়ে গেছে ওই চত্বর থেকে।
------- ঠিক আছে। তোর ভাইকে বলিস আনতে। দেখি যদি পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়।
(২)
সুরভী যে ভয়টা পাচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত সেটাই হল। পরীক্ষার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। আর তার শ্বাশুড়িমা বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। যথাসময়ে আওয়াজটা শুনেছে সুরভী কিন্তু তার মনে হল আগে ছেলের পড়ার ঘরে ঢুকে গাছটাকে মেঝেতে নামিয়ে, দরজা লক করে তারপর শাশুড়িমার দিকে নজর দেওয়া উচিৎ। ইতিমধ্যে সব টিউশান সেরে আজ রেহান মক টেস্ট দিতে যাবে । ফিরবে সেই রাতে । আজ আর পড়বে না। গাছটা সারাদিনটা পাবে টিকটিকি সাফ করার জন্য। একটু কী তার সুপারফুড দিয়ে আসবে তার জন্য। লোভটা কিছুতেই সংবরণ করতে পারল না সুরভী। একটা সিরিঞ্জ এনে সুরভী তার শাশুড়িমায়ের কাছে গেল। তখন তিনি অচৈতন্য। সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত টেনে দ্রুত তিনতলায় উঠে গেল সে। এক নিঃশ্বাসে উঠেছে বলে হাঁপাচ্ছে। তার শরীরও বিশেষ ভাল যাচ্ছে না। বড্ড দুর্বল লাগে। গাছটার ডালে সিরিঞ্জটা পুশ করে দিল। তারপর বক্স জানলা থেকে নিয়ে এসে ঘরের মেঝেতে রেখে জানলা বন্ধ করে দিল। বাইরে থেকে দরজাটাও ভাল করে বন্ধ করে দিতে ভুলল না।
তারপর নেমে সে বিকাশকে ফোন করল। চিন্তিত বিকাশ মুহূর্তে গাড়ি নিয়ে হাজির হচ্ছে বলে জানাল। অনেক কষ্টে সুরভী তার শাশুড়িমাকে বাথরুম থেকে বের করে সোফায় শোয়াতে পেরেছে। একটা ছোট ব্যাগ গোছাল যাতে শাশুড়িমায়ের জামা কাপড়, পুরনো প্রেসক্রিপশান,ব্রাশ, পেস্ট, চিরুনী ক্রীম—সব প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের সামনে থাকে। নিজেও শাড়ি জামা ছেড়ে নিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা জলে ও আর এস গুলে খেল। না হলে বড্ড ক্লান্ত লাগছিল। আয়নার সামনে আর যেতে ইচ্ছে করে না সুরভীর। কিরকম হাড় জিরজিরে চেহারা হয়েছে তার। চোখের তলায় কালি। ফ্যাকাসে গায়ের রং। চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ সুস্পষ্ট। এত কিছু করার পর যদি ছেলেটা রেজাল্ট ভাল করে তবেই তার শান্তি। এইসব ভাবনা চিন্তার মধ্যেই গাড়ির আওয়াজ পেল সুরভী। ওই তো! বিকাশ চলে এসেছে। বিকাশ আর ড্রাইভার মিলে শাশুড়িমাকে গাড়িতে তুলল। আর ব্যাগ, জলের বোতল নিয়ে সুরভী এল তাদের পেছনে। আসার আগে চাবিটা পাশের বাড়িতে দিয়ে দিল পাছে রেহান যদি আগে ফিরে ঘরে তালা দেখে।
যেতে যেতে আচমকাই সেদিনের স্মৃতি ফিরে এল সুরভীর চোখের পাতায়। বাসন্তী গাছটা লাগিয়ে দেওয়ার পর টিকটিকির উৎপাত কম হয়েছিল ঠিকই কিন্তু গাছটা যেন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিল। বাসন্তীকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল,
------- ও হ্যাঁ! ভাই বলেছিল বটে! বলতে ভুলে গেছিলাম দিদি। ভাই বলেছিল যখন বাজার থেকে মাছ আসে মাছের গায়ের রক্ত বা রক্ত ধোয়া জল ওই গাছের গোড়ায় দিতে। খুব ভাল সার ওটা ওই টিকটিকিখেকো গাছের জন্যে।
সেই কথামত পরদিন থেকে সুরভী তাই করতে শুরু করল। তাতে গাছটা প্রাণ পেয়েছিল ঠিকই। মরা পাতা ঝড়ে নতুন পাতা দেখা দিল। আগের থেকে টিকটিকির উৎপাত কমেছিল কিন্তু একেবারে নির্মূল হয়নি। কিন্তু একদিন একটা অঘটনে সুরভীর চোখ খুলে গেল। চূড়ান্ত গরম পড়েছে সেই সময়। তিনতলায় উঠে সুরভী রেহানের ঘরের জানলাগুলো বন্ধ করছিল। শুয়ে পড়লে যদি ঝড় জল হয় তখন ওই ঘুম চোখে তিনতলায় উঠে দরজা জানলা বন্ধ করার এনার্জি থাকে না। ঘরে ঢুকেই এই তীব্র গরমের জন্য পাখাটাকে ফুল স্পিডে চালিয়ে দিয়েছিল। টেবিলের ওপর ছড়ানো ছেটানো বইগুলো সামলে সে টবটাকে ঘরের মেঝেয় রেখে জানলাটা বন্ধ করল। তখনই সিলিং ফ্যানে জোরদার আওয়াজ করে একটা ছোট পাখি ধাক্কা লেগে মেঝেতে পড়ে গেল। কখন যে এসে ওই ছোট্ট প্রাণ ওপরে আশ্রয় নিয়েছিল কেউ টেরই পায়নি। সজোরে আঘাত লাগাতে পাখিটা খানিকক্ষণ ছটফট করতে করতে মরেই গেল। সুরভী ওটাকে টবের মধ্যে তুলে দিয়ে বাইরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে এল। কাল সকালে ফেলে দিলেই হবে। পাখিটার জন্য একটু খারাপও লাগছিল।
পরদিন সকালে দরজা খুলে গাছটাকে দেখে তাক লেগে গেছিল সুরভীর। কি সতেজ! মনের আনন্দে যেন মাথা দোলাচ্ছে। জানলায় টবটা তুলে দিতে নজরে পড়ল সেই পালক ঢাকা হাড়গোড় সমেত নিষ্প্রাণ পাখীটা। এক্টু অবাকই হল। কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে । কেমন যেন ছোট্ট হয়ে গুটিয়ে গেছে পাখিটা! ভাল করে নজর করে দেখে সুরভী বুঝল পাখিটা রক্ত শূন্য! বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠল। একটা প্লাস্টিক নিয়ে পাখীটাকে তুলে চুপচাপ নীচে নেমে এল। সারাদিন আনমনে কথাটা সুরভীর মাথায় ঘুরতে লাগল। রাতে খেতে নেমে রেহান সেদিন মাকে বলল,
------- মা, আজকে খুব ভাল পড়া হয়েছে। একটাও টিকটিকি ছিল না। কোন টিকটিক আওয়াজও শুনতে পাইনি। ফুল কনন্সেন্ট্রাশান দিয়ে পড়তে পেরেছি। সুরভী ভীষণ খুশি হল শুনে। বুকের সমস্ত ভার নেমে গেল নিমেষে। রাতে শুয়ে শুয়ে সুরভী চিন্তা করতে লাগল---- এই টিকটিকি মারার শক্তি যোগানোর জন্য যদি গাছটার রক্তের প্রয়োজন হয় তাহলে পরেরদিন সে কিভাবে যোগাবে? আজ ওই পাখিটার রক্তের জন্যেই না অত সতেজ এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল গাছটা যে রেহান অত নিশ্চিন্তে শান্তিতে পড়তে পেরেছে। ধারে কাছে ওই সরীসৃপ শ্রেণী ঘেঁষতেই পারেনি। রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করল সুরভী---একটা পাখির শরীরে কত রক্ত থাকতে পারে? ১০০ মিলিলিটার রক্ত তো হবেই। খুব বেশি পরিমাণ নয়। এক বোতল রক্ত কোনক্রমে হাসপাতাল থেকে কিনে আনলেও চলবে তার বেশ কিছু দিন। কিন্তু আজ রাতে রক্ত দিতে না পারলে কাল সকালে রেহান নিশ্চিন্তে পড়বে কেমন করে? দুশ্চিন্তায় আর শুয়ে থাকতে পারল না সুরভী। উঠে জানলায় এসে দাঁড়াল। জানলা দিয়ে নজরে পড়ল তাদের পাড়ার লালচে আর সাদা রঙের বেড়ালটা, একটা ইঁদুরকে মেরেছে। তারপর দাঁত দিয়ে ফালা ফালা করার চেষ্টা করছে। এক হাত দূরে সাদায় কালোয় বেড়ালটা, ভুতুরী থাবা মারার অপেক্ষায় আছে। একটা সুযোগ পেলেই হল। সুরভীর মাথায় মুহূর্তে পরিকল্পনাটা খেলে গেল। সে ওপর থেকে মগ দিয়ে জল ঢেলে ঢেলে বেড়ালগুলোকে তাড়ানোর চেষ্টা করল। তারপর হাতের সামনে যে প্লাস্টিকটা পেল তাই নিয়ে ছুট্টে নীচে নামল। বেড়ালগুলোকে মুখে –যাহ যাহ! বলে তাড়িয়ে তাদের মুখের খাবারটা সন্তর্পণে প্লাস্টিকে ভরে সে ঘরে ঢুকে এল। ভাল করে দরজার খিল লাগিয়ে চুপিসারে উঠে এল তিনতলার ঘরের সামনে। সুরভী অনুভব করল তার দরজাটা খুলতে কিঞ্চিৎ ভয় করছে। অস্বস্তি হচ্ছে। সে আগে সব আলোগুলো জ্বালিয়ে নিল। তারপর দরজা খুলতেই মনে হল গাছের ডালগুলো আন্দোলিত হয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল ফিসফিস করে। সে আসতেই চুপ করে গেল। পরক্ষণেই মনে হল হয়তো মনের ভুল। প্লাস্টিক থেকে কোনক্রমে মরা ইঁদুরটাকে বের করে একটু দূর থেকেই গাছের গোড়ায় ছুঁড়ে দিল। তারপর বাইরে থেক ফের দরজা বন্ধ করে দুদ্দার করে নেমে এল নীচে। ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে শুতে গেল। তোফা ঘুম হল সেদিন।
পরদিন সকালে একটু দেরী করেই ঘুম ভাঙল সুরভীর। উঠে প্রথমেই গেল তিনতলার ঘরে। গিয়ে দেখল সেই পাখিটার মতই ফ্যাকাসে রক্তশূন্য ইঁদুর আর অদ্ভুত সতেজ সুন্দর পাতা। একইরকম ভাবে সেটাকে গ্লাভস হাতে তুলে নিয়ে ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিল। আজকে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে সুরভী, আজ সকালে একসময় বেরিয়ে ক্লাবের কোন একটা ছেলের সাহায্যে এক লিটার রক্ত কিনে আনবে। পরক্ষণেই মনে পড়ল তার বাপের বাড়ির পাশেই থাকে যুগল। সে একটা প্রাইভেট হাসপাতালের ল্যাব আসিস্ট্যান্ট । তাকে বললেও হয়তো কাজ হতে পারে। ফোন করে সকালেই যোগযোগ করে নিল। তারপর অফিস ইস্কুলে সবাই বেরিয়ে গেলে, শাশুড়িমায়ের খাবার গুছিয়ে সুরভী বেরোল। একটু বেশী টাকা দিয়েই যুগলকে বলে কয়ে পাঁচ বোতল রক্ত নিয়ে এল সুরভী। এখন বেশ কিছু দিনের জন্য নিশ্চিন্ত। বোতলে চিহ্ন দিয়ে নিল প্রতিদিন কতটা গাছে দেবে। গাছটা ইতিমধ্যেই বেশ ছাড় দিয়ে বেড়ে উঠেছে। আর কয়েকদিন বাদে হয়তো ঘরে রাখা যাবে না। এইভাবে বাড়তে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই সিলিং ছুঁয়ে ফেলবে। তবে ইদানিং রেহান যে নির্বিঘ্নে পড়তে পারছে , এবং মক টেস্টগুলোতে ভাল নম্বর পেয়েছে , এটা বেশ আনন্দ দিয়েছে সুরভীকে।
কয়েকদিন বাদে একদিন রাতে তিনতলার ঘরে ঢুকে বোতল থেকে রক্ত দিতে গিয়ে অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশীই দিয়ে ফেলল। মুহূর্তে চোখের সামনে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখল সুরভী। লজ্জাবতী পাতার মত পাতাগুলো কিরকম ভাঁজ করে ছিল। সে রক্তটা গোঁড়ায় ঢালতেই কিরকম যেন পাতাগুলো খুলে গেল আর একটা ডাল যেন তার দিকে এগিয়ে আসছিল। ভয়ে বোতল থেকে বেশ খানিকটা রক্ত টবে পড়ে গেল। গাছটা স্থির হয়ে গেল। দ্রুত আলো নিভিয়ে , দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে সুরভী নেমে এল। তখনও সে ঘটনার অভিঘাতটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তারপর নিজেই নিজের মনকে প্রবোধ দিল যে বাচ্চারা যেমন বড় হলে তাদের খাবারের পরিমাপ বেড়ে যায় তেমনি গাছও বড় হলে তাদের জল হাওয়া, সার সব বেশি পরিমানেই লাগে। সেই হিসেবে সুরভী ঠিক করল এবার থেকে রক্তের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। তবেই রেহান শান্তিতে পড়তে পারবে। টিকটিকিদের বংশ বৃদ্ধি রোধ হবে। এটুকু তাকে করতেই হবে।
দেখতে দেখতে পাঁচটা বোতল শেষ হয়ে গেল। আবার আনতে হবে ভেবে যুগলকে ফোন করল সুরভী।
------- যুগল , আবার যে রক্তের দরকার হয়ে পড়ল ভাই।
------- কিন্তু আমি তো দার্জিলিং বেড়াতে এসেছি দিদি।
------- যাহ! তাহলে কি হবে? আর দুটো মাস চালাতে পারলেই হল।
------- বুঝতে পারছি দিদি। আমার ফিরতে এখনও পাঁচ দিন লাগবে। এই কটা দিন তুমি যা হোক করে চালিয়ে নাও। বুকের ভেতর দামামা বাজছিল সুরভির। ওই রাক্ষুসে গাছ তো রক্তে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভীষণ নার্ভাস লাগছে তার। অল্পে এখন আর হয় না। সারা দিনটা এখনও হাতে আছে। আজ আবার ব্যাঙ্কের একটা খুব জরুরি কাজ আছে। আপাততঃ সেটা সেরে না হয় ভাবা যাবে।
ব্যাঙ্কের কাজটা সারতে বেশ দেরী হয়ে গেল সুরভীর। তারপর থেকেই সে ভেবে যাচ্ছে যে কি করে রক্ত যোগার করবে । পরশুদিন আবার একটা জরুরি মক টেস্ট আছে। ভাল করে পড়তেই হবে রেহানকে। কিন্তু তার মধ্যেই ফোন এল বাড়ি থেকে । তার শাশুড়িমায়ের জন্য রাতে একটা আয়া রাখা আছে। দিনের বেলায় সুরভীই দেখেশুনে রাখে। সে ফোন করে জানাল ,
------- দিদি, ঠাকুমার শরীর খারাপ লাগছে। তুমি তাড়াতাড়ি এস। আমার যাবার সময় তো হয়ে গেল। অতএব সব কাজ ফেলে সুরভী তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরল। এসে বুঝতে পারল নিশাদেবীর সুগার ফল করে গেছে। গা হাত পা একদম ঠাণ্ডা। তাড়াতাড়ি আইসক্রিম বার করে দিল সুরভী। এরকম এমারজেন্সী পরিস্থিতির জন্য সে রেখে দেয়। ধীরে ধীরে শরীরটা ঠিক হল। নিশাদেবী আবার ছন্দে ফিরলেন। সেদিন ক্লান্তিতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিল সুরভী। সেই গাছের কথা আর মাথায় ছিল না।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই গত কয়েক মাসের চিরাচরিত কাজ হচ্ছে তিনতলার ঘরে গিয়ে জানলা দরজা খুলে গাছটাকে বক্স জানলায় রাখা। খুলেই দেখল গাছটা বেশ নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। তখনি মাথায় এল যে আগের দিন এই রক্তচোষা গাছের খাবারের কোন ব্যবস্থা করা হয় নি। সে গাছটার কাছে যেতেই মনে হল ওপর থেকে একটা ডাল এসে তার কব্জীতে কেমন কাটার মত কি একটা বিঁধিয়ে দিল। আর্তনাদ করে উঠল সুরভী। সকলেই দরজা বন্ধ করে এসি ঘরে ঘুমোচ্ছে বলে কারুর কানে গেল না তার বেদনাবিধুর আওয়াজ। জোঁকেরা যেভাবে রক্ত শুষে নেয়, গাছটাও ঠিক তেমন ভাবে নিঃসারে রক্ত চুষে নিতে লাগল। একসময় গাছের রক্ত পিপাসা মিটলে নিজে থেকেই ছেড়ে দেয় রক্তচোষা গাছটা। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল সুরভী। বেশ ক্লান্ত বোধ হচ্ছিল। পরক্ষণেই মনে হল, ভাগ্যিস সে আগে এল, তার বদলে সকালে রেহান ঢুকলে কি অনর্থ না হত! এক অজানা আতঙ্কে তার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল । কোনমতে নিজের শরীরটাকে টেনে টেনে নীচে নামল।
এখনও চারদিন বাকি যুগলের ফিরতে। কি করে সামলাবে সে এই কটা দিন! বেশ ভয় করছে সুরভীর। সে টের পাচ্ছিল তার হাল বেশ বেহাল। বেশ অনেকটাই রক্ত গেছে হয়তো। একটু ভাল করে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। কিন্তু আগামীকালের কি ব্যবস্থা হবে। উপায়ন্তর না দেখে সকালে নিশাদেবীকে ইনসুলিন দেবার নামে বেশ খানিকটা রক্ত টেনে নিল সুরভী। অপরাধবোধ ভীষণভাবে কাজ করলেও নিরুপায় সে। আগে ছোট জন্তুজানোয়ার দিয়ে হত , এখন যে সেটা হচ্ছে না। আজকের রাতের মতন নিশ্চিন্তি কিন্তু কাল?আর ব্যবস্থা না করলে টার্গেট রেহান। সেই তো সারাক্ষণ ঐ ঘরে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমানে রক্ত না দিলে……। সুরভী আর ভাবতে পারল না।
ছেলেকে ইস্কুল বাসে তুলে দিয়ে রাস্তায় আসতে আসতে আচমকাই নজরে পড়ল রাস্তায় একটা কুকুর বাচ্চা মরে পড়ে আছে। কিন্তু রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আসতেও কেমন লাগছে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল কোন গাড়ি চাপা দিয়ে যাওয়ার ফলে রক্ত তেমন পাওয়া যাবে না। এদিকে রাতে একটা নেমন্তন্ন আছে বেশ দূরে। ফিরতে ফিরতেই অনেক রাত হয়ে যাবে। তখন যদি খেয়াল না থাকে! কি করবে ভাবতে ভাবতে ঘরে এসে নিজেই একটা ছুরি নিয়ে তিনতলার ঘরে গেল সুরভী । গাছটা কিরকম দৈত্যাকার ধারণ করছে দিনকে দিন । আঙুলের খানিকটা কেটে গাছের গোড়ায় ধরল। নিজের হাত আর কে বেশি কেটে যন্ত্রনা ভোগ করতে চায়! তাই অল্প কেটেই সে ধরেছিল টবের সামনে। আচমকা মনে হল গাছের ডালগুলো যেন আষ্টেপৃষ্ঠে তার কোমর জড়িয়ে ধরল। ভয়ে চীৎকার করে উঠল সে। আর একটা ডাল এসে তার কব্জীতে সেই জোঁকের মত দ্রুততার সাথে রক্ত শুষে নিতে শুরু করল। যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল সুরভী। তার আওয়াজ পেয়ে সম্ভবতঃ খুবই কষ্ট করে ওপরে উঠে এসেছেন নিশাদেবী। তিনি হতবাক হয়ে ছাড়াতে চেষ্টা করার ফলে তার হাতেও আক্রমণ করল । কিন্তু খানিক বাদেই ছেড়ে দিল। হয়তো তার পর্যাপ্ত রক্তপান হয়ে গিয়ে থাকবে। কিন্তু দুজনেই অত্যন্ত দুর্বল বোধ করছিল। অবশেষে অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে দুজনে । আর তার পরদিনই হয়তো দুর্বলতার কারণে নিশাদেবী বাথরুমে পড়ে যান।
(৩)
নার্সিং হোম রক্তস্বল্পতাকেই দায়ী করল মুলতঃ শরীর খারাপের জন্য। দুদিন থাকতে হবে। সঙ্গে বাড়ির কাউকে থাকতে অনুরোধ করল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। বিকাশ সুরভীকে থাকতে বলল। শুনেই প্রথমেই রেহানের কথা মাথায় এল সুরভীর। রেহানকে ওই বাড়িতে একা কিছুতেই রাখা যাবে না। সে এক মুহূর্তও নষ্ট না করে মাকে ধরল ফোনে। নাতিকে রাখার কথা শুনে সুরভীর মা ভীষণই খুশি।
------- আমি তো এনে রাখতেই চাই। তোদেরই তো হাজার ফ্যাচাং। আজ এ ক্লাস। কাল ওই টিউশান। পরশু মক টেস্ট। ছেলেটাকে যে কি চাপে রাখিস। আমার বড্ড কষ্ট হয় জানিস!
------ তুমি এইসব বুঝবে না মা। যা কম্পেটিশানের যুগ। একটু এধার থেকে ওধার হলেই মুশকিল। সব হায়নার দল বসে আছে সুযোগের অপেক্ষায়।
-------- দুদিন আমার এখানে থাকবে। খেয়ে দেয়ে আরাম করে ঘুমোবে। একদম ফোন করে টিকটিক করবি না।
------- ঠিক আছে তুমি নাতি সেবা কর দুদিন। ওর একটা ব্রেকও হয়ে যাবে।
ছেলের ব্যবস্থা করে নিশ্চিন্ত হল সুরভী।
সেদিন নার্সিং হোমেই থেকে গেল সে। তেমন অসুবিধে হল না। এক বোতল ব্লাড দিয়ে আর স্যালাইন দেওয়ার পর নিশাদেবীর চেহারা অনেকটা ঠিক লাগছে। আর একটা দিন কাটাতে পারলেই ছুটি। অনেকেই ফোন করছে। তাদের যথা সাধ্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে সুরভী। আচমকা সন্ধের দিকে একটা নম্বর দেখে এক্টু অবাকই হল সে। বাসন্তীর বরের ফোন। তবে কি বাসন্তী মাসিমার খবর নিতে ফোন করেছে? ফোন কানে তুলতেই বাসন্তীর বরের উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর,
------- দিদি, বাসন্তী আপনাদের বাড়িতে কাজ করতে গেছিল তো! ও এখনও বাড়ি ফেরেনি। অন্য কাজের বাড়িতেও ফোন করেছি। আপনাদের বাড়ি যাবার আগে যে সব বাড়ি যায় সেইসব বাড়িতে কাজে গেছিল কিন্তু আপনাদের বাড়ি যাবার পর আর কোথাও কাজে যায়নি। ও কি আপনাদের ওখানেই রয়ে গেছে দিদি?
------- আমি তো গতকাল থেকে নার্সিং হোমে আছি আমার শাশুড়িমাকে নিয়ে। আমার সাথে ওর তো দেখাই হয়নি। দাঁড়াও, আমিই দাদাকে জিজ্ঞেস করে জানাচ্ছি যে ও সকালে কাজ করতে এসেছিল নাকি!
------- আমার খুব চিন্তা হচ্ছে দিদি। আপনি কি আমাকে এক্টু খোঁজ নিয়ে জানাবেন।
------ নিশ্চই। আমি এক্ষুনি দাদাকে ফোন করে জেনে বলছি।
দ্রুত হাতে ফোন করল বিকাশকে সুরভী।
------ হ্যালো, বিকাশ। বাসন্তীর বর ফোন করেছিল। বাসন্তী বাড়ি ফেরেনি। ও কি সকালে কাজ করতে এসেছিল?
-------- হ্যাঁ, এসেছিল তো। একটু দেরী হয়েছিল। আমার অফিস যাবার সময় হয়ে গেছে দেখে বলল, দাদাবাবু আপনি চলে যান। আমার এখন সময় লাগবে। দিদি তো তিনতলার ঘর মুছতে দেয় না। আমি আজকে ওপর থেকে ভাল করে মুছে তালা দিয়ে পাশের বাড়ির মাসিমার কাছে চাবি রেখে যাব। আপনি নিশ্চিন্তে চলে যান।
তিনতলার ঘর শুনেই সুরভীর শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। সে আর কোন দিকে না তাকিয়ে বিকাশকে মায়ের কাছে আসতে অনুরোধ করে একটা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বাড়ির রাস্তায় ছুটল। যখন পৌঁছল, ওপরে উঠে দেখে বাসন্তী নির্জীবের মত পড়ে আছে। সাদা, ফ্যাকাসে। আর গাছটা আরো বিশালাকার ধারণ করে সিলিং ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। হয়তো পর্যাপ্ত খাবার ছিল বলে কোনরকম আক্রমণের প্রচেষ্টা করল না। বাসন্তীকে কাঁধে করে বেরিয়ে যাবার মুহূর্তে সুরভী দেখল বিশাল বড় একটা ডাল নেমে দরজার ছিটকিনিটা আটকে দিল। ভয়ে এমনিই সাদা হয়ে গেল সুরভী। বাসন্তী তার সর্বশেষ শক্তি দিয়ে বলে উঠল,
------দিদি, আরো চারা হয়েছে। আরো রক্ত লাগবে। রক্ত চাই। রক্ত। আরো । আরো। অনেক। অনে---এ--ক। এর থেকে বাঁচার উপায় নেই দিদি।
পেছন ফিরে সুরভী দেখল ছোট ছোট আরো টিকটিকিখেকো গাছেরা মাথা চারা দিয়ে মাটি ফুঁড়ে উঠেছে। খুশীতে আন্দোলিত হচ্ছে তাদের মাথাগুলো ।
বাহ্ চমৎকার একটি রক্ত খেকো গাছের গল্প। অসাধারণ লেখনী 👌👌👌
উত্তরমুছুন