দেবাশিস ঘোষ

 ঘন কালো আলোর বাড়ি

....................................

সেদিন উই-ডংয়ে 

নেমেছে তুষার ও বারিষ

আর আমার শরীর, আমার আত্মার সঙ্গী, 

প্রতিটি চোখের জলের ফোঁটায় ফোঁটায়

কেঁপেছে

নিজের পথেই থাকো।

তুমি কি দ্বিধায়?

কী স্বপ্ন দেখছো, ওভাবে ভাসছো?

দোতলা বাড়িগুলো আলোমাখা ফুলের মতোই

তাদের নিচেই আমি শিখেছি উদ্বেগ

আর অধরা আনন্দভূমির দিকে

বোকার মতোই বাড়িয়েছি হাত

নিজের পথেই থাকো।

কী স্বপ্ন দেখছো? হাঁটো, হাঁটতে থাকো

হেঁটেছি রাস্তার আলোয় নির্মিত স্মৃতির দিকে

সেখানে আমি তাকিয়েছি ওপরে

দেখেছি আলোর ঢাকনার ভিতরে

একটি আলকাতরা কালো আলোর বাড়ি

আকাশ ছিল অন্ধকার 

আর সেই অন্ধকারের ভিতর পাড়াতুতো পাখিরা

তাদের ওজনটুকু ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে উড়ান

ওরকম উড়তে গেলে আমাকে মরতে হবে আর কতবার?

কোনও কেউ পারেনি ধরতে আমার হাত

কোন স্বপ্ন এতটা সুন্দর?

কোন স্মৃতি

এতটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে?

তুষার ও বারিষ, মায়ের আঙুল যেন,

বিলি কেটে দেয় আমার অবিন্যস্ত ভ্রূয়ের ভিতরে

ঘা মারে জমে যাওয়া গালের ওপরে, আবার

একই জায়গায় ঘা দেয় 

তাড়াতাড়ি। নিজের পথে চলো।

*******

আয়নায় শীতকাল

......................................

১

শিখার কনিনীকার দিকে দেখো

নীলচে

হৃদয়

আকৃতির চোখ

তপ্ত উজ্জ্বল বাকিটুকু

যেটুকু ঘিরেছে তাকে

ভিতরের কমলারঙা শিখা

সেটাই হিলহিল করে ভয়ানক

সে আবার ঘিরে ধরে ফের

অনচ্ছ বাহিরের শিখা

কাল সকালে, সকালবেলায় আমি

দূরের শহরে চলে যাব

এখন সকালে

আগুনের নীল শিখা

তাকিয়ে রয়ছে দূরে চোখকে ছাড়িয়ে

২

আমার শহর এখন বসন্ত সকাল, পৃথিবীর বুকের ভিতর দিয়ে

যদি হেঁটে যাও, না নড়ে সোজাসুজি মাঝখান দিয়ে বয়ে নিয়ে যাও,

সে শহর উপস্থিত হবে, ঠিক বারো ঘন্টা পিছিয়ে সেখানে, 

ঋতু ঠিক ছয়মাস পিছিয়ে ফলত শহরে এখন শরৎ সন্ধে

নিঃশব্দে কাউকে যেন অনুসরণ করে সে শহর পিছু নিয়েছে 

আমার শহরের, রাতকে পেরিয়ে যেতে, শীতকে পেরিয়ে যেতে

নীরবে অপেক্ষা করে থাকি, যখন আমার শহর দৌড়িয়ে 

পিছে ফেলে দেয় সেই শহরটিকে যেন কেউ নিঃশব্দে অতিক্রম করে গেল

৩. 

আয়নার ভিতর অপেক্ষায় শীত

শীতল এক স্থান

ভয়ানক জাড়

খুব খুবই ঠাণ্ডা

জিনিসপত্ররা কাঁপতে পারে না

একসময় জমে যাওয়া তোমার মুখ

পারে না ফেটে যেতে

বাড়িয়ে দিই না হাত

দাওনা তুমিও

ঠাণ্ডা জায়গা এক

যে জায়গাটা ঠাণ্ডা থাকে

ভয়ানক ঠাণ্ডা এখানে

নড়তে পারে না কোনও চোখের তারারা

চোখের পাতারা

কীভাবে বুজতে হয় একসাথে জানে না

আয়নার ভিতরে 

অপেক্ষায় শীত

আয়নার ভিতরে 

তোমার চোখকে আমি এড়াতে পারি না আর

চাওনা বাড়িয়ে দিতে তুমিও যে হাত

৪.

ওরা বলেছিল আমরা উড়ব সারাদিন।

শক্ত করে ভাঁজ করা চব্বিশ ঘন্টা তোমার মুখের থেকে

ফট করে বের হয়ে আসে

আর আয়নায় ঢুকে যায়, ওরা বলেছে।

একবার সে শহরের এক ঘরে আমি আনপ্যাক করি

আমার উচিত ছিল সময় নিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা।

যদি এই শহরের যন্ত্রণা নিঃশব্দে অতিক্রম করে 

আমিও পিছিয়ে যাব নীরবে নিভৃতে

এবং যখন তুমি একটি মুহূর্তও এর দিকে তাকাবে না ফের

তুষারিত আয়নার পেছনে হেলান দিয়ে গুনগুন করবে সুর

ততক্ষণ, শক্ত ভাঁজ করে রাখে চব্বিশটি ঘন্টা রেখে আর 

থুঃ করে ফেলে দিয়ে তোমার উষ্ণ জিভে ঠেলে দিয়ে

তুমি ফিরে এসে দেখবে আমাকে

৫.

আমার চোখদুটো  মোমবাতির ডাঁটি

গড়িয়ে দেয় ফোঁটা ফোঁটা মোম যখন সলতে তাকে শুষে চলে,

চিরে দেওয়ার মতো নয়, যন্ত্রণাদায়ক নয়

ওরা বলে কাঁপতে থাকা নীলচে শিখার মাঝখানে আত্মারা আসে,

আমার চোখের পর আত্মারা বসে আর কাঁপে, আর গুনগুন গান গায়,

দূরে কাঁপে বাইরের শিখা, কাঁপে আরও দূরে যেতে চেয়ে, কাল তুমি 

চলে যাবে দূরের শহরে, এখানে জ্বলন্ত আমি, এখন তোমার হাত শূন্যের 

সমাধিতে রাখো আর অপেক্ষা করো, স্মৃতিরা সাপের মতো তোমার আঙুলে 

দংশন করে, চিরে যাওনা ব্যথা পাওনা তুমি, তোমার অদম্য মুখ পোড়ে না ভাঙে না

বাংলা অনুবাদ দেবাশিস  ঘোষ

Two Poems of Han Kang

Translated by Sophie Bowman from Korean

 

Pitch-Black House of Light

........................................…

That day in Ui-dong

sleet fell

and my body, companion to my soul

shivered with each falling tear.

Get on your way.

Are you hesitating?

What are you dreaming, hovering like that?

Two-storey houses lit like flowers,

beneath them I learned agony

and towards a land of joy as yet untouched

foolishly reached out a hand.

Get on your way.

What are you dreaming? Keep walking.

Towards memories forming on a streetlamp, I walked.

There I looked up and inside the lightshade

was a pitch-black house. Pitch-black

house of light

The sky was dark and in that darkness

resident birds

flew up casting off the weight of their bodies.

How many times would I have to die to fly like that?

Nobody could hold my hand.

What dream is so lovely?

What memory

shines so brightly?

Sleet, like the tips of mother’s fingers,

raking through my dishevelled eyebrows

striking frozen cheeks and again

stroking that same spot,

Hurry up and get on your way.

 

Winter through a Mirror

 

1.

Peer at the pupil of a flame.

Bluish

heart

shaped eye

the hottest brightest thing

that which surrounds it

orange inner flame

the thing which flickers most

that which surrounds again

half-transparent outer flame

tomorrow morning, the morning I

depart for the furthest city

this morning

the bluish eye of a flame

peers beyond my eyes.

2.

Now my city is spring morning, if you pass through the core of the earth, bore straight through the middle without wavering, that city appears, the time difference there exactly twelve hours behind, the season exactly half a year behind so that city is now an autumn evening, as though silently following someone that city follows behind mine, to cross over the night to cross over winter I wait silently, while my city outruns that one like somebody silently overtaking

3.

Inside the mirror winter is waiting

A cold place

An utterly cold place

It’s too cold

objects cannot tremble

your (once frozen) face

cannot shatter

I don’t reach out my hand

you also

don’t want to reach out your hand

A cold place

A place that stays cold

It’s too cold

pupils cannot waver

eyelids

do not know how to close (together)

Inside the mirror

winter waits and

Inside the mirror

I cannot avoid your eyes and

You don’t want to reach out your hand

4.

They said we would fly for an entire day.

Tightly fold twenty-four hours pop it in your mouth and

go into the mirror they said.

Once I unpack in a room in that city

I should take time to wash my face.

If the suffering of this city silently overtakes

I will silently lag behind and

when you are not peering at it for a moment

lean against the frosty back of the mirror

and hum carelessly.

Until, having tightly folded twenty-four hours

and spat it out nudged with your hot tongue

you return and peer at me

5.

My eyes are two candle stubs sliding drips of wax as they consume the wick, it is not searing nor painful, they say that the quivering of the bluish flame core is the coming of souls, souls sit on my eyes and quiver, they hum, the outer flame swaying in the distance sways to get further off, tomorrow you leave for the furthest city, here I am ablaze, now you put your hands into the tomb of the void and wait, memory bites your fingers like a snake, you are not seared nor in pain, your unflinching face does not burn or shatter

 

Two poems by Ko Un

Published in The Blue Vein, 2016 Number 3