অমিত চক্রবর্তী
১
রবিবার
এই সব রবিবারে আমরা জুতো বদলাই, গান শুনি অজানা, তুমি শুনছ সোমলতার রবীন্দ্রসঙ্গীত, আমি ইয়ার-ফোনে জ্যাজ স্ট্যান্ডার্ড, দু’দিন আগেও এইসব ছিল আমাদের চেনাশুনো বৃত্তের বাইরে। আজ আমাদের নির্ভীক হ্যাঁ বলা সমস্ত অচেনায়, স্কুলের পড়ার মত আর সেই ত্রস্ত, অনিশ্চিত ঘাড় নাড়া নয়। আজ আমি তুমি হতে পারি সহজে, তুমিও আমি হতে গিয়ে একবারই থমকে গেছ, পর্যুদস্ত নও তাতেও। এখনই হাফ টাইমের বাঁশি বাজবে, খালিপায়ে এক কিশোর আনবে বালতি ভরা জল, দুটো গ্লাস, একটি পুরুষ অন্যটি মহিলা। আমাদের দেহে মনে ভূষণে আবার চাঞ্চল্য জাগবে, আমরা তারুণ্য ফিরে পাব। এই আমাদের রবিবার, আমাদের উচ্চতর রেজোলিউশন, প্রতিটি ইঞ্চিতে ঠাসা বেশি বেশি পিক্সেল, এই আমাদের হাইপার রিয়েলিজম, বাস্তবের চেয়ে বেশি জীবনধারণ ।
২
ব্রেনওয়াশ
আপনারা কাঠঠোকরা দেখেছেন কখনও, বলে চমকে দেয় সেই মঞ্চস্থ তরুণ, অস্থিসার যুবা, স্বরচিত গল্প পড়তে উঠেছিল বোধহয়, হঠাৎ এ কথা কেন, ব্রেনে ঝড় বয়ে যায় আমাদের, নেটওয়ার্কে চক্কর, ঘুরপাক খাই আমরা, এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ, তোষামোদিতে নিশ্চয় ভাঁটা ধরেছে তার, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে - অথচ দেখ কত গোপন কথা রয়েছে লেয়ারে, অস্থিমজ্জায় কত নীরব স্তর, আজ কিন্ত মুখর হয়েছে সে, সরবে হাজির, অচেনা রূপক শোনাতে চায়, পঞ্চতন্ত্রের বাইরের ব্যাখ্যা, নীতিকথা শোনাতে চায়, বাচ্ছারা শুনছে এখন মুগ্ধ হয়ে, মা-রা কিন্তু সতর্ক, ব্রেনওয়াশ করবে না কি ওই ছেলে, ও বরং লাফিয়ে নেমে আসুক উঁচুতলার মঞ্চ থেকে।
৩
হারানো প্রাপ্তি
ইশারায় ডেকে আনা এবং তারপর আদ্যোপান্ত বিচলিত করা, অস্থির, অনিশ্চিত করা, এইভাবে সন্ধ্যা নামে আমাদের অস্তিত্বে। তার যে শুরু কোথায় এবং শেষটা একটানা না থমকে থমকে, তার দ্বন্দ্ব বা সংকট যে কোন অতলের বাসিন্দা, এই জিজ্ঞাসায় আমরা দাঁড়িয়ে পড়ি, কৌতূহলী আমরা-র দল। আলো নিভে যায় এবার, যায় কি নিভে, প্রায় নেভে, স্বপ্ন থেকে পাওয়া অতীত বা অতীত থেকে পাওয়া স্বপ্ন খেলা করে এখন সন্ধ্যার ইজেলে, গা ছমছমে সেই সব ছবি, বহুমাত্রার, চামড়া ফেটে দাগ, দাগ না ছোবল, এক জীবন উপচে পড়ে অন্য জীবনের খাঁজে, অশ্রুত, অনচ্ছ। কী করে মুক্তি পাব এই নিরন্তর ছটফটানি থেকে, এই বিরামহীন কী যেন চাই, কী যেন চাই, এই হারানো-প্রাপ্তি ঐতিহ্যের ঢেঁকিকল থেকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন