সোমা দত্ত
ভালোবাসো? যদি নাও বাসো তবু...
মাত্র দুটো নরম শব্দ। আলতো একটা টোকা।
ভালোবাসেন আমাকে?
কথাটা শোনামাত্র টুপ করে পায়রা পটি করে দিল আমার সাদা কালো ডোরাকাটা টি শার্টে। আমি অবশ্য পটি বলিনা, হাগা বলি। কিন্তু ওই 'ভালোবাসা' শব্দটির দৌলতে অটো কারেক্ট হাগা কে পটি বানিয়ে দিল। এই হল এইসব আপাত মসৃণ শব্দের চক্রান্ত। আদতে ছিপের মুখে ঝুলিয়ে রাখা কেঁচোর মন্ড। গিলে নিলেই গোত্তা মেরে টানবে। তখন কোঁত কোঁত করে আপনি যা উগরে বার করতে চাইবেন আর যা বেরোবে তার উপরে আপনার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। হ্যাঁ, আপনি সম্পূর্ণ অপারগ। আপনার বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে। আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অসার। আপনার হাইপোথ্যালামস অ্যাকটিভেটেড। ভিতরবাড়ির ক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে যা প্রতিক্রিয়ার পরোয়া করেনা। তবু আপনি কাচা, ইস্তিরি করা টিশার্ট, রেমন্ডের প্যান্ট, গতবার জন্মদিনে উপহার পাওয়া ফসিলের হাতঘড়ি, উডল্যান্ডের শু পড়া পা আর একজন প্রাইভেট সংস্থার ধোপদুরস্ত চাকুরে। আপনার মুখে হাগা মানায় বুঝি? আপনি 'হ' উচ্চারণ করলেও আপনিই সেটা 'প' হয়ে যাবে। আমার অবস্থাও মশাই পুরো আপনার মতো। কিন্তু পায়রা যে কী প্রচন্ড ন্যাস্টি রকমের মিসচিভিয়াস সে আর বলার নয়। তখনই ওর ওই রামবাণ প্রয়োগের দরকার পড়ল। ভাবা যায়! গোলাপি রঙের ভালোবাসা অবশ্য খুব প্রম্পট। উদ্বেল হয়ে উঠল। সঙ্গে সেই চিরপরিচিত ছদ্মবিস্ময়,– এ রাম!
এবার অকুস্থলে রাম। আচ্ছা ভেবে দেখেছেন এই ধরনের মধ্যবিত্ত প্রকৃতির(যা ভয়াবহ নয়) দুর্ঘটনায় মহিলাদের মুখে 'রাম' কেন উচ্চারিত হন? আমার মনে হয় সীতার সঙ্গে অন্যায়ের ফল। ওইজন্যে ভদ্রলোককে সুন্দরী মহিলার ঠোঁটেই আটকে থেকে যেতে হয়েছে যুগের পর যুগ। তার বেশি এগোনো জোটেনি কপালে। খাটো করে দেখলে চলবে না। এ-শাস্তি যে কতবড় শাস্তি! যাইহোক ভালোবাসা ততক্ষণে রুমাল দিয়ে শার্ট থেকে পটি ঘষে অনেকটা সাফ করে দিয়েছেন।
–চা খাওয়াবেন না?
কোমল শব্দ তার তেমনই করুণ নাদ। একে অবহেলা করা যায়? অতএব ছিমছাম ক্যাফেটেরিয়ায় চলে এলাম ভালোবাসাকে সঙ্গে নিয়ে। এখানে পায়রা নেই, ওয়েটার আছে। ওয়েটার এসে একটা ঝকঝকে মেনু কার্ড এগিয়ে দিলে, সেটা ভালোবাসার দিকে এগিয়ে দিলাম। সে বলল, শুধু কফি!
আমি বললাম, প্রচন্ড খিদে! আপনি না খেলে একা খেতে পারব না।
ওরকম সন্দেহের চোখে তাকাবেন না। এটুকু রং ঢং প্রত্যেকের রিফ্লেক্সে থাকে। তাছাড়া বুঝছেন না কেন যে আমি ঘাবড়ে গেছি। আমার ভাবার সময় চাই। কিশোর বয়স থেকেই সুন্দর মেয়ে দেখলে দেখি, ভাল লাগে। এখানেও অতটুকুই ছিল মনে হয়। মানে আমি কনফার্ম করছি না, হয়ত কিছুটা... কিন্তু বারবার মুখোমুখি দেখা হওয়া, বাসের সিট জোগাড় করে বসতে দেওয়া, ভিড় বাসে পুরুষ যাত্রীদের অশালীন ধাক্কা থেকে তাকে সামলে নেওয়া, এসব তো সাধারণ কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। ভুল বলতে হ্যাঁ সেদিন অফিস পাড়ার যে দোকানে মাঝেমধ্যে খেতে যাই আর দৈবাৎ তার আর আমার সময় এক হয়ে যায় সেখানেই ওর চায়ের কাপে লেগে থাকা লিপস্টিকটা একটু ছুঁয়েছিলাম বেখেয়ালে। হঠাৎ দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি গ্লাসটা নিয়ে বিনবক্সে ফেলার একটা সস্তা, বাজে অভিনয় করলাম। ওটা বড় কাঁচা কাজ ছিল স্বীকার করছি। আচ্ছা না হয় একটু পছন্দ করি হয়ত, ফলো করি মেনেও যদি নিই... তাই বলে সরাসরি ভালোবাসা? এটা তো ভীষণ আকস্মিক আক্রমণ। রীতিমতো কঠিন একটা পরীক্ষায় বসিয়ে দেওয়া। এটা ঠিক নয়।
ভাবার সময় নিতেই হবে যতটুকু পাওয়া যায়।তাই ওয়েটার আর মেনুর অছিলায় একটু ভাবার সময় নিলাম। ভালোবাসার চোখ স্যান্ডউইচ আর ফিস অ্যান্ড চিপসের মধ্যে ঘুরবে আর সেই লহমায় আমি রিহার্সাল দেব। আচ্ছা তখনই তো না বলে দিতে পারতাম। সেটা বললাম না কেন বলুন তো! বেশ ঠিক আছে বলিনি যখন এখন বলে দিই তাহলে। বলে দিই যে না, ভালো টাল বাসি না। ভালোবাসতে যাব কেন অ্যাঁ? সুন্দরের অনুগত হলেই ভালোবাসতে হবে এমন কোন কথা নেই। ভালোবাসিনা যান। তাছাড়া আমি বিবাহিত। একটা ছ'বছরের ছেলে আছে। বউ রোজ টিফিন বানিয়ে দেয়। জামা ইস্তিরি করে দেয়। বারান্দা দিয়ে ঝুঁকে আমার বাইরে যাওয়া দেখে। রাতে পাশবালিশের মতো করে পাশে শোয়। আমি কী করে ভালোবাসব? এরকম প্রশ্ন বুঝি কেউ করে?
এই শোনামাত্র ভালোবাসা গভীর কালো ভ্রমরচক্ষু তুলে নিদারুণ করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। আর কোনদিন হয়ত এক বাসেও উঠবে না। তাতে কী হয়েছে? ক্যান্টিনে এক জায়গায় বসতে আসবে না আর। তাতেই বা কী হয়েছে? আবার কোনদিন তাকালে হয়ত সরাসরি চোখে চোখ রেখে বলবে, –লজ্জা করে না? তখন? এতে তো অনেক কিছুই হতে পারে। সব থেকে বড় কথা তুমুল মানহানি হবে ভিতরে ভিতরে। বরং থাক। অতটা বাড়াবাড়ি রকমের সতীত্ব নাই বা দেখালাম। সতীত্ব শব্দটা পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তো? নাহলেও আমিই নাহয় প্রথম প্রয়োগ করলাম। অত সতীত্ব দেখাতে পারলাম না, সরি। ওভাবে সরাসরি না করাটা অসভ্যতা। মানে শুধু ওর সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গেও অসভ্যতা। মনে হচ্ছে ব্যাপারটা একটু ঘুরিয়ে ম্যানেজ করতে হবে।
ভালোবাসা ততক্ষণে মেনু নির্বাচন শেষ করেছে। –কফি আর ফিসফ্রাই বলি?খিদে মিটবে তো এতে?
রেস্টুরেন্টের ওয়েটাররা তুমুল ইন্টেলিজেন্ট। ইশারা করলেই সব বুঝে যায়। স্মিত হেসে সে অর্ডার নিয়ে চলে গেল। ভালোবাসা ফের ভ্রমর চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকায়। এবার প্রশ্ন ঠোঁটে নয়, চোখে। এটা আরও মারাত্মক। এক কাজ করি। অন্যদিক দিয়ে যাই। সে কোথায় থাকে, বাড়িতে কে কে আছে ইত্যাদি। একই বিল্ডিং এর দুটো অফিসে আমরা দুজন কাজ করি। ভালোবাসা অবশ্য খুব সম্প্রতি জয়েন করেছে। আর এটুকুই শুধু আমি জানি ওর সম্বন্ধে। সুতরাং প্রশ্নের দীর্ঘ অবকাশ আছে। অবকাশের দীর্ঘ সুযোগ আছে। আর এই সুযোগের শর্তবিহীন প্রাপ্তি যে কত অমোঘ সম্ভাবনা সেকথা প্রতিটি ভদ্র বাঙালি জানে।
পরের দৃশ্যে চমকে উঠলাম আমি। ভালোবাসা কী থট রিডিং জানে? নাহলে হঠাৎ বিনা মেঘে রৌদ্র ভেদ করে বজ্রপাত কী করে সম্ভব? বেহালায় ছর টেনে সে বলে উঠল, –আমি কিন্তু বিবাহিত!
পায়ের তলার পৃথিবী কি একটু দুলে উঠল? সামান্য একটু ভূমিকম্প? চারিদিকে এত ঘন কুয়াশা কেন? ওয়েটার টকাস করে কফি রাখল। ফের ব্যাঘাত! প্রথমে পায়রা দ্বিতীয়বার কফি কাপ। সম্ভাবনা এভাবেই আমার জীবনে এসেছে বারবার। আঘাতে এবং ব্যাঘাতে। ভালোবাসা দুর্বার। শেষপর্যন্ত আমাকে নিশ্চিন্ত করল। যে ভয়ানক হিমালয় প্রমাণ ভার এতক্ষণ আমাকে ঢোক গিলতে বাধ্য করেছে বিনা বাক্যব্যয়ে, ভালোবাসা নিমেষে তা হালকা করে দিল। ব্যাপারটা এত আরামদায়ক যে মুখ ফস্কে বলে ফেললাম, –সে তো আমিও...
ভালোবাসা একটু চমকে তাকাল।
আমি নেপথ্যে গুনগুন করলাম। প্লিজ ভেঙে যেও না। এই প্রগলভতা আমার সাময়িক উত্তেজনা। এটুকুই আমার সবটুকু নয়।
ভালোবাসা কিন্তু এবার একটু হার্ডার সাম। হার্ডওয়্যার পড়বেন না আবার। আমি হার্ড-ই লিখতে চেয়েছি। আপনি যাই বলুন কঠিন আর হার্ড এর মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে সেটাকে অতিক্রম করতে আমি পারিনা তাই ইংরেজির সাহায্য নিলাম। যদি কঠিনতর অঙ্ক বলতাম সেই অ্যাপিলটা থাকত? মেক ইট হার্ড আর কঠিন করে তোলো বা শক্ত করে তোলো কি এক? যাইহোক ভালোবাসার হার্ডার সাম-এর পরবর্তী ডেলিভারি হল, –তাহলে?
এবার এই তাহলের উত্তর কী দিই? 'তাহলে সম্ভাবনা সমুদ্রসমান?' বা 'তাহলে চল যাই আরও কিছুদূর?' নাকি সিম্পলি 'তাহলে কী?'
না এগুলো রদ্দি। সব বাতিল।
কিছুই বললাম না একটু হাসলাম। বউ একদিন বলেছিল, সবকথার উত্তর দিতে নেই। হেসে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। বিপদে আর অসুখে বউই এগিয়ে আসে। সেকথা সত্যি প্রমাণিত করলাম। পাশের বাড়ির রমাপদদা বলে, বিপদে আর অসুখে থাকেন ভগবান। চন্দ্রিল বলে, অসুখে বউ কেন নার্স থাকতে পারেন। বিপদের ব্যাপারে চন্দ্রিল কিছু বলেনি। বউ মানেই বিপদ এটা ধরে নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল হয়ত। আসলে সেন্টিমেন্ট আর অ্যাটাচমেন্ট দুটোই নিজের মতো লজিক বানিয়ে নেয়। আমাদের বস আদিত্য রামচান্দানিকে জিজ্ঞাসা করলে হয়ত বলবে, বিপদে আর অসুখে ওর সেক্রেটারি লীনা মাথুর এগিয়ে আসে।
ভালোবাসা অস্থির হল। সে জানতে চায় ভালোবাসি কিনা। কী বলি বলুন তো! ভালোবাসা কাকে বলে এটা সত্যি করে কী বলা যায়? অনুভূতিকে কেন্দ্র করে যত ধরনের স্নায়বিক ক্রীড়ার নাম রয়েছে সবই তো ফিকটিশাস। ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। রাইট হ্যান্ড সাইড ইস ইক্যোয়াল টু লেফট হ্যান্ড সাইড প্রমাণ করা যায় না। তবে ভালোবাসা একটি ধারণা ছাড়া অন্য আর কী? একটা শব্দ, নাম একটা আবেগ, স্নায়ুতন্তুর কম্পন। ভালোবাসার কথা বলতে আমরা ভালোবাসি। যুগের পর যুগ একটা শব্দের উপর লক্ষ লক্ষ আবেগ, ঘটনা, মিথ চাপাতে চাপাতে আজ এই চাপানউতোর। ভালোবাসার আজ আর কোন স্বাধীনতা নেই। সে একটি বিধিবদ্ধ সিলেবাস। একটি রীতি। ইলিশ মাছের বেগুন দিয়ে ঝোল অথবা সর্ষে ভাপার মতো চিরাচরিত রেসিপি। ভালোবাসার নুন, হলুদ, মরিচগুঁড়ো সব ফিক্সড। তুমি মন চাই উপকরণ মিশালে চলবে না। ভালোবাসা বলতে এই আর সেই বুঝি। তার নয় ছয় করা চলবে না।
তাই ভালোবাসার দিকে তাকিয়ে আছি এই অগাধ বিস্ময় নিয়ে। সে অপেক্ষা করছে আমার দু চোখ থেকে ছলকে পড়া কথার।
ভালোবাসো? যদি না বাসো? তবে আমার যাবতীয় লাস্যের প্রতি ভঙ্গিমা কীসের তোমার? এই যে সেদিন মুখোমুখি রাস্তায় অপলক দেখছিলে... ধাক্কা খেলে ল্যাম্পপোস্টে... এই যে সেদিন সামান্য পেনের ঢাকনা তুলে দিতে এলে। বললে, এটা আপনার; ক্যান্টিনে পড়ে ছিল। এই যে সেদিন অকারণে হাসলে আমার নতুন পোশাক দেখে... এই যে সেদিন মন খারাপের সময় এমন তাকালে যেন কী প্রবল বুঝে গেছ ব্যথা, যেন আমাকেই একমাত্র সেইসব কথা খুলে বলা দরকার! সেসব কী ছিল তবে?
সেসব কী ছিল আমিও আনস্ক্র্যামবল করে দেখতে চাইছি। শব্দছক ভেঙে ভেঙে তৈরি করছি সাহসী উপমা। আমার আর ভালোবাসার মধ্যে জুড়িয়ে যাচ্ছে কফি আর ফিসফ্রাই। আমি জাগতিক হে ব্রহ্মবাদিনী। আমি মায়ার কর্ণকুহকে আবদ্ধ। এবং তুমিও...
ঠিক সেই মুহূর্তে, শব্দছকে খুঁজতে খুঁজতে, আমার ভিতর একটা নদী জন্ম নিল। আহা কী প্রশান্তি উত্তর খুঁজে পাওয়ার। তবে এ উত্তর সে উত্তর নয় কন্যা। প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন। এও একধরনের নির্মাণশৈলী। আপনি এসকেপিস্ট বলতেই পারেন। আপনি ভালোবাসায় বিশ্বাসী আমি ভালোবাসার স্বাধীনতায়। ভালোবাসাকে সেন্ট্রালাইজড করতে পারিনা। আমি গোলযোগে বিশ্বাস করি। প্রাণের উৎপত্তি একটি গোলযোগের ঘটনা। বিগ ব্যাং। দেয়ার ইজ নো ভালোবাসা ম্যাডাম। সব কিছুই সৃজন। তোমার মুখের ওই চার অক্ষর, ওই শব্দ শুধুমাত্র সৃজন। আমরা তার রং আর প্যালেট।
ফিশফ্রাইতে ছুরি চালালাম। খুব ধীরে মাখন মাখানোর মতো করে, একধার থেকে ছোট্ট একটি টুকরো কেটে নিলাম। কাঁটা চামচে বিঁধিয়ে নিলাম গরম ভাজা তুলতুলে ভেটকির তরুণাস্থি। ইশারায় ভালোবাসাকে বললাম খেতে। সে একটু খুটে খেল কী খেল না যেন। ঠোঁট দুটো সামান্য ফাঁক করে কণামাত্র খাদ্য। ভালোবাসার খুঁটে খাওয়া মাছ, প্লেট থেকে আমার অর্ধেক সাবাড় করা মাছের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি বললাম, যদি বাসি তাহলে কী বলবেন? যদি না বাসি তাহলেই বা কী?
ভালোবাসা বুদ্ধিমতী। সে বলল দুক্ষেত্রেই কিছু বলবনা। জানতে এসেছি, বলতে আসিনি।
এবার আমার হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে। আমি ধরা পড়ে যাচ্ছি। আমার লাম্পট্য, চাতুরী সমস্ত দেখা যাচ্ছে। আমার দৃষ্টি বদলে যাচ্ছে।
ভালোবাসা নাগাল পেয়ে যাচ্ছে আমার তরল মুহূর্তের। এতদিন নীল সবুজ ফ্যান্টাসির মধ্যে বেশ ছিলাম। সেখানে আমার সময় মতো খোলস থেকে বেরিয়ে আসত নরম মাংসপিন্ড। সময় ফুরোলে খোলসের ভিতরে তাকে রেখে দিতাম। শরীরে বয়ে যেত গঙ্গা যমুনা। প্রাকৃতিক ধ্বস আর বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে আমি আর ভালোবাসা দুই বিপরীত গলি থেকে বেরিয়ে একে অপরকে ছুঁয়ে বেরিয়ে যেতাম। আমার পিছনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকত সপ্তপর্ণা। ভালোবাসার পিছনে চিরাচরিত সম্পর্কের পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকত তার সাংসারিক উপবীত। মধ্যে বিপর্যয়ের গর্জনশীল চল্লিশা।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ক্লাস সেভেনের ভূগোল বইয়ের মতো কিশোর হয়ে উঠত স্বর্গের বাগানে। কী মধুর গন্ধ, কী প্রবল উপস্থিতি স্বপ্নের। আর আজ এই ফুলের মতো সুগন্ধ ছড়ানো উপনিবেশ তছনছ করে আমাকে স্বপ্নের বাইরে নিয়ে এলো সে।
সে শুধু জানতে চায় ভালোবাসি কিনা? সে কী জানেনা সদর দরজা খুলে দিলে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার অর্থ হয়না? ভালোবাসা কাকে বলে অনুপমা? এই ফিশফ্রাই আর কফির গোধূলি প্রশ্ন বোঝেনা। সংক্রমণের আধার খোঁজে। রোগগ্রস্ত দুটো মানুষ একসময় এঁটো প্লেট আর কফি মগ ছেড়ে এগোয় দুর্ঘটনার দিকে। শ্রাবণ মাস, প্রবল বৃষ্টিপাত। অন্ধকার ভেঙে চাবুকের মতো জেগে উঠছে বিদ্যুৎরেখা। ক্যাফেটেরিয়ায় ক্রমশ মুছে যাচ্ছে লং শটে। দৃশ্যত অজানা বৃষ্টিবহুল পথে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে তারা দুজনে। সে পথ জটিল, সে পথ স্নায়বিক, প্রবল মাংসাশী তার ক্রিয়া। তাকে ভালোবাসা বলো অথবা পরকীয়া।
খুব সুন্দর
উত্তরমুছুনখুবই ভাল লাগল। কাব্যধর্মী । অনেকটা ড্রামাটিক মনোলগের মতো।
উত্তরমুছুনভারী স্মার্ট তোমার লেখা !
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো 🌹
উত্তরমুছুনখুব খুব ভাল লিখেছেন।
উত্তরমুছুনঅপূর্ব। এ লেখা শুধু আপনার কলমেই সম্ভব। এমন মেদহীন সপাট লেখা এসময়ে খুব কমজনই লেখেন।
উত্তরমুছুনসাপাট তানের মত সুন্দর লেখা। তবে 'র' ও 'ড়' একটু বুঝে লিখলে আরও ভালো।
উত্তরমুছুনকথাসাহিত্যিকের আশ্চর্য কলম দীর্ঘজীবী হোক। সর্বৈব মঙ্গল কামনা করি।
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগল সোমা। পৃথা চট্টোপাধ্যায়।
উত্তরমুছুনThe pendulum of the mind oscillates between Sense & Nonsense, not between Right & Wrong - not my words though.
উত্তরমুছুনসত্যি ,দর্শন গভীর না হলে কি জীবনে দার্জিলিং চাষের সুবাস আসে?চুকচুক করে বারান্দায় বসে পান ও স্নান।আহা!বেস্ট
উত্তরমুছুনবাহ্! ভারি চমৎকার লেখাটি।
উত্তরমুছুনমুগ্ধতা অসীম
উত্তরমুছুনমুগ্ধতা অসীম
উত্তরমুছুনএই লেখা মনে নতুন লেখার জন্ম দিলো .... এভাবেও প্রকাশ কৱা যায়? ❤️
উত্তরমুছুনবেশ প্রাসঙ্গিক আর নির্মেদ টান টান
উত্তরমুছুনইন্দ্রানী ভট্টাচার্য
অতি চমৎকার (... কাজরী বসু)
উত্তরমুছুনউফ্।কী পড়লাম!কলমসুধায় ঋদ্ধ হলাম।
উত্তরমুছুনখুব ভাল লাগল। অনিয়ন্ত্রিত স্বগোতক্তির মত। বিমান মৈত্র
উত্তরমুছুনতোমার লেখার দর্শন উদাস তরলের মিশে এক মায়াময়তা তৈরি করে। কিছু ভাবার আগেই স্রোতে ভেসে যাই। বারংবার অবগাহন অনিবার্য হয়ে ওঠে।
উত্তরমুছুনশংকরনাথ চক্রবর্তী মুগ্ধ
উত্তরমুছুনশংকরনাথ চক্রবর্তী মুগ্ধ
উত্তরমুছুন