রূপক চট্টোপাধ্যায়

 



দেখে দেখেই লিখছি ~

জিরাফের চেয়েও দীর্ঘ গলার রাত হয়!

ডারউইন একথা জানতেন না।

সুলেখা দি জেনেছিলেন।


সুলেখা দি তার বর কে নিয়ে হাসপাতাল 

পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিলেন,

রাত তখনও বাকি।


শ্মশান পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিলেন 

রাত তখনও বাকি।


আজ নিঝুম বারান্দায় বসে বসে

সোঁদালী গন্ধ মাখানো পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে 

এখনো বিড়বিড় করেন -


'বিভাস রাত কি এখনো শেষ হয় নি?'


আর একদিন অন্তত ভালোবাসতে দিও,

আর একদিন অন্তত আলো আসতে দিও,

টেবিলে রাখা গীতবিতানের ওপর!


ওই তো আমার একমাত্র নৌকা। ভরাডুবির। 

ওই তো আমার একমাত্র সন্তরণ। লবন হ্রদের। 


জড়িয়ে রাখার শেকড় বাকড় ছিঁড়ে 

ব্রহ্ম থেকে টসকে পড়েছি।

কাম হীন শরীরে দেবীকে দেখেছি 

অভ্রনদীর জলে উন্মুক্ত আলোর চেতনায়।

লজ্জাহীন মীন জন্মে আমিও পুরুষ হতে পারি!

তারপর থেকেই এ সমাজের কাছে

ব্রাত্য আমি। অভিশপ্ত। ঈশ্বরহীন কৃতদাস। 


একবার,  অন্তত একটিবার

গীতবিতান আঁকড়ে আমিও তোমাকে পার হতে চাই।


এ কূল ছেড়ে চলে যেতে চাই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের দেশে, ভালোবাসার মৃতদেহ হতে,


 ঘেন্নার কৃমি জন্ম ফেলে কৃষকের ছদ্মবেশে!


ঘেন্নার ভেতর কৃমি জন্ম ফেলে এসেছি। 

চেতনার আবছায় দাঁড় টানে

কৃশকায় পুরুষ। তার মুখে অস্পষ্ট মধ্যযুগ।

শরীরে এখনো কাঁচা পৃথিবীর শ্যাওলা জড়িত হৃদয়।

সজনে ডালে কুহু ডেকে ওঠে। মাঠ থেকে সাঁঝ পথে

ফিরে আসে কিষাণীর রণ-ক্লান্ত শরীর।

এই পর্যন্ত আমাদের জীবন লেখা থাকলেও চলে।

আমরা বেঁচে আছি শেকড়ে সোহাগে।

বেঁধে আছি মাটিতে মায়াতে।


এর বেশী পদাবলী,  হয় না জলে অন্নে আর

রাধাবিনোদিনী এর বেশি কাঁদতে পারে না হে

নওলকিশোর! 


৫ 

অনাহার জড়িত স্নায়ুরজ্জুর জট খুলে

শেষ পর্যন্ত জলকাদা মাখানো

প্রত্নতাত্ত্বিক বিকেলটা উদ্ধার হলো।


খুব পরিপাটি করে

ধুয়ে মুছে তাকে বসানো হলো

মাঝের চেয়ারে। কাঁচের জানলার ওপার

ব্যস্ত শহরের প্রবাহিত জন কোলাহল! 

সামনে ধূমায়িত কফিমগ। 


চারপাশে জিজ্ঞাস্য চোখের স্থিরতায় 

থমথম করছে চরাচর। কিছু তো বলুন এবার?

আপনার সেই সব অতীতচারণ। দু চার কথা!


হঠাৎ একটা দস্যি মেয়ে নাচুনি আনন্দে ঘরে এসে

বললে - ' এই চল খেলতে যাবি!


সে বেরিয়ে গেলো। কোন উত্তর না দিয়েই!



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

মঞ্জরী গোস্বামী