রাজদীপ ভট্টাচার্য
লাল টুকটুকে সেই ভোর
এখন রুপোলী চুল ঝিলিক ঝিলিক মারে
হাঁটুতেও ব্যথা আর কোমর মনের জোরে টান
দুই-পা হাঁটতে জোরে বুকেতে হাপর চলে
একগাদা ওষুধের বিল চড়ে উড়ুউড়ু মহাকাশযান
আশীর্বাদের দিকে দ্রুত উঠে যাওয়া করতল
কপিকল ফলিডল সবেধন নীলমনি সংসার টলমল
তবুও ইচ্ছে করে আজ ফের ঢালুপথে সররায় নামি
ছেঁড়া প্যান্ট রংচটা ঢলঢলে জামা দিয়ে গায়
কে যায় কে যায় বড় চেনা লাগে – ওই তো আমিই!
ছাত্র পড়াই তবু ঘাম হয় ক্লান্তি আসে না
খিদে পায় দুর্মর খিদে পায় শুধু সারাদিন
একটা বাপুজি কেক এক পেট জল তাই
অনেক লড়াই করে যুবভারতীর গেটে
মিলেছে টিকিট বেশ গ্যালারি খিস্তিময়
বিজয়ন বিজয়ন কালো হরিণের গতি
হিরো কাপ ফাইনাল আলোকোজ্জ্বল মাঠ
জয়সূর্যর ব্যাটে গ্যালারিতে উড়ে যায়
ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে কালো হাত শাসকের
মিছিল মিছিল যায় গণসঙ্গীত গায়
পাড়ায় পাড়ায় সব বৈশাখ-জষ্ঠি
রবীন্দ্র-নজরুল ফটো কই ফটো কই
কে কে দেবে মালা আর কবিতায় কানে তালা
আহা ওই শাড়ি পরা নতুন এসেছে ভাড়া
কার বাড়ি! কার বাড়ি! শুনেছি মা ডেঞ্জার
বাবাটা উদাস আর রাত করে ফেরে বেশ চুপচাপ একা
চাঁদা চাই বেল টেপ, দেখেশুনে ফিরে গেল
মেয়ে আসে পরে মা, তুই বল তুই বল
তোতলা বুবাই বাদে বাকি সব ভোঁ-ভা চারপাশ ফাঁকা
লরি ধর হাত দেখা – দিবি না মানে কী শালা!
ব্যাবসা করবি এই নাকের উপর তবু, বাপ দেবে
ছেড়ে দেব! খাল খিঁচে রেখে দেব – চিনিস আমায়!
রাত জেগে কালীপুজো - খিচুড়ি - কারণবারি
ঠেকাচ্ছে দশ টাকা! শাল্লা মক্ষীচুষ!
ঢিল মার মাঝ রাতে, টাইট দে টের পাবে নাগর জামাই
এসেছে কোথায়, চল কার্তিক ফেলে আসি
শোভা বৌদির ঘরে হেবি হবে খাওয়া ফ্রি
মনা দা কাজের না, অমন ডবগা বউ
কোলে মা ভবানী তবু, চান্স দেবে? কত শখ
মুড়ো ঝাঁটা চেনো চাঁদু! এয়সা দেবে না ঝাড়
কী জিনিস ভালো জানি, পাশের বাড়িতে থাকি
এক ফালি মাঠ জুড়ে অত কন্ডোম কার!
তুই খালি ওই গোন, শুনেছিস ফুটেদার
মুটকি মেয়েটা নাকি গতকাল রাত থেকে
পুরো হাওয়া, এপাড়ার লড়কি পটালো কে?
চোখের উপর থেকে পেস্টিজ পাংচার
গাঁড়েতে গ্যামাক্সিন, বড়বাবু সক্কালে বলে গেছে এসে—
নিজেরা খুঁজুন গিয়ে কালীঘাটে বিয়ে সেরে
দেখুন উঠেছে কই দু’চার দিনের পরে
পকেটে পড়লে টান ঠিক ফিরে আসবেই শেষে
পোস্টে পোস্টে চোং – হ্যালো হ্যালো টেস্টিং
এক দুই তিন চার সাফল্যমণ্ডিত বিচিত্রানুষ্ঠান
দলে দলে যোগ দিন, হারমোনিয়াম আন
নাটকের গোঁফ খুলে প্রধানং অতিথিকে
ফুল দিবি, বোকেটা – ট্রে কোথায় - ট্রে কোথায়?
এনাউন্সমেন্ট কর – বাম গালে কাটা দাগ
চেক শার্ট ফরসা, বালি থেকে এসেছেন
বাড়ির লোকেরা সব অফিসে দ্যাখা করুন
ওটা কেরে? গালে টোল – তাকিয়েছে তাকিয়েছে
কে গো তুমি নন্দিনী? মাধুরী না দিব্যা? কোন্ দেশে ঘর?
কবুতর উড়ে যা, চিরকুট গুঁজে দিবি… ওই দিদি
বুঝেছিস! এটা নে লজেন খাস, খুব জোর
হাওয়া দেয় হাওয়া দেয় হাওয়া নয় এইবুঝি ঝড়!
তারাপীঠ - তারাপীঠ এক রাত দুই দিন
লাক্সারি বাস কই! এত লেট হর্ন মার
আশিকি আশিকি ওই নতুন নায়িকা গুরু
আমাদের শানু দা, কি যে গলা! পানু আছে?
দু-টাকা ভাড়ার বই, আহা উহু কী গরম!
ভি.সি.আর. টাকা ধার সুতনুর বাড়ি ফাঁকা
সারাদিন হুল্লোড়, চরণামৃত খাও, ঢাল্ আরও
চড়ে যাবে! জল মেশা, মরে যাবি! পানপরাগের পাতা
এখন যাস না বাড়ি, গেলেই মায়ের খোঁচা –
বাপটার হাঁড়িমুখ – পড়ালে চারটে বাড়ি
একটু সুসার হয়! তা না শুধু হুল্লোড়!
হতভাগা সংসার – লাথি মারি মুখে তোর!
ভেঙে দেব সব শালা – ন্যাকামি আমার সাথে!
কৈশোর জ্বলে গেল – কমরেড কমরেড মালটি সরেশ!
মেয়েকে দিয়েছ গুঁজে প্রাইমারি ইস্কুলে
উলবোনা দিদিমণি, আমাদের ভুলে গেলে
মিছিলে হাঁটালে শুধু, চা-আনা চাকর সব
সাদা ধুতি - পাঞ্জাবি একদিন খুলে নেব
বাতাসে উড়িয়ে দেব পতপত পতপত
আমাদের রক্তের দাম-টাম না দিয়েই
বুকেতে পতাকা আর গীতা নিয়ে চলে গেলে বেশ!
এখন রুপোলী চুল ঝিলিক ঝিলিক মারে
হাঁটুতেও ব্যথা আর কোমর মনের জোরে টান
আরও পচে গেল সব এ সমাজ দেশ-কাল
বুড়ো নেতা চেটে দেয় বান্ধবীদের গাল
টাকা পেলে চাকরিও, বেচে দিল দিন বদলের সব গান
ভুলে গেছি মিছিলের অং-বং শত ঢং
হারমোনিয়াম রিড, নেলপালিশের রং
চোর হ্যায় চোর হ্যায় সব শালা অলি গলি চোর!
আলো সব মরে গেল, ঢ্যামনায় ভরে গেল
ভাষণে ভাষণে সব কান ফান জ্বলে গেল
কবে যে উপড়ে নিল লাল টুকটুকে সেই ভোর!
দীর্ঘ, তবু পাঠে ক্লান্তি নেই পাঠকের। সফল এই দৈর্ঘ্য।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। আনন্দ পেলাম।
মুছুনখুব ভাল লাগল। এই রকম লেখাই দরকার।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। আনন্দ। নাম জানলে আরও খুশি হতাম।
মুছুন— রাজদীপ
ফেলে আসা সময়ের গোপন ইস্তেহার। উপভোগ্য দীর্ঘ।
উত্তরমুছুনথ্যাঙ্কিউ নিলয়দা। আপনার ভালো লাগা আনন্দের।
মুছুনছবির মত জীবন ও সময়ের চালচিত্র। পরপর চোখের সামনে, মনের আয়নায় ভেসে উঠলো।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ। আনন্দ। কে লিখছেন নাম জানলে আরও ভালো লাগতো।
মুছুন— রাজদীপ
সত্যি এ আমাদের সবার কথা।ভালোবাসা নিও।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। আনন্দ। কে লিখছেন জানলে ভালো লাগতো।
মুছুন— রাজদীপ
কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই সব দিন। তবু জীবনের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে আমরা চলতে থাকি প্রতিদিন।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ
মুছুনশুভেচ্ছা জানাই।
'ঢালুপথে সররায় নামি ছেঁড়াফাটা রংচটা... ' আহা!এমন জীবনের স্বাদ পেতে কার না ভালো লাগে!
উত্তরমুছুনভারি সুন্দর কবিতা।
অনেক ধন্যবাদ জানবেন। আনন্দ পেলাম।
মুছুনরাজদীপ বাবু আপনার কবিতা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে।আমি আপনার কবিতায় নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি। 🙏
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যে আনন্দ পেলাম। শুভেচ্ছা।
মুছুনকবিতার মধ্যে একাল ও সেকালের গোটা রূপটা তুলে ধরেছ রাজদীপ। এ যেন আমাদেরই কথা।ভালো থেকো ভাই।
উত্তরমুছুনথ্যাঙ্কিউ। আপনিও ভালো থাকবেন।
মুছুনসুন্দর লেখা।প্রথম থেকে শেষ পুরোটাই পড়ে খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ। আনন্দ পেলাম।
মুছুন