শতাব্দী চক্রবর্তী


 ১

উচ্ছন্নে যাক ~


রাজপথ ঘেঁষে অলি গলি রাত, 

আষাঢ়ের জল থৈ থৈ, সিঁথিচেরা আকাশ

জ্বরের ঘোরে হরিণীর মতো আমি

খানিক ঝড় এসে নিভিয়ে দিল বাতি

শুধু স্তম্ভ দাঁড়িয়ে থাকে নিশ্চুপ, অসাড়

হঠাৎ যে পর্দা চোখের ওপর পড়লো, 

অন্ধকারেও ঠিক বুঝতে পারি সে তোমার মুখ। 


মায়াবী আঁধারে সরে সরে যায় গাছ, পাহাড়, মেঘ

তোমার হাত ফুল ফুটিয়ে দেয় কপালে। 

তোমাকে ছুঁয়ে প্রাচীন ভাস্কর্য হতে চায় নরম লতা

কোন্ পদাঙ্ক অনুসরণে তুমি কমলা ক্ষেতে যাও–

পাতার গভীরে নির্জন সুগন্ধি আবাস ফেলে? 

হাতে ছুঁলে গলে যায় মাংস, মুঠোয় ডৌল

ছুটে চলে যায় আঙুল আরও নানান আয়োজনে

নষ্ট তখন সুন্দরতম অভিধা। 


আলো এসো না এখন, চুপ করে যাও খানিক

দেবদারু পাতায় লেখা আছে ঐশ্বরিক লিপি

বাড়তে দাও, স্বর্গ যাত্রা করুক, বাসনা নিভিও না

লক্ষ্মী তোমার বাসমতী সুবাসে

চিরকাল সিম্ফনি তুলবে কয়েকশত আলোকবর্ষ ছুঁয়ে

দূরে কোথাও বাজ পড়লো বুঝি, দেখো না ওদিকে

আমাদের এখন আবাদের প্রয়োজন। 


এসো না আলো, এসো না কোনোমতেই

আলো আসলেই জ্বর ভালো হয়ে যায় 

তুমি তখন উধাও হয়ে যাবে

ঈশ্বরী কোনো দুর্দশা সইবে না,

অজুহাত তুমি শিকেয় তুলে রাখো। 


অযথা ঘ্যান ঘ্যান কোরো না

ঘ্রাণ নাও নাভি ছুঁয়ে ; সাঁতার ভুলে যাও। 

কথা ফুরোক, রূপকথা জুড়ে জুড়ে

সর্ষেক্ষেত বুনে নেব, হলুদ ফুল আলোয় আলো। 

তৈলচিত্রে অবসর ধরে রাখো, ভালো আঁকিয়ে তুমি

ইশারা ঘাতক রিপুগন্ধে মোচড়ের দাগে দগ্ধ করো

জোনাকির আলোয় ভেসে যাক যাবতীয় গান্ধর্ব

উচ্ছন্নে যাক আর বাকি যা কিছু। 




শিকারী ~


যখনই পাতা চিনতে শিখেছি

একটা একটা করে গাছ উবে যেতে থাকলো

রাজপথের শ্মশানে দাহ হয়ে গেছে সমস্ত গুঁড়ি

যার শাখা প্রশাখায় ঝুলে আছে বেবাক প্রশ্নচিহ্ন

সবুজ রঙ কেবল জাতীয় পতাকায় আঁকা আছে। 


যখনই রাতে আকাশ চিনতে চেয়েছি,

কালবৈশাখী নক্ষত্র মুছে দিয়েছে মহাকাশ থেকে

ধোঁয়াশা লাগে চোখে

পলিউশনের ঠেলায় পরিবেশ হৃতসর্বস্ব কাঠগড়ায়

বাচ্চাটি ইংরেজি ভাষায় পড়ে ‘দ্যা স্কাই ইজ ব্লু’ লেখা আছে বইয়ে। 


যখনই পুকুরের জলে নিজেকে চিনতে চেয়েছি

দেখতে গেছি মাছরাঙা ও মাছেদের বিন্যাস

কোনো মাছ নেই তাতে, কচুরিপানা শ্যওলার ঘর। 

ধীরে ধীরে পুকুর হল ভরাট জমিন

তারপর আলোতেই চুরি হয়ে গেল আস্ত পুকুরটাই 

আবাসনের মাথা উঁচু হল নির্বিঘ্নেই। 


যখনই ঝরনা দেখতে গেছি

পাহাড় থেকে নামতে থাকা নুড়ির গা ধুয়ে দিচ্ছে দুধের ঝরনা

তারপরেই জল পড়ার গতি কমে গড়িয়ে পড়লো নুড়ি পাথর 

হোটেল আবাসস্থলের পাশ কাটিয়ে মনোরম দৃশ্যে বয়ে গেল ক্ষীণ তনু হয়ে

গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ঝরনা নিষিদ্ধ হল কঠোরভাবে। 


এযাবৎ যা কিছু ঘটেছে আমার মাথার ওপর

হাহাকার করে ঘুরে মরে চিল

জগতে শিকারী পাখি নামে কেবল দোষ পায় সে-ই! 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

মঞ্জরী গোস্বামী